parbattanews

নাইক্ষ্যংছড়ির ৩ ইউনিয়নে রাত পোহালেই নির্বাচন: নিরাপত্তা জোরদার

পার্বত্য নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার নাইক্ষ্যংছড়ি সদর, সোনাইছড়ি ও ঘুমধুম-এ ৩ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন সোমবার (১৪ অক্টোবর)। এ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। ফলে আওয়ামী লীগ সমর্থকরাই নিজেদের মধ্যে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন নির্বাচনে। গত ১২ সেপ্টেম্বর রির্টানিং অফিসারের নিকট মনোনয়নপত্র দাখিলের পর থেকে নানা কার্যক্রম শেষে নির্বাচনী প্রচারণা শেষ হয়েছে গত শনিবার রাত ১২ টায়। রোববার সকাল থেকে কেন্দ্রে কেন্দ্রে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ-আনসার, বিজিবি ও র‌্যাব এবং দায়িত্বে থাকা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সকলে স্ব স্ব কেন্দ্রে রওয়ানা দিয়েছেন।

যেহেতু রাত পোহালেই নির্বাচন। নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা হয়েছে প্রতিটি কেন্দ্র। সোমবার (১৪ অক্টোবর) সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত ভোট চলবে। শেষ মূহুর্তে ভোটাররা কী ভাবছেন এ প্রতিবেদক সরেজমিন পাওয়া কিছু চিত্র তুলে ধরেছেন এ প্রতিবেদনে।

সদর ইউনিয়ন পরিষদ: এখানে চেয়ারম্যান প্রার্থী ২ জন। এ ইউনিয়নে ৯ ভোট কেন্দ্রের ভোট কক্ষের সংখ্যা ৪০ টি। তন্মেধ্যে ৩৬ টি স্থায়ী ৪ টি অস্থায়ী। এখানে ভোটারের সংখ্যা মোট- ১১১২৩। পুরুষ ৫৬৫৬ আর মহিলা ৫৪৬৭টি। কালকের নির্বাচনে কে হবেন সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বা অভিভাবক তার জটিল একটি হিসাব তুলে ধরেন স্থানীয় বাদশা মিয়া ও ক্যারা অং মার্মা নামের দু’জন অভিজ্ঞ ভোটার। তাদের মতে, ১৪ তারিখের নির্বাচনে ১নং নাইক্ষ্যংছড়ি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ৯ নং ফুলতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এগিয়ে আছেন নৌকা প্রতীকের তসলিম ইকবাল চৌধূরী।

আর অবশিষ্ট ২ থেকে ৮ নম্বর ভোট কেন্দ্রে নৌকা প্রতীক আর স্বতন্ত্র প্রার্থী আনারস মার্কার নুরুল আবছারের মধ্যে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। শেষের কেন্দ্র গুলোতে নির্বাচনের শুরু থেকে এতো দিন আনারস মার্কা এগিয়ে থাকলেও গত ক’দিন থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অধ্যাপক শফিউল্লাহ দলবলসহ নির্বাচনী মাঠে নামার পর এ অবস্থার পরিবর্তন হতে শুরু করে। নৌকার দিকে মানুষ ধাবিত হচ্ছে ধীরে ধীরে।

এ পর্যায়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি অধ্যাপক শফিউল্লাহ বলেন, যুবলীগ নেতা আনারস প্রতিকের নুরুল আবছার তার আপন খালাতো ভাই হলেও নৌকা প্রতীক প্রধানমন্ত্রীর। জেলার মন্ত্রীর বীর বাহাদুরের। সুতরাং তিনি তার সর্বশক্তি নৌকাকে বিজয় করতে প্রয়োগ করবেন। তার ধারণা, নৌকার জয় হবেই হবে। অপর দিকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি ও সাবেক সভাপতি আবদু রহমান মেম্বার এ প্রতিবেদককে বলেন, আনারস প্রতীকের নুরুল আবছার আমার ছেলে। বিরোধীদল ছাড়া এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দু’জন প্রার্থী হয়েছে। আমার ছেলে দীর্ঘদিন ধরে মাঠে থেকে জনসেবা করায়, সে ৯টি কেন্দ্রে-ই জয় পাবে বলে তার বিশ্বাস।

সোনাইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ: উপজাতি অধ্যূষিত এ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থী ২ জন। ৯ কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা মোট ৩৪৯৮ টি। ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান বাহান মার্মা-তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতিও। তবে তিনি প্রার্থী হয়েছেন আনারস প্রতীক নিয়ে। আর নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী মাঠে নামা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এ্যানিং মার্মা প্রতিটি কেন্দ্রে এগিয়ে আছেন বলে শেষ মুহূর্তের জরিপে লোকজন মন্তব্য করেন। তবে ভোটাররা দক্ষ-অভিজ্ঞ নেতা মনে করে বর্তমান চেয়ারম্যানকে আনারস মার্কায় ভোট দিলে হয়তো তিনিই জয় পেতেও পারে এ নির্বাচনে। এ পর্যায়ে তাকে আরো কূশলী হতে হবে। কিন্তু ভোটে জেতার বিষয়ে এ দু’প্রার্থীই আশাবাদী।

ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ : ঘুমধুমে চেয়ারম্যান প্রার্থী ৩ জন। উপজেলা সদর থেকে বিচ্ছিন্ন ও দূরের এ ইউনিয়নটি ককসবাজারের উখিয়া উপজেলা সদর এবং উখিয়ার কুতুপালং সংলগ্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্প লাগোয়া পূর্বপাশে। আর পূর্বদিকে মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকা। এ ছাড়া এ সীমান্তের শূণ্য রেখায় বসবাসরত বেশ ক হাজার রোহিঙ্গা তুমব্রু এলাকার নানা কাজে ভাড়া যায়। ভোট কেন্দ্রে যদি এমনই হয় ! এসব কারণে এ ইউনিয়নটিতে ১৪ তারিখ যে কোন ধরনের দূর্ঘটনা ঘটার আশংকা রয়েছে।

ইউনিয়নটিতে ভোটার সংখ্যা ৯৩০১টি। সীমান্তের এ ইউনিয়নটির ৯ টি কেন্দ্রে ভোট কক্ষ ৩৪ টি। স্থানীয় ভোটার শ্যামা তংঙ্গা, আজু চাকমা ও শফি আলম জানান, বর্তমান চেয়ারম্যান জাহাঙ্গির আজিজ নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। তিনি ঐতিহ্যবাহী পরিবারের সন্তান আর আওয়ামী পরিবারের সদস্য। ধনে-মানে তার জুড়ি তিনিই। তার অবস্থা প্রথমে খারাপ থাকলেও এখন দিনদিন ভালো হচ্ছে।

তাদের বক্তব্য তিনি অনেক ব্যবধানে জিতবেন। তারা আরো বলেন, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী রশিদ আহমদ লড়ছেন ঘোড়া প্রতীক নিয়ে। তিনি সদ্য সমাপ্ত উপজেলা নির্বাচনে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান অধ্যাপক শফিউল্লাহর ঘুমধুমের অঘোষিত নির্বাচনী এজেন্ট ছিলেন। তার কারণে তিনি জিতেছেন। এখনও তাদের মধ্যে সে সম্পর্ক রয়েছে বলে এলাকাবাসী মনে করেন।

এছাড়া বিএনপি-জামায়াত বিহীন নির্বাচনে নৌকার বিরোধী ভোটও তার ভোট বাক্সে পড়তে পারে তাদের ধারণা। আর রশিদ আহমদ মেম্বার ২৭ বছর ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার ছিলেন। তার স্বভাব শান্ত প্রকৃতির। নেতা নেতা ভাব। তার হুমকি ধমকি নেই। সবার প্রিয় তিনি। রশিদ আহমদ জানান, স্বচ্ছ ভোট হলে তিনি জয় পেয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যানকে জয়ের মালা পড়াতে পারবেন। তার মতে, ১.২,৩, এবং ৭,৮ নম্বর কেন্দ্র তার কাছে ঝুকিপূর্ণ। এখানে রোহিঙ্গারা ও উখিয়ার ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা ভোট ছিড়তে পারে। অপর প্রার্থী মৌ ছালেহ আহমদ আনারস প্রতীক নিয়ে লড়লেও তিনি আলোচনায় নেই। জাহাঙ্গির আজিজ এসব অস্বীকার করে বলেন, তিনি জয় পাবেন এ জন্যে এতো কথা। উপজেলা পর্যায়ের কয়েকজন নেতা মনে করেন, এবারে ৩ ইউনিয়নের নির্বাচনই- হবে হাড্ডা-হাড্ডি।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাচন অফিসার ও রির্টানিং অফিসার আবু জাফর ছালেহ এ প্রতিবেদকে জানান, আগামী কালের নির্বাচন হবে দেশের জন্যে মডেল। পুরো নির্বাচনী এলাকা নিরাপত্তার চাদরে। প্রতিটি কেন্দ্রে পুলিশ ও আনসার-ভিডিপি থাকবে ১৯ জন করে। প্রতিটি কেন্দ্রেই ভোট গণনা হবে। প্রতি ইউনিয়নে বিজিবি থাকবে ২ প্লাটুন। র‌্যাব থাকবে সারাক্ষণ-সব কেন্দ্রের আশপাশে। ভোটার, কেন্দ্র ও সব বাহিনীর সার্বক্ষণিক পাশে থাকবে প্রতি ইউনিয়নে ৪ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। তারা খবর পাওয়া মাত্র ছুটে যাবেন ঘটনাস্থলে।  আর ঘুমধুমের রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও উখিয়া উপজেলার লোকজন যাতে প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য শুধু ঘুমধুম ইউনিয়নের চার পাশে ৬টি তল্লাসী ক্যাম্প থাকবে। ওনারা যে কোন বহিরাগত বা বেআইনী লোকদের সাথে সাথে আটক করবেন। সুতরাং নির্বাচন হবে স্বচ্ছ ও শান্তিপূর্ণ। কেউ এর বাধা হলে দায়ভার তাকেই নিতে হবে। তবে ছাড় নেই।

Exit mobile version