parbattanews

নষ্ট হচ্ছে সেন্টমার্টিনের পরিবেশ, দেখার কেউ নেই

সেন্টমার্টিন দ্বীপকে ঘিরে রয়েছে অপার পর্যটন সম্ভাবনা। প্রতি বছর লাখ লাখ মানুষ অবসর যাপনের জন্য ভিড় করে দেশের সর্বশেষ প্রান্তে অবস্থিত এই নীল জলের দ্বীপে। কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলায় অবস্থিত এই দ্বীপ বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে ওঠা একমাত্র প্রবালদ্বীপ।

কিন্তু পর্যটকদের অবাধ বিচরণ, অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণ, যত্রতত্র প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলার কারনে দিন দিন সৌন্দর্য হারাতে বসেছে সেন্টমার্টিন। এত সুন্দর ভৌগোলিক পরিবেশে অবস্থিত এই দ্বীপের বর্তমানে বেহাল দশা বলে জানান দ্বীপে বেড়াতে আসা পর্যটকেরা।

মোহাম্মদ হোসেন নামের এক পর্যটক আক্ষেপ করে বলেন, আমার বাড়ী কক্সবাজারে। এখানে এসে যেটি দেখলাম সেন্টমার্টিন দিন দিন সৌন্দর্য হারাতে বসেছে। দ্বীপের পরিবেশের বিষয়ে কারো কোন খবর নেই। যদিও বা পয়েন্টে পয়েন্টে পরিবেশের দোহাই দিয়ে প্রশাসন দায়িত্ব শেষ করেছে।

স্থানীয় নুরুল আলম আরমার (৫৫) নামের এক ব্যক্তি বলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপের পরিবেশ ধ্বংসের পেছনে জড়িত প্রভাবশালীরা। যারা এখানে স্থানীয়রা রয়েছে প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে তারা ভয়ে মুখ খুলতে সাহস করেনা। যেভাবে অপকল্পিত স্থাপনা গড়ে উঠতেছে তাতে পরিবেশের বারোটার পাশাপাশি সেন্টমার্টিন সমুদ্রপৃষ্ঠে তলিয়ে যেতে বেশিদিন সময় লাগবেনা।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)’র কক্সবাজারের সাংগঠনিক সম্পাদক সাংবাদিক এইচ এম নজরুল বলেন, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপে সেন্টমার্টিনের পরিবেশের ওপর পড়ছে বিরূপ প্রভাব। প্রতিনিয়ত কমে যাচ্ছে প্রবালের পরিমাণ। কমছে গাছপালা আচ্ছাদিত অঞ্চলের পরিমাণ, নষ্ট করা হচ্ছে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা কেয়া বন। প্রতি বছর লক্ষাধিক পর্যটক ভিড় করছে এই দ্বীপে। এতে একদিকে পর্যটন সম্ভাবনা বিকশিত হলেও, অন্যদিকে পরিবেশের বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।

সেন্টমার্টিনের পরিবেশ সহ নানাবিধ বিষয়ে উখিয়া-টেকনাফের সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরী বলেন, প্রতিনিয়ত অসংখ্য পর্যটক আসা-যাওয়া করলেও একমাত্র জেটিটি দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকিপুর্ণ অবস্থায় রয়েছে। তাছাড়া দ্বীপে যারা বসবাস করছে তারা পরিবেশ সম্পর্কে তেমন বেশি সচেতন নয়, তাদেরকে প্রশিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে যাতে পরিবেশ বিপর্যয় না ঘটে। আর যে সমস্ত পর্যটক আসা-যাওয়া করে তাদেরকে দিক-নির্দেশনা দিতে হবে পরিবেশ এবং জীব-বৈচিত্র সম্পর্কে। এখন কোনটার বালাই নেই। যার কারনে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে৷

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে প্রভাবশালীরা প্রশাসনের যোগসাজশে সেন্টমার্টিনের বহুতল হোটেল-মোটেল গড়ে তুলছে, যে কারনে পরিবেশের আরও বিপর্যয় সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি সেন্টমার্টিন দ্বীপকে বাঁচাতে হলে বহুমুখী কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার বলে জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার পারভেজ চৌধুরী বলেন, সেন্টমার্টিনের পরিবেশ রক্ষায় সকলকে সচেতন হতে হবে। প্রশাসন চাইলেও তা কার্যকর করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে সেন্টমার্টিন রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সুনির্দিষ্ট কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে সেসব বাস্তবায়ন করা হবে।

রিসোর্ট নির্মাণ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনও বলেন, সেন্টমার্টিনে অভিযান করতে আসলে বসা ও বিশ্রাম নেওয়ার কোনো স্থান না থাকায় কাঠ ও বাঁশ দিয়ে অস্থায়ী বিশ্রামাগার (দুটি ঘর) নির্মাণ করা হয়েছে। আসলে ভালো কোন কাজ করতে গেলে এ ধরনের সমালোচনার সৃষ্টি হয় বলে তিনি জানান।

Exit mobile version