নাইক্ষ্যংছড়িতে অবৈধভাবে কাটা হচ্ছে কোটি টাকার সবুজ বাঁশ

fec-image

বাঁশের প্রজনন বৃদ্ধির জন্যে জুন-আগস্ট ৩ মাস বাঁশ কাটা ও পরিবহণে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও নাইক্ষ্যংছড়িতে বাঁশ দস্যুরা তা মোটেও মানছে না এ নির্দেশনা ।

সূত্র জানায়, উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চলের বাঁশ বাগান গুলোতে শতশত শ্রমিক দিয়ে এসব বাঁশ দস্যু লাখ লাখ টাকার বিপরীতে বনবিভাগ ও অপরাপর আইনি কর্তাদের ম্যানেজ করে সব করছেন। তারা (বনকর্তারা) বাঁশের ভুয়া কাগজ সৃজন করে দিয়ে নগদ টাকা গুনছেন সংশ্লিষ্টরা।

পক্ষান্তরে বাঁশ কাঠুরিয়ারা এ কাগজ-পত্র বগলে নিয়ে সবার চোখে ধুলা দিয়ে পাচার করছে হাজার হাজার মা বাঁশ। ফলে সবুজে ঘেরা বাঁশবনে কালো হাতের থাবায় বিনাশ হচ্ছে চারা বাঁশ সহ মা বাঁশও। দেশের চরম ক্ষতির পাশাপাশি মানা হচ্ছে না সরকারের নির্দেশনাও।

সূত্র আরো জানান, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার রেঞ্জ অফিস রয়েছে দু’টি। একটি নাইক্ষ্যংছড়ি অপরটি বাইশারীতে অবস্থিত সাঙ্গু রেঞ্জ। এ দু’টি রেঞ্জের আওতাধীন ১৭ মৌজাতে বাঁশ বন রয়েছে দেশের অন্যান্য এলাকার চাইতে বেশি। এ কারণে তথ্য রয়েছে বান্দরবান ও ককবাজার জেলার সবচেয়ে বাঁশ উৎপাদন হয় এ নাইক্ষ্যংছড়িতেই । আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ২০ থেকে ২৫ জন বনজসম্পদ পাচারের গড় ফাদার কয়েক শত বাঁশ কাঠুরিয়াকে অগ্রিম টাকা দিয়ে বনে ঢুকিয়ে এ সব করছে।

আর পাচার করছে ঈদগড় খাল, গর্জনিয়া খাল, বাঁকখালী নদী দিয়ে। এ দু’পয়েন্টের হাট বসানো হয় ঈদগড় খালের বৌ ঘাটা, ঈদগড় বাজার ও বাঁকখালীর ছাগল খাইয় বিজিবি ক্যাম্পের পাশে বাঁকখালী নদীতে।

আর অপর ৩টি গ্রুপ বাইশারী ইউনিয়ন ঘেষে নিচে আসা খুটাখালী ছড়া, ফারিখাল ও রেজুর ছড়া দিয়েও বাঁশ পাচার করছে । তারা নদী পথ ছাড়া সড়ক পথেও পাচার করছে লাখো মা বাঁশ। এ হিসেবে জুন, জুলাই ও আগস্ট মাসে বন্ধের এ ৩ মাসে এই পযর্ন্ত সবখাল, নদী ও সড়ক পথ দিয়ে অন্তত ২০ লাখ মা বাঁশ নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে পাচার হয়ে গেছে। বন্ধের ৯০ দিনে বাকি আছে মাত্র ১৬ দিন। এ সময়ে আরো ৮ লাখ মা বাঁশ তারা পাচার করার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। এ ২৮ লাখ মা বাঁশের আনুমানিক মূল্য অন্তত ২ কোটি টাকা।

প্রত্যক্ষদর্শী মো. ইউনুছ, হাবিবুর রহমান,আবদুর রহিম, আবু ইউছুপ ও আবদুর রহমান বলেন, বন্ধর সময় বাকঁখালীতে বাঁশের হাট বসে ১৫ দিন অন্তর। ঈদগড় ও অন্যান্য হাটে বসে সপ্তাহে ১ দিন। ঈদগড়ের হাট শুক্রবার ও সোমবারে।

তাদের অভিযোগ, বাঁশ পাচারের গড়ফাদাররা বাঁকখালী নদী, রেজু আমতলী খাল, ঈদগড় খাল, খুটাখালী ছড়া ও গর্জনিয়া খাল দিয়ে বাঁশ কেটে অন্য উপজেলায় পাচার করছে ভিন্ন ভিন্ন পথ দিয়ে।

এ কারণে লাভের আশায় যেমন,বাকখালী রেঞ্জ,ঈদগড় রেঞ্জ,ভোমরিয়া ঘোনা রেঞ্জ,রাজার কূল রেঞ্জ ও উখিয়া রেঞ্জ। এসব রেঞ্জ কর্মকর্তারা কক্সবাজারের হলেও তাদের ঘাট দিয়েই এ সব মা বাঁশ দেশের নানা স্থানে পাচার হচ্ছে। আর এ পাচার কাজে ভাগ বসিয়ে তারা বাঁশ পাচারে সহায়তা করে।

তবে এসব কর্মকর্তাদের দাবি, তারা বাঁশ কাটার বন্ধের সময় বৈধ কাগজপত্র নিয়ে এ সব বাঁশ কাটা হয় এব্ং পরিবহণকালে এড়িয়ে যান।

অভিযুক্ত বাঁশ ব্যবসায়ী এ আল আমিন বলেন, ‘তারা বন্ধের আগের কয়েক লাখ টাকা খরচ করে বৈধ কাগজপত্র নিয়ে নিয়েছেন স্থানীয় বনবিভাগ থেকে। সুতারাং তারা বৈধ। তাদেরকে কেউ আটকাতে পারবে না।’

বনবিভগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘কোন কাগজ নেই এ ৩ মাসে। আগেও নেই, চলাকালেও নেই। জুন, জুলাই ও আগস্টের পরে আছে। কেউ কাটলে বা পরিবহন করলে সে অপরাধী।’

স্থানীয়রা ও বলেন, ‘এসবে ভুয়া কাগজপত্র দেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা আর বাঁশ ব্যবসায়ীরা জানান, তারা একাধিকবার চুক্তিমত লাখ টাকার দাখিলা কেটে রেখেছেন। সুতারাং এ কাগজ বৈধ আর সুতরাং বাঁশও বৈধ।’

এ বিষয়ে জানতে নাইক্ষ্যংছড়ি রেঞ্জ কর্মকতা মন্জুর আলম জানান, তিনি স্টেশনে নেই। রেঞ্জে লোকবল সংকটও আছে। তাই সব সময় এসব বাঁশ জব্দ করতে পরেন না তিনি।

বান্দরবানের লামা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বেলাল উদ্দিন বলেন, ‘নিষিদ্ধ মৌসুমে বাঁশ কাটা ও পরিবহণে বারণ আছে। তবুও কেন বাঁশ পাচার হচ্ছে তা দেখে তিনি ব্যবস্থা নেবেন।’

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন