নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান পদে পাল্টে গেল সম্ভাব্য প্রার্থীদের হিসেব নিকেশ
উপজেলা প্রতিনিধি,নাইক্ষ্যংছড়ি:
বান্দরবান পার্বত্য জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী তালিকার হিসেব নিকেশ পাল্টে গেছে। চলছে নতুন করে দৌড়-ঝাপ। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতেই হবে বিএনপি সভানেত্রী খালেদা জিয়ার এমন ঘোষনায় ১৯দল এর নেতা-কর্মীরা রাজনৈতিক মাঠে ঘুরে দাঁড়িয়েছে ।
জানা যায়, উপজেলা নির্বাচনের তফসীল ঘোষনার পর জেলা সদর থেকে সীমান্তের সর্বশেষ দক্ষিন সীমান্তে অবস্থিত মায়ানমার সীমান্তবর্তী উপজেলা নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় চলছে নির্বাচনী হাওয়া । অপরদিকে বিএনপি-জামাত একট্টা হয়ে চেয়ারম্যান পদে বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তোফাইল আহমদকে তাদের একক প্রার্থী হিসেবে পুনরায় মনোনয়ন দিয়েছেন বলে জামায়াত-বিএনপির জেলা নেতৃবৃন্দ সূত্রে জানা যায়।
আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার আনাচে কানাচে ও ভোটারের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছে নির্বাচনের চেয়ারম্যান,মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদ প্রার্থীগণ । উপজেলা পর্যায়ে দলীয় প্রার্থীকে বিজয় করতে ১৪ দল নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলীগ তোড়জোড় চালাচ্ছে দল ও দলের বাইরে সর্বত্র । এর অংশ হিসেবে প্রতিটি উপজেলায় জেলা নির্বাচন মনিটরিং কমিটির মাধ্যমে দলীয় একক প্রার্থী ঘোষণা করেছে আওয়ামীলীগ ।
রাজনৈতিক মাঠ দখলে রাখতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৯ দল ও মাঠে ময়দানে এই নির্বাচন নিয়ে সরব । এই নিয়ে দুই এক দিন পর পর উপজেলা ,ইউনিয়ন ,ওয়ার্ড় পর্যায়ে দলীয় লোকজন নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করে আসছেন । সর্বশের্ষ গত ৩ ফেব্রুয়ারী রবিবার রাত ৮.০০ ঘটিকায় উপজেলা আওয়ামীলীগের একক প্রার্থী ঘোষনা করা হয়েছে। বান্দরবান জেলা আওয়ামীলীগের বৈঠক থেকে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নামের তালিকা যাচাই করে তাদের নাম ঘোষনা করা হয়। এতে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করায় উপজেলা আওয়ামীলীগের শিক্ষা ও মানব সম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক আলহাজ্ব শফিউল্লাহ কে চেয়ারম্যান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মহিলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ওজিফা খাতুন রুবি ও পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে উপজেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক চোচু মং মার্মার নাম প্রাথমিকভাবে মনোনীত করা হয়।
ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে নাইক্ষ্যংছড়ি প্রেস ক্লাব সভাপতি সাংবাদিক নুরুল আলম সাঈদ তোড়জোড় শুরু করেছেন ।
নাইক্ষ্যংছড়ি প্রেস ক্লাব সভাপতি নুরুল আলম সাঈদ জানিয়েছেন, স্বচ্ছ ইমেজের রাজনীতিক হিসেবে সাধারন নেতাকর্মী ও এলাকায় তার গুহণযোগ্যতা রয়েছে তাই তিনি প্রার্থী হচ্ছেন। এছাড়া প্রশাসন ও সাধারন ভোটার এর সাথে আমার পরিবার ও পিতা-ভাইয়ের সাথে সু-সর্ম্পক বিদ্যমান । সরেজমিনে জানা যায়, তার মামা পার্শ্ববর্তী রামুর কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান । তিনি শতকোটি টাকার মালিক । রাজনীতিতে তিনি পাকা খেলোয়াড় । কক্সবাজার সদর ও রামুর সাংসদ সোহেল সরওয়ার কাজলের ঘনিষ্টজন হিসেবে নুরুল আমিন পরিচিত । নাইক্ষ্যংছড়ির পাচঁ ইউনিয়নে প্রতিটি ইউনিয়নে নুরুল আমিনের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে । তার অর্থ বিত্ত ও ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে ভাইস চেয়ারম্যান পদটিতে জয়ী হতে চান ।
এদিকে গত সোমবার (৪ফেব্রুয়ারি) এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়ার ঘোষনা দিয়েছেন নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুদ্দিন মামুন শিমুল। বিজ্ঞপ্তিতে তিনি উল্লেখ করেছেন জেলা ছাত্রলীগের মাধ্যমে তিনি স্বীয় নিজ পদ থেকে পদত্যাগ চেয়েছেন। সংগঠনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেই তিনি সর্বদলীয় ছাত্র ও যুব পরিষদের ব্যানারে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন। জেলা নেতৃবৃন্দের বরাত দিয়ে তিনি বলেন- মাঠ যাচাই করে প্রার্থী পরিবর্তন করবে জেলা নেতৃবৃন্দ। সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারের মাধ্যমে তিনি ও তাঁর পরিবার শক্ত ভীতের উপর প্রতিষ্টিত বলে তিনি বিজ্ঞপ্তিতে দাবী করেন।
উল্লেখ্য, সাইফুদ্দিন মামুন শিমুল দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সক্রিয় রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন এবং তাঁর পারিবারিক ঐতিহ্যও প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে প্রাধান্য পাচ্ছে।
মুলত নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে বি.এন.পি- জামায়াত অধ্যুষিত এলাকা হলেও বিগত দিনে দুই বার উপজেলা নিবার্চনে মোঃ ইকবাল জয় লাভ করেছেন। পরবর্তীতে উপজেলা পরিষদ বাতিল হওয়ার পর গেল ২০০৯ সালে পুনরায় আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর নিবার্চন ঘোষনা করা হলে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ইকবাল ও চেয়ারম্যান তোফাইয়েলের মধ্যে প্রতিদন্দ্বিতা হয়। এতে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে অধ্যাপক তোফাইল নির্বাচিত হয়।
বর্তমানে রামুর আলোচিত বৌদ্ধ মন্দিরের ঘটনায় কক্সবাজার জেল হাজতে রয়েছেন তোফাইল। তাই আওয়ামীলীগ কৌশল পরিবর্তন করে এবার আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে একটি সূত্রে জানা গেছে। উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক তছলিম ইকবাল চৌধুরী ও আওয়ামীলীগ নেতা ডাঃ মোঃ ইসমাইল বলেন- আওয়ামীলীগের একটি দল মাঠ পর্যায়ে জরিপ করেই এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে। তারা আরো বলেন-বর্তমানেও মাঠ পর্যায়ে জরিপ চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানান। কৌশল গত পরিবর্তন সহ দলীয় সিদ্ধান্তে আওয়ামীলীগের সকলেই তফশীল ঘোষনার আগেই আগাম প্রস্তুতির পাশাপাশি প্রতিটি গ্রাম চষে বেড়াচ্ছে তারা। তবে জরিপের ফলাফলে আওয়ামীলীগ আগামী দিনে বিজয় নিশ্চিত বলে আশা ব্যক্ত করেছেন। তবে এলাকার জনমত জরিপে জানা যায়, উপজেলা চেয়ারম্যান পদে সাবেক চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমদ ও আওয়ামীলীগের প্রার্থী অধ্যাপক মোঃ শফিউল্লাহর সাথে তীব্র লড়াই হবে। তাছাড়া মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হামিদা চৌধুরী অন্য প্রার্থীদের চাইতে ব্যাপকভাবে এগিয়ে আছেন। ভাইস চেয়ারম্যান পদে সর্বদলীয় ছাত্র ও যুব পরিষদের পক্ষ থেকে বর্তমান উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুদ্দিন মামুন শিমুল প্রতিদন্ধীতা করার ঘোষনা দেন সাংবাদিকদের নিকট। ঘোষনায় তিনি নির্বাচন তফসিল ঘোষনার পরেই নির্বাচনী রোড় ম্যাপ বা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষনা করবে বলে জানান । আওয়ামী অঙ্গসংগঠনের যুবলীগ নেতা জসিম উদ্দিনের নামও শুনা যাচ্ছে।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুদ্দিন মামুন শিমুল জানান, দল থেকে পদত্যাগ করতে হলেও তিনি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত রয়েছেন। খোজ নিয়ে জানা যায়, তিন চেয়ারম্যান প্রার্থী ,অধ্যাপক শফি উল্লাহ,বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক তোফাইল আহমদ,নুরুল আলম কোম্পানী তিন জনেই ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুদ্দিন মামুন শিমুল আত্বীয়তার সম্পর্কে মামা । তাছাড়া আওয়ামীলীগে আরো যারা প্রার্থী প্রচারণায় আছে তারা উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু তাহের কোম্পানী,উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক তছলিম ইকবাল চৌধুরী,উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জসিম উদ্দিন সাইফুদ্দিন মামুন শিমুলের মামা । সে হিসেবে ভাইস চেয়ারম্যান ও তরুন প্রার্থী হিসেবে সাইফুদ্দিন মামুন শিমুল সর্বদলীয় নাগরিক ছাত্র ও যুব পরিষদের ব্যানারে এগিয়ে থাকতে পারে বলে গুনজন শুনা যাচ্ছে । রাজনৈতিতে তোফাইল বিরোধী হিসেবে পরিচিত পাওয়ার কারনে অন্য দলের প্রার্থী কামাল উদ্দিন ,আব্দুল আলীম বাহাদুর সুবিধা না পাওয়ার কথাই জানান ।
বর্তমান চেয়ারম্যান তোফাইল আহমদ কারাগার থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতার ঘোষনা দেন । তার বিশাল কর্মী বাহিনী চ্যালেঞ্জ নেয়ে মাঠে নেমে পড়েছেন । গত ১ মাস ধরে উপজেলার পাচঁ ইউনিয়নে প্রতিটি ওয়ার্ড় -গ্রাম পর্যায়ে চষে বেড়াচ্ছেন তার কর্মী বাহিনী ও পরিবারের লোকজন । অর্থ বিত্তের দিকে তোফাইল কম নয় । তার বড় ভাই নুর আহমদ কোং ইমেজ ও রাজনৈতিক পরিচয়, অর্থ এবং তার অন্য দুই ভাইয়ের অর্থ ও সরলতা তার নির্বাচনে পুজিঁ হয়ে দাড়াবে বলে সচেতন ও সাধারন ভোটাররা জানান । তার প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যান প্রার্থী শফি উল্লাহ সর্ব শেষ নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ধরাশয়ী হন তোফাইলের কাছে। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়,নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ৫ ইউনিয়নের মোট ভোটার ৩১৪৪৬ জন । পাচঁ উপজেলায় মোট ভোট কেন্দ্র ২৪টি ।