parbattanews

নাইক্ষ্যংছড়ি নো ম্যান্স ল্যান্ডে কয়েক হাজার গর্ভবতী ও প্রসূতি নারী চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে

লামা প্রতিনিধি:

বান্দরবানের মায়ানমার সীমান্তের ফুলতলী, শিলেরঝিরি, আশারতলী ও ছেড়ার মাঠ সংলগ্ন নো ম্যান্স ল্যান্ডে চলছে চরম মানবিক বিপর্যয়। মায়ানমার সামরিক জান্তার বর্বর অত্যাচারের শিকার হয়ে হাজার হাজার বনি আদম নো ম্যান্স ল্যান্ডের খোলা জায়গায় মানবেতর সময় পার করছে। বিশেষ করে, নারী ও শিশুদের দুর্ভোগ অবর্ণনীয়। প্রসূতি নারী ও গর্ভবতী মহিলাদের শরীরের ভাঁজে ভাঁজে যন্ত্রণা। অর্ধাহারে, অনাহারে দিনের পর দিন পাহাড় জঙ্গল, নদী পার হয়ে নো ম্যান্স ল্যান্ডের অসহায় অবস্থায় রয়েছে প্রায় লক্ষাধিক রোহিঙ্গা মুসলমান। আগত রোহিঙ্গাদের মধ্যে নাইক্ষ্যংছড়ি নো ম্যান্স ল্যান্ডে কয়েক হাজার গর্ভবতী ও প্রসূতি নারী রয়েছে চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে।

বাংলাদেশি কোন মানুষ রোহিঙ্গাদের অবস্থা দেখতে গেলে বিপর্যস্ত হাজার হাজার হাত তুলে সাহায্যের জন্য আবেদন জানান। ৫৮ বছর বয়সি মেহেরুন জানান, মায়ানমার সেনারা ছেলেকে হত্যা করার পর প্রাণ বাঁচাতে অন্তসত্বা পুত্রবধূ ও নাতিকে নিয়ে প্রতিবেশি আর দশটি পরিবারের সাথে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওনা হন। পথের মধ্যে পুত্রবধূর প্রসব বেদনা উঠলে তাকে ফেলে আমরা প্রাণ ভয়ে চলে আসি। পুত্রবধূ আমাদেরকে বলেছেন আপনারা প্রাণ বাঁচান। আল্লাহ আমার ভাগ্যে যাই রেখেছে তাই হবে। ১ সপ্তাহ পার হয়ে গেছে পুত্রবধূর আর কোন খোঁজ নাই।

মায়ানমারের পালইংগা ঝিরির নারী সদ্য প্রসূতি মাহামুদা বেগম (৩৫) জানান, স্বামী ও সন্তানকে মায়ানমারের সেনারা হত্যা করেছে। জীবন বাঁচাতে পালিয়ে এসেছি। নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই ডেলিভারি হয়েছে। তার শরীর ফুলে গেছে। রক্তশূণ্যতা রয়েছে। কোন চিকিৎসা না পাওয়ায় তার শারীরিক অবস্থা রয়েছে ঝুঁকিতে। অন্যদিকে রয়েছে খাবার সংকট।

বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি বান্দরবান জেলা ইউনিটের সেক্রেটারি কে এম জাহাঙ্গীর জানিয়েছেন, বান্দরবান সীমান্তবর্তী নো ম্যান্স ল্যান্ডের প্রায় ৪০ হাজার রোহিঙ্গা মানুষ চরম কষ্টে রয়েছে। এই মুহুর্তে তাদের খাবার, পানি ঔষুধ ও তেরপাল প্রয়োজন। বান্দরবান জেলা পরিষদ ৯টি টিউবওয়েল বসিয়ে দিয়েছে। প্রতিটি রোহিঙ্গাই অসুস্থ হয়ে পড়েছে। রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়ছে। নো ম্যান্স ল্যান্ডের স্যাত স্যতে জায়গায় দিনের পর দিন গাধাগাদি করে অবস্থান করায় ক্রমেই সকলে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে ফুলতলী ও সাপমারঝিরি নো ম্যান্স ল্যান্ডের অবস্থা খুবই খারাপ। নো ম্যান্স ল্যান্ডে অবস্থানকারী রোহিঙ্গাদের প্রায় ৭৫ শতাংশ নারী এবং পুরুষ। তাদের মধ্যে কয়েক হাজার গর্ভবতী মহিলা রয়েছে। প্রতিদিনই ১০/১৫ জন সন্তান প্রসব করে। প্রসূতি রোহিঙ্গা মায়েদের চিকিৎসায় নেই কোন ব্যবস্থা। সদ্য নবজাতক শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে রোগব্যাধিতে।

নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউপি চেয়ারম্যান তাসলিম ইকবাল চৌধুরী জানিয়েছেন, গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়েদের চিকিৎসার প্রয়োজন। তারা রয়েছে চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে।

Exit mobile version