নাগরিক সমস্যার সমাধান ও পর্যটন নগরী গড়তে অশুভ বাঁধা মানবো না- বান্দরবানের নবনির্বাচিত মেয়র ইসলাম বেবী

ইসলাম বেবী

স্টাফ রিপোর্টার:

বান্দরবান পৌরসভাকে নতুন করে গড়তে আমি কোনো অশুভ বাধা মানবো না। পৌরবাসীকে সঙ্গে নিয়ে এই ভাঙাচোরা পৌরসভাকে সুন্দর শহরে রূপান্তরিত করবো। পর্যটন শহর করতে রাস্তার পাশে ভাঙ্গচোরা দোকান পাট মালিকদের পূণনির্মাণ করতে হবে অন্যথায় প্রশাসন চাইলে উচ্ছেদ করা হবে।

ইসলাম বেবী বান্দরবান জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক। ১৯৮৯ সালে প্রথম কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। এরপর থেকে ১২ বছর কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। প্যানেল মেয়র ও ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্বও পালন করেছেন। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচনে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থিকে দ্বিগুণ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে বান্দরবান পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন।বুধবার নিজ বাসভবনে পার্বত্যনিউজের নিজস্ব প্রতিবেদকের সাথে একান্ত স্বাক্ষাতকারে নিজের এ পরিকল্পনার কথা জানান বান্দরবান পৌরসভার নব-নির্বাচিত ও ক্রীড়া সংগঠক মেয়র ইসলাম বেবী।

নবনির্বাচিত মেয়র জানান, আগের মেয়র জাভেদ রেজা দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতিতে ডুবেছিলেন। গত ৫ বছর মেয়র পদে থেকেও পৌরসভায় কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন করতে পারেননি তিনি। নিজেও ঠিকাদারি কাজ করতেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর তার বিরুদ্ধে ১৭ পৃষ্ঠার শ্বেতপত্র তদন্ত করে দেখা হবে।

তিনি বলেন, দুর্নীতি, স্বজন ও দলীয় প্রীতিমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন পৌরসভা গড়তেই পৌরবাসী আমাকে ভোট দিয়েছেন। আমার চাওয়া-পাওয়ার কিছুই নেই। এখন নাগরিক সমস্যার সমাধানেই আমার মনোযোগ থাকবে।

দায়িত্ব গ্রহণের পর ১০০ দিনের উন্নয়ন কর্মসূচি ঘোষণা দেবেন এবং যেদিন দায়িত্ব গ্রহণ করবেন সেদিন শহরের ট্রাফিক মোড় থেকে রাজার মাঠ পর্যন্ত ভাঙ্গাচোরা রাস্তা মেরামতের কাজ শুরু করবেন।

ইসলাম বেবী বলেন, এবারে তিন মেয়রের নির্বাচনে অন্য দু’জনের থেকে আমাকে সর্বদলীয় সমর্থন দেয়ায় বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছি। স্থানীয় নির্বাচনে প্রতীকের চেয়েও ব্যক্তির গ্রহণযোগ্যতা প্রাধান্য দিয়েছেন ভোটাররা। তাই স্থানীয় ভোটারদের প্রতি আমার আত্মবিশ্বাস ছিল।এ কারণেই মেয়র হতে পেরেছি।

আলাপকালে তিনি বলেন, আমি সবসময় পৌরবাসীর বিপদে-আপদে পাশে থাকতাম। তাদের সঙ্গে আমার সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ছিল। তারা আমার প্রতি আস্থা রেখেই নির্বাচিত করেছেন। নাগরিকদের দেওয়া আশ্বাস বাস্তবায়নে আমি সর্বাত্মক চেষ্টা করবো।

দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের অভিজ্ঞতার বিষয়ে তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীকের চেয়ে স্থানীয় ভোটাররা প্রার্থীর ইমেজকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। ইমেজ সঙ্কটের কারণেই লাঙ্গল ও ধানের শীষের প্রার্থী এখানে জিততে পারেননি।

‘ক’ শ্রেণির মর্যাদাধারী বান্দরবান পৌরসভার বাসিন্দারা নানা সমস্যায় নাকাল। জলাবদ্ধতা, বেহাল রাস্তাঘাট, ড্রেনেজ ব্যবস্থাও নামমাত্র। এসব বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে নতুন মেয়র এসব সমস্যা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সমাধানের চেষ্টার কথা জানান। এছাড়া পানি ও বিদ্যুৎ সমস্যা ও সমাধানে পৌরবাসীর মতামত অনুযায়ী করার কথা জানান।

সব ধরণের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে প্রতিটি ওয়ার্ডই হবে মডেল ওয়ার্ড এমনটি জানিয়ে তিনি বলেন, অবহেলিত এলাকাগুলোকে চিহ্নিত করেই প্রথমে কাজ শুরু করতে চাই। কারো বেলাতেই আমি স্বজনপ্রীতি করতে চাই না।

নতুন প্রকল্প ইউজিপি-৩ চালু রাখা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, জনস্বার্থে হলে এ প্রকল্প চালু থাকবে।

দায়িত্বগ্রহণের পর আপনি কোন কাজটি প্রথমে করবেন? সাঙ্গুর এ প্রশ্নের উত্তরে মেয়র বলেন, বর্তমানে বান্দরবান শহরকে দেখে মনেই হয় না যে, এটি একটি প্রথম শ্রেণির পৌর শহর, তাই দায়িত্ব গ্রহণের পর আমি এই শহরের ভাঙাচোরা রাস্তা-ঘাটগুলি আগে সংস্কারের কাজে হাত দেবো। তারপর পর্যায়ক্রমে শহরের শ্রীবৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করবো।

তিনি বলেন, বান্দরবান পৌরসভা বেশী বড় না, প্রিয় এই শহরকে আমি সুন্দর করে সাজাতে চাই, প্রথম শ্রেণির পৌরশহরকে সবার বাসযোগ্য করে গড়ে তুলে পৌরবাসীর ভালবাসার প্রতিদান দিতে চাই।

নির্বাচনের আগে প্রতিটি পাড়ায় পাড়ায় পৌরবাসীর দোরগোড়ায় গিয়ে আমি নিবিষ্টমনে মানুষের কাছ থেকে যে আকুতি শুনেছি আজ তা বাস্তবায়ন করার সুযোগ এসেছে বললেন মেয়র বেবী।

এম্বুলেন্স সেবা নিয়ে তিনি বলেন, শুনেছি পৌরসভার এম্বুলেন্স নাকি চাকার অভাবে পড়ে আছে। আমি দায়িত্ব গ্রহনের পর পৌর এলাকায় ফ্রি এম্বুলেন্স সেবা দেয়া হবে। এবং শহরের বাইরে গেল নামে মাত্র খরচের টাকা নেয়া হবে।

তিনি বলেন, বিদেশের আদলে বান্দরবান পৌরসভাকে সুন্দর পৌরসভায় পরিণত করার জন্য যখন যেখানে যা করা প্রয়োজন তা সময়মতো করা হবে। আর এতে যদি কোনো বাধা আসে তা শক্ত হাতে প্রতিহত করে আমাদের লক্ষে পৌঁছাতে হবে। পৌরবাসী আমার কাঁধে যে গুরু দায়িত্ব দিয়েছেন এই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবো।

পৌরসভার কর্মচারীদের বকেয়া বেতন নিয়ে বলেন, আমি বার বছর দায়িত্বে ছিলাম।আমি জানি, কর্মচারীদের বেতন বকেয়া থাকার কথা নয়। অতীত মেয়রদের ব্যর্থতার কারণে কর্মচারীদের বেতন বকেয়া ছিল।

উন্নয়নে সরকারের অতিরিক্ত বরাদ্দ পাওয়ার বিষয়ে বলেন, উন্নয়নের জন্য বরাদ্দের কোন অভাব হবে না। স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয় ছাড়াও পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রনালয়, স্থানীয় সরকার পরিষদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সহায়তায় পৌরসভা উন্নয়নে অর্থ সংকটের কোন বাঁধা ধাকবে না।

আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, পৌর সভার রাস্তাঘাট যেন গো-চারণ ভূমিতে পরিণিত হয়েছে। পর্যটন শহরকে সুন্দর রাখতে যত্রতত্র এলাকায় গুরু-ছাগল চরা বন্ধ করে দেয়া হবে।

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা প্রশ্নের জবাবে ইসলাম বেবী বলেন, অন্য দুই পার্বত্য জেলার থেকে বান্দরবান আলাদা। এখানে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপি’র যোগ্য নেতৃত্বে সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি বজায় রয়েছে। আমি তার সহযোগী হিসেবে কাজ করে যাব।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিগত সময়ে কিছু অসাধু রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও খারাপ মানুষের কারণে বান্দরবান অনেক কলঙ্কিত হয়েছে, এতদিন আমার হাতে এসব নিয়ন্ত্রণের কোনো ক্ষমতা ছিল না, এখন পৌরবাসী আমাকে যে সম্মান দিয়েছেন সে সম্মান সর্বশক্তি দিয়ে রক্ষা করবো। মাদকমুক্ত করবো এ পৌরসভাকে।

তিনি বলেন, আমার নিজ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতাকর্মী পরিচয় দিয়েও যদি কেউ মাদক ব্যবসা করে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধির দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতাও বেশি বলে মনে করেন এ মেয়র। এ বিষয়ে তার মতে, স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের সব সময় পাবলিকের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলতে হয়। এ কারণে নাগরিক সমস্যা-সমাধানে তাদের কাজ করাটাও সহজ হয়।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: পৌরসভা, বান্দরবান, মেয়র
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন