parbattanews

নাইক্ষ্যংছড়িতে মানবিক সংকটে ৭৮ রোহিঙ্গা পরিবার

নিজস্ব প্রতিবেদক, বান্দরবান:

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দুরে দুর্গম দোছড়ি ইউনিয়নের বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে শূন্য রেখার কাছে ‘বাহির মাঠ’ এলাকায় একটি ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে ৭৮টি রোহিঙ্গা পরিবার। চাল, ডাল, তেল ছাড়া অন্য কোনো ত্রাণ তাদের ভাগ্যে এখন পর্যন্ত জোটেনি।

দুর্গম পাহাড়ের ঢালুতে ৪০-৫০টি ঝুপড়ি ঘর। এসব ঘরে মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে ৭৮ রোহিঙ্গা পরিবারের। শিবিরে থাকা বেশির ভাগ শিশুর গায়ে জামা নেই ও ভুগছে নানাবিধ রোগে। খাদ্য সংকট ও স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে বলে তারা জানান।

বাহির মাঠ ত্রাণ শিবিরের একটি ঝুপড়িতে স্ত্রী ও ছয় ছেলেমেয়েকে নিয়ে থাকেন শামসুল আলম (৪৫)। তার বাড়ি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের কুমিরখালী গ্রামে। সেখানকার একটি মসজিদের ইমাম ছিলেন তিনি। গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে আসা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে তিনি পরিবার নিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে আশ্রয় নেন এখানে।

শামসুল আলম বলেন, এখানে খাবার পানির তীব্র সংকট। দোছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ গত সেপ্টেম্বর মাসে একটি নলকূপ স্থাপন করে দিলেও সেটি নষ্ট হয়ে গেছে। পাহাড়ি একটি ছড়ায় বাঁধ দিয়ে পানির চাহিদা পূরণ করছেন তারা। নোংরা পানি খেয়ে ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিবিরের বাসিন্দারা।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা শুরু হওয়ার পরদিন ৭৮ পরিবারের ৩৬২ রোহিঙ্গা ৪৯ নম্বর সীমান্ত পিলারের কাছাকাছি বাহির মাঠ এলাকার আশ্রয় নেয়। কয়েক দিন আগে এই শিবিরে জন্ম নেয় দুই শিশু। এই ত্রাণ শিবিরের বাসিন্দা ৩৬৪জন। এর মধ্যে শিশু ১৭১, নারী ১০০ ও পুরুষ ৯৩ জন।দুর্গম এই শিবিরের বাইরে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে আরও দুটি রোহিঙ্গা ত্রাণ শিবির রয়েছে। এর মধ্যে উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের বড় ছনখোলায় রয়েছে প্রায় ৭ হাজার রোহিঙ্গা এবং সাপমারাঝিরি আশ্রয় শিবিরে থাকছে আরও তিন হাজার রোহিঙ্গা। এই দুটি শিবিরে থাকা রোহিঙ্গারাও খুব একটা ত্রাণ পাচ্ছে না।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম সরওয়ার কামাল বলেন, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ও উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বাহির মাঠ ত্রাণ শিবিরের রোহিঙ্গাদের ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে। নাইক্ষ্যংছড়ির তিনটি শিবিরে থাকা সব রোহিঙ্গাকে উখিয়ার ত্রাণ শিবিরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রায় তিন হাজার রোহিঙ্গাকে উখিয়ায় স্থানান্তর করা হয়েছে।

নাইক্ষ্যংছড়ির দোছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ জানান, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিদেশি নাগরিক ও দাতা সংস্থার প্রবেশাধিকার সীমিত থাকায় বাহির মাঠে থাকা রোহিঙ্গাদের ত্রাণ দিতে অনেকে যেতে পারছেনা। সেখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থাও খুব খারাপ। ফলে ওই শিবিরের ৩৬৪জন রোহিঙ্গা ত্রাণ ও মানবিক সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

রোহিঙ্গা নারী মাজেদা বেগম (৩৬) বলেন, আড়াই মাস ধরে এই ঝুপড়িতে আছেন তারা। ছেলে মেয়েরা ঠিকমতো খেতে পারছে না। মিয়ানমারের কিছু মুদ্রা (কিয়াত) হাতে থাকলেও তা দিয়ে কিছুই কেনা যাচ্ছে না।

আরেক নারী তাহেরা বেগম (৫০) বলেন, এ পর্যন্ত তিন দফা চাল, ডাল, তেল পেয়েছেন তারা। কিন্তু মাছ, মাংস, তরকারি কিছুই নেই। খেতে না পেরে ছেলেমেয়েরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। নেই চিকিৎসার ওষুধ।

Exit mobile version