parbattanews

নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের চার পয়েন্টে আশ্রিত রোহিঙ্গা শিশুরা কাপছে প্রচণ্ড শীতে

বাইশারী প্রতিনিধি:

যথেষ্ট পরিমাণ শীতবস্ত্র না থাকায় প্রচণ্ড শীতে কাঁপছে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির উপজেলার চার পয়েন্টে সীমান্ত রেখায় আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শিশুরা। গত ২৫ আগস্ট ২০১৭  মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর নির্যাতনে রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা প্রায় ২০ হাজার রোহিঙ্গা বর্তমানে অবস্থান করছে উপজেলার ৪টি পয়েন্টের আশ্রয় শিবিরে।

এসব শিবিরে নানা বয়সী রোহিঙ্গাদের মাঝে প্রশাসনসহ বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠনের নিজ উদ্যোগে অল্প কিছু শীতবস্ত্র বিতরণ করা হলেও দোছড়ি ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী বাহেরমাঠ এলাকার পাহাড়ের ঢালুতে স্থাপিত অস্থায়ী শিবিরে আশ্রিত পরিবারগুলোর মধ্যে ১৮০ শিশুর নেই কোনো শীতবস্ত্র। যুবকেরা কোনো রকমে শীতের তীব্রতা কোন রকম সহ্য করলেও হাড় কাপানো শীতে ভীষণ কষ্টে রয়েছে শিশুরা। আবার কোনো কোনো শিশু আক্রান্ত হচ্ছে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগে।

ওই শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে মোট ৭৮ পরিবার। তারা মিয়ানমার সীমান্তের আমতলা গ্রাম থেকে এসেছে। দুর্গম অঞ্চল ও অনুন্নত যাতায়াত ব্যবস্থার কারণে সরকারি ত্রাণ ছাড়া অন্যান্য সংস্থা ও সংগঠনের উদ্যোগে কোনো সাহায্য এ ক্যাম্পে আসেনি। প্রতি মাসে দুবার সরকারি ত্রাণ ছাড়া অন্য কিছুর দেখা মেলেনি তাদের।

সরেজমিন সীমান্তের আশ্রিত রোহিঙ্গা শিবিরে গিয়ে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ওই ক্যাম্পের মোট জনসংখ্যা ৩৬৭। এর মধ্যে ১৮০জনই কম বয়সী শিশু। পলিথিন ও ঝোপ জঙ্গল দিয়ে  মোড়ানো শিবিরের ছোট ছোট ঘরের কোনোটিতে ৫জন, কোনোটিতে ৭জন, আবার কোনোটিতে ১০জন আশ্রয় নিয়েছে। দিনের বেলা কোনো রকম রোদে বসে পাড় করলেও রাত নামার সাথে সাথে প্রচণ্ড শীতে কাপছে বৃদ্ধ ও শিশুরা। পাহাড়ি অঞ্চলে শীতের মৌসুমে এমনিতেই শীতের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়, তা ছাড়া গত বুধবার থেকে পাহাড়ি এলাকায় শীতের তীব্রতা আরও বেড়ে যাওয়ায় মধ্য বয়সীরা কোনো রকমে সহ্য করলেও প্রচণ্ড শীতে ভীষণ কষ্টে রয়েছে শিশুরা। আশ্রিত রোহিঙ্গা শিবিরে অধিকাংশ শিশুদের গায়ে গরম জামাকাপড় নেই। সরকারিভাবে কম্বল বিতরণ করা হলেও শীতবস্ত্র না থাকায় শুধু কম্বল দিয়ে শীত নিবারণ করা আদৌ সম্ভব হচ্ছে না শিশুদের। এর ফলে অনেক শিশুরাই আক্রান্ত হচ্ছে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ার মত মারাত্মক রোগে।

শিবিরে আশ্রিত রোহিঙ্গা ফয়েস আহমদ জানান, সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে কুয়াশায় পলিথিন মোড়ানো ঘর ভিজে গিয়ে শীতের তীব্রতা আরো বৃদ্ধি পায়। ঐ সময় ছেলেমেয়েদের নিয়ে একই কম্বলের নিচে কোন রকমই রাত যাপন করে থাকি। শিশুদের শীতের কাপড় না থাকায় তারা ভীষণ কষ্টে রয়েছে। ইতিমধ্যে অনেকের ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া হয়েছে। তাই শিশুদের জন্য কিছু শীতের কাপড় পাওয়া গেলে অনেকটা ঠাণ্ডাজনিত রোগ থেকে রেহাই পেত।

আরেক রোহিঙ্গা সেফায়েত উল্লাহ জানান, মিয়ানমারের আমতলা পাড়ায় তাদের বাড়িঘর সব পুড়িয়ে দিয়েছে মিয়ানমার মিলিটারির লোকজন। প্রাণ ভয়ে বেঁচে থাকার আশায় ছেলে-সন্তান স্ত্রীকে নিয়ে এক কাপড়ে তারা পালিয়ে এসেছেন বাংলাদেশের সীমান্তে। আসার সময় তার সঙ্গে কিছুই আনতে পারেননি। বাংলাদেশ সরকার তাদের আশ্রয় দিয়েছে; দুবেলা খাবার দিচ্ছে, এ জন্য আমরা সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ। কিন্তু তীব্র শীতে শীতবস্ত্র না থাকায় শিশুদের নিয়ে চরম কষ্টে রাতযাপন করছি।

এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব হাবিবুল্লাহ বলেন, প্রত্যন্ত অঞ্চল দুর্গম, পাহাড়, অনুন্নত ও ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠন এখানে ত্রাণ বিতরণ করতে এগিয়ে আসেনি। শুধুমাত্র বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছে। তাই তিনি বিত্তবানদের এগিয়ে আসার ও আহ্বান জানান।

রোহিঙ্গা আরেক নাগরিক আমির হোসেন জানান, খাওয়া-দাওয়ায় কষ্ট পেলেও তারা নিরাপদে রয়েছে; তবে তরি-তরকারী এখানে প্রচুর পরিমাণ অভাব রয়েছে, তারপর তারা খুশি। ওপারে জায়গা জমি, ধন-সম্পদ, স্বর্ণালংকার, কাপড়চোপড়, গবাদিপশু, টাকা-পয়সা সব কিছু রেখে প্রাণ ভয়ে পালিয়ে এসেছে। বর্তমানে মিয়ানমার বাহিনী সীমান্তে স্থলমাইন পুঁতে রাখায় ওপারে গিয়ে ভয়ে কিছু আনতেও পারছে না।

রেড ক্রিসেন্ট বান্দরবান ইউনিটের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা জানান, প্রত্যন্ত অঞ্চল, যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ থাকায় ওই এলাকায় কেউ ত্রাণ দিতে যেতে চাই না। তবে আমরা রেড ক্রিসেন্টের পক্ষ থেকে তাদের ত্রাণ দিয়ে যাচ্ছি এবং শীতের কম্বল, খাদ্য, ওষুধ ও পরিধানের জন্য কাপড়-চোপড় বিতরণ করা হয়েছে। আগামীতে আরো দেওয়া হবে। এ লক্ষে কাজ করে যাওয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক বলেন, আমাদের কাছে এ ধরনের কোনো খবর  এ পর্যন্ত আসেনি। তবে পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুত রয়েছে এবং কম্বল ও শীতবস্ত্রও রয়েছে।  যখন প্রয়োজন হবে চাহিদা মোতাবেক সরবরাহ করা হবে।

Exit mobile version