নাইক্ষ্যংছড়িতে নিহত বিজিবি সদস্যের লাশ ফেরত: নিখোঁজ ৪ জন ফিরে এসেছে: সতর্কাবস্থায় বিজিবি সেনাবাহিনী: সীমান্তের পরিস্থিতি এখনো থমথমে

ZZZ

নুরুল আলম সাঈদ, নাইক্ষ্যংছড়ি:

অবশেষে তিন দিন পর বান্দরবান পার্বত্য জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দোছড়ি ইউনিয়নের দূর্গম পাইনছড়ির ৫২ সীমান্ত পিলার দিয়ে শনিবার বিকাল ৪ টায় আনুষ্ঠানিকভাবে লেমুছড়ির পাইনছড়ি অস্থায়ী ক্যাম্পের নায়েক মিজানুর রহমানের মরদেহ হস্তান্তর করেছে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) । এছাড়া গত শুক্রবার রাত ৮ টায় নিখোঁজ হওয়া ৪ বিজিবি সদস্য ফেরত এসেছে । চার বিজিবি সদস্য হলেন, বিজিবি ৩১ ব্যাটালিয়নের হাবিলদার মোতালেব, ল্যান্স নায়েক বাতেন, সিপাহী জাহাঙ্গীর ও আমিনুল।

 

এদিকে মিয়ানমারের ব্যাপক সমর সজ্জার বিপরীতে বাংলাদেশ  সীমান্তের ভিতর ১০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে নিরাপত্তা বেষ্টিনী নতুন করে বিন্যাস করা হয়েছে । এছাড়া সীমান্তের ৩ কিলোমিটারের মধ্যবর্তী এলাকা থেকে বাসিন্দারা সরে এসেছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে । সীমান্ত এলাকায় এখনও থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে । নাইক্ষ্যংছড়ি ৩১ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল শফিকুর রহমান এই তথ্য নিশ্চিত করেছে । তিনি শনাক্তকৃত লাশটি নিখোঁজ বিজিবি সদস্য মিজানুর রহমানের বলে জানান ।

শনিবার বিকেলে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দোছড়ি ইউনিয়নের পাইনছড়ি ৫২ নম্বর পিলারে লাশ হস্তান্তর বিষয়ে বিজিবি ও মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) মধ্যে বৈঠক শেষে উক্ত বিজিবি সদস্য নায়েক মিজানের মরদেহ হস্তান্তর করা হয় । বেলা আড়াই দিকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু সাফায়াৎ মো. শাহেদুল ইসলাম বলেন, ‘বিজিবি সূত্রে জেনেছি, মিজানুরের লাশ হস্তান্তরের কথামত পাইনছড়ি এলাকা থেকে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে ।

এদিকে ওই সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধির জের ধরে বিজিবি অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন এবং সীমান্ত এলাকায় শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি টহল জোরদার করেছে। এছাড়া সীমান্তের বিভিন্ন দুরবর্তী এলাকায় সেনাবাহিনীর উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে । বাংলাদেশের পক্ষে ৫০ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের উপ অধিনায়ক মেজর তারেক এর নেতৃত্বে এই মরদেহ গ্রহণ করে । এসময় উপস্থিত ছিলেন, নাইক্ষ্যংছড়ি ৩১ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের উপ -পরিচালক (এডি) মোশারফ হোসেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সাবের মিয়া, বিজিবির নায়েক সুবেদার জাহাঙ্গীরসহ ১৭ সদস্য বিশিষ্ট দল । মায়ানমারের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন, মায়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি)’র ২ ব্যাটালিয়নের থিং খাংসহ ২০ সদস্যদল ।

এদিকে, বিজিবির নিখোঁজ নায়েক মিজানুর রহমানের লাশ ফেরত চেয়ে শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিজিবির পক্ষ থেকে বৈঠকের আমন্ত্রণ জানানো হয়। দীর্ঘ আলোচনা শেষে বিকাল চার টায় মিজানের লাশ ফেরত দেয় । প্রত্যক্ষদর্শী মায়ানমারের বাউন্ডোলা ১নং সেক্টরের সাব ক্যাম্প থেকে ওই মরদেহ নাইক্ষ্যংছড়ির মায়ানমার সীমান্তের তেছড়ি খাল দিয়ে নৌকা করে পাইনছড়ি ক্যাম্পে রাখে । এরপর দোভাষী দীন মোহাম্মদ, ,দৌছড়ি ৬নং ওয়ার্ডের মেম্বার মুজিবুর রহমান ও মৃত শহর আলীর পুত্র সাইফুল ঘটনাটি বিজিবির কর্মকর্তাদের জানায় । পরে বিজিবি কর্মকর্তাগণ সনাক্ত করার পর আনুষ্ঠানিকভাবে ওই মরদেহ গ্রহণ করে । এরপর সন্ধ্যা ৬ টায় ওই মরদেহ লেমুছড়ি বিওপি ক্যাম্পে নিয়ে যায় । নাইক্ষ্যংছড়ি থানার পুলিশ পরিদর্শক শাহিনুর রহমান শাহিন ওই লাশ বিজিবি থেকে গ্রহণ করে ওই স্থানে।

ii

 

অপরদিকে, শুক্রবারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সীমান্তে ফের উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। ফলে বিজিবি সীমান্তে অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করেছে। মায়ানমার ও তাদের কাউয়ার বিল বিজিবি হেডকোয়ার্টার থেকে ওয়ালিদং বিজিপি ক্যাম্প, টাইগার পোষ্ট ৪ নং সাব ক্যাম্প,বানডোলা ১ সেক্টরের সাব ক্যাম্প, আমতলী, রাইবনিয়া, অংচা বেরে ক্যাম্পে ২০০ জন করে সেনা কমান্ডো ও অতিরক্তি বিজিপি মোতায়েন করে । তারা মর্টারসেল ও ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে জিরো পয়েন্ট এলাকায় অবস্থান করছে ।

শনিবার সকাল ১১ টায় বিজিপি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ৩টি মর্টার সেল নিক্ষেপ করে । বিজিবি ৩৩ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল লুৎফুর করিম বলেন, ভারি অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদের মজুদ বাড়ানোসহ যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে বিজিবিও। সীমান্তের বাইশফাঁড়ি গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সীমান্তরক্ষীর পোশাকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সদস্যরাও দৌছড়ি, পাইনছড়ি, তুমরু সীমান্তে অবস্থান করছেন। এতে প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়েছে সীমান্ত সংলগ্ন গ্রামগুলো। স্থানীয় বাসিন্দারা নিরাপদ আশ্রয় লাভে ইতিমধ্যে নিরাপদ স্থানে সরে গিয়েছেন।

শনিবার সকাল ৯ টা থেকে লেমছড়ি ক্যাম্প ও পাইনছড়ি সীমান্ত এলাকায় নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সাফায়াৎ মুহাম্মদ শাহে দুল ইসলাম,বিজিবির কক্সবাজারের সেক্টর কমান্ডার খন্দকার ফরিদ হাসান, ৫০, ১৭ ও নাইক্ষ্যংছড়িস্থ ৩১ বিজিবির অধিনায়ক লে.কর্ণেল সফিকুর রহমান বিগ্রেড কমান্ডারসহ প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন । নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সাফায়াৎ মুহাম্মদ শাহে দুল ইসলাম পাইন ছড়ি,বাহিরমাঠ ,কুলাচি,লেমুছড়ি,তুলাতলীসহ সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের এই ঘটনার জন্য আতংকিত না হওয়ার জন্য আহবান জানান । তিনি প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই পরিস্থিতি সাবধানে মোকাবেলা করা হচ্ছে বলে জানান ।

উল্লেখ্য গত বুধবার সকালে নাইক্ষ্যংছড়ি-মিয়ানমার সীমান্তের ৫২ নম্বর পিলারের কাছে ৩১ বিজিবির একটি টহল দলকে লক্ষ্য করে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা গুলিবর্ষণ করেন। পরে এ নিয়ে বিজিবির সঙ্গে তাদের গুলি বিনিময় হয়। ওই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হন বিজিবির নায়েক মিজানুর রহমান ।

 

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: নাইক্ষংছড়ি, বিজিপি, বিজিবি
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন