parbattanews

নাগরিকত্ব, নিরাপত্তাসহ অধিকার বাস্তবায়ন না হলে ফিরবেনা রোহিঙ্গারা

কুতুপালং ক্যাম্পের এক্সটেনশন ফোর ক্যাম্প মাঠে বিশাল সমাবেশে রোহিঙ্গারা

রোহিঙ্গা সংকটের দুই বছর পুর্ণ হল রবিবার (২৫ আগস্ট)। সেই উপলক্ষ্যে উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পের এক্সটেনশন ফোর ক্যাম্প মাঠে এক বিশাল সমাবেশের আয়োজন করে রোহিঙ্গারা। সমাবেশে সকাল ৮টা থেকে দলবদ্ধ হয়ে বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে আসতে শুরু করে তারা। এক পর্যায়ে মাঠ ছাড়াও পাহাড়ের পাদদেশে জড়ো হয় লক্ষাধিক রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ। সকাল ৯ টায় শুরু হয়ে সাড়ে ১০টায় শেষ হয় সমাবেশ।

আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস নামের সংগঠনের চেয়ারম্যান মুহিব উল্লাহ’র সভাপতিত্বে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন উক্ত সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ উল্লাহ, রোহিঙ্গা নেতা নূর হাকিম, মো. কামাল, আবদুর রহিম, নারীনেত্রী হামিদা বেগম প্রমুখ।

বক্তব্যে রোহিঙ্গা নেতা সৈয়দ উল্লাহ বলেন, ‘দুই বছর ধরে আমরা পরবাস জীবন যাপন করছি। নিজ ভিটেমাটিতে এখনো ফিরতে পারিনি। বিশ্বের শীর্ষ নেতৃত্ব আমাদের দেখতে আসে, সহানুভূতি জানায়। কিন্তু কেউ আমাদের নিজ দেশে ফেরাতে উদ্যোগ নেয়নি। এতে মিয়ানমারের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববাসীও ব্যর্থ।

নারীনেত্রী হামিদা বেগম বলেন, ‘দুই বছর ধরে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে মানবিক আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। এ জন্য আমরা বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমরা এখন ঘরে ফিরতে চাই। পাশাপাশি আমাদের যারা নির্যাতন করে এ দেশে পাঠিয়ে দিয়েছে, তাদের বিচার চাই।

রোহিঙ্গা নেতা মুহিব উল্লাহ বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের পূর্ণ সমর্থন নিয়ে নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরতে চাই। নাগরিকত্ব, স্বাধীনতা ও মর্যাদার সঙ্গে বসবাসের নিশ্চয়তা পেলে শিবিরের সব রোহিঙ্গা ফিরে যাবে। এ জন্য আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে সংলাপে বসতেও রাজি।

রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, রোহিঙ্গা মুসলমানদের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে নিতে হবে মিয়ানমারকে। সঙ্গে রাখাইনে ফেলে আসা ভিটেমাটিও ফিরিয়ে দিতে হবে। তাহলেই প্রত্যাবাসন সফল হবে। ২০১২ সালে ১ লাখ ২৮ হাজার রোহিঙ্গাকে ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করে যে আশ্রয়শিবিরে রাখা হয়েছে, তাদেরও নিজ নিজ বাসস্থান ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানানো হয় সমাবেশে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সমাবেশ শেষ হয়। এরপর রোহিঙ্গারা দলে দলে শিবিরে ফিরে যায়।

মধুরছড়া আশ্রয় শিবিরের ইনচার্জ মাইন উদ্দিন বলেন, সমাবেশ ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছিল। পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, বিজিবি, আনসার তৎপর ছিল।

সমাবেশে আগত রোহিঙ্গা নেতা নুরুল বশর জানান, ২৫ অগাস্টকে তারা গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করে এই সমাবেশ আয়োজন করেছে। গত বছর থেকে রোহিঙ্গারা এই দিনটিকে গুরুত্ব দিয়ে সমাবেশ করে আসছেন।

দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে উখিয়ার বালুখালী ও টেকনাফের পুঁটিবুনিয়া শিবিরে পৃথক বিক্ষোভ-সমাবেশ হয়েছে। সমাবেশে নাগরিকত্বসহ পাঁচ শর্ত বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয়।

উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নিকারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ২৫ আগস্ট উপলক্ষ্যে রোহিঙ্গাদের ছোট পরিসরে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়। এরপরেও সমাবেশে আশেপাশের নিরাপত্তা জোর রাখা হয়েছিল। যাতে কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে।

উল্লেখ্য যে, ২০১৭ সালের এ দিনে ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের ঘটনা ঘটে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে। এরপর থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নেয় সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা। বর্তমানে উখিয়া-টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় ১১ লাখের বেশি।

Exit mobile version