বান্দরবানের মিয়ানমার সীমান্তে আবারও গোলাগুলি, আতঙ্কে স্থানীয়রা

fec-image

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারে আবারও গোলাগুলি শুরু হয়েছে। সীমান্তের ওপারে থেমে থেমে চালানো গুলির শব্দ শুনতে পেয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টা থেকে ১২টা পর্যন্ত অন্তত ১৩ রাউন্ড গুলির শব্দ শোনা গেছে বলে নিশ্চিত করেছেন ঘুমধুম ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ। তবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি প্রশাসন।

রবিবার (৪ সেপ্টেম্বর) ও সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর ২ দিন গোলাগুলি বন্ধ ছিল। তবে বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে নতুন করে নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের আশার তলী ফুলতলীসহ ঘুমধুমের রেজু আমতলী ও বাইশফাঁড়ি সীমান্তে গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যায়।

ঘুমধুম ইউপি চেয়ারম্যান ও এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের গোলাগুলি হলেও সীমান্ত এলাকা হওয়ায় বাংলাদেশের নাইক্ষ‍্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নে বসবাসকারীদের মধ্যে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও আতঙ্কও দেখা দেয়। বিশেষ করে দেশের অভ্যন্তরে মিয়ানমারের নিক্ষিপ্ত গোলা পড়া ও যুদ্ধবিমানের মহড়ার কারণে সীমান্তে শ্রমিকেরা কাজ বন্ধ রেখে নিরাপদ স্থানে সরে এসেছেন।

অন্যদিকে ঘুমধুম সীমান্তে বিরাজমান পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশের বর্ডার গার্ড (বিজিবি) সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।

বান্দরবান জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশের বান্দরবান জেলার নাইক্ষ‍্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের আমতলী, তুমব্রু, রেজু ও বাইশফাঁড়ি এলাকায় সীমান্তের ওপারে প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার সে দেশের সরকারি বাহিনীর সঙ্গে আরাকান বিদ্রোহীদের গোলাগুলি চলতে থাকে। এর ফলে দুই দফায় নাইক্ষ‍্যংছড়ির ঘুমধুমের তুমব্রু উত্তরপাড়া এলাকায় ১০০ গজের মধ্যে দুটি মর্টার শেল এসে পড়ে। এতে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি।

বান্দরবানের পুলিশ সুপার মো. তারিকুল ইসলাম ওই সময় গণমাধ্যমকে সীমান্তে গোলাগুলির কথা বলেন। জেলা প্রশাসন জানিয়েছিলেন, সীমান্তে গোলাগুলির ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে।

ঘুমধুম ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এই প্রতিবেদক বলেন, দুই দিন সীমান্তে মিয়ানমারের গোলাগুলির ঘটনা না ঘটায় বাংলাদেশের মিয়ানমার সীমান্তে ঘুমধুম ইউনিয়নের লোকজনের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসে। দুই দিন বন্ধ থাকার পর মঙ্গলবার সকালে মিয়ানমারে ফের গোলাগুলি শুরু হয়। সীমান্ত সংলগ্ন ঘুমধুমের লোকজন সকাল ৮টার দিক থেকে অন্তত ১৫ রাউন্ড গুলির শব্দ শোনে। এটা চলে সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত।

ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, `‘মঙ্গলবার মিয়ানমারের নিক্ষিপ্ত গোলা বাংলাদেশ সীমান্তের অভ‍্যন্তরে পড়েনি। তবে স্থানীয়দের মধ্যে ফের উৎকণ্ঠা দেখা দেয়। আজ সকালে সীমান্ত সংলগ্ন মিয়ানমারে গোলাগুলির ঘটনায় বাংলাদেশের ঘুমধুম সীমান্তে বিজিবিকে সতর্ক অবস্থায় থাকতে দেখা গেছে।’

এদিকে মঙ্গলবার সীমান্তের ঘুমধুম, গর্জনবুনিয়া বাইশ পারী চাকডালা আশারতলী সহ বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, দুই দিন বন্ধ থাকার পর সীমান্তে ফের গোলাগুলির ঘটনায় ঘুমধুম, ইউনিয়ন, সদর ইউনিয়নসহ সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত মানুষের মাঝে নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে। বিজিবি সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।

গর্জনবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছৈয়দ হামজা সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রতিদিন বর্মী (মিয়ানমার) সামরিক বাহিনীর গোলাগুলি বিকট শব্দ বিদ্যালয়ে বসেই শোনা যেত। ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে ছিলাম শঙ্কায়। তাই বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা অফিসার ত্রিরতন চাকমাকে অবহিত করেছিলাম।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিজিবির এক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, ‘সীমান্ত এলাকায় আমাদের (বিজিবি) নজরদারি ও টহল সব সময়ই থাকে। তবে সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনায় বিজিবি সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।’

অপর দিকে সীমান্তের পাহাড় ভূমির জুম চাষী সদর ইউনিয়ন এলাকার বাসিন্দা উচিং থোয়াই মার্মা ও জামাল উদ্দিন সহ অনেকে জানান, বর্মী বাহিনীর প্রতিদিনের গোলাগুলি ও হেলিকপ্টার থেকে গোলা বর্ষণের কারণে জুমের পাকা ধান কাটা মুশকিল হয়ে পড়েছে। শত শত একর পাকা ধান নষ্ট হওয়ার পথে। তাছাড়া জুম ক্ষেতে উৎপাদিত ফল ফলাদি নষ্ট হওয়ার পথে ।

চাষিরা কান্না জড়িত অবস্থায় এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘এই অবস্থা চলতে থাকলে তারা খাদ্য সংকটে পড়তে পারেন। জুমের ধান ও ফল ফলাদি নষ্ট হওয়ার সমূহ সম্ভাবনার কথা ও চাষিরা জানান।’

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: গোলাগুলি, নাইক্ষ্যংছড়ি, মিয়ানমার
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন