নামের মিলে পাঁচ মাস জেলে বান্দরবানের দিনমজুর নুরুল আমিন

fec-image

নামে মিল থাকায় প্রকৃত মামলার আসামি না হয়েও এক ব্যক্তির প্রায় পাঁচ মাস কারাভোগের অভিযোগ উঠেছে। নুরুল আমিন নামে এই দিনমজুর বর্তমানে তিনি কক্সবাজার জেলা কারাগারে আছেন। তার গ্রামের বাড়ি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার জারুলিয়াছড়ি গ্রামে।

গত ২১ জুলাই নাইক্ষ্যংছড়ি থানা পুলিশের দায়ের করা মাদক মামলার আসামি হিসেবে তাকে আটক করা হয়েছিল। ২৬ দিন হাজতবাসের পর আদালত জামিন মঞ্জুর করলেও কক্সবাজার গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অপর একটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এরপর থেকে প্রায় পাচঁ মাস কারাভোগ করছেন নুরুল আমিন। এদিকে গত ৯ ডিসেম্বর কক্সবাজার ডিবি মামলার প্রকৃত আসামিকে আটক করতে সক্ষম হয়।

নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আবছার ইমন জানান, আটক দুই নুরুল আমিন একই গ্রামের বাসিন্দা। দুজনের পিতার নাম যথাক্রমে নুরুজ্জামান ও মনিরুজ্জামান। প্রথমে আটক নুরুল আমিন নিরপরাধ বলে পরিবার দাবী করেছে। এই বিষয়ে ডিবি পুলিশকে তিনি একটি প্রত্যয়ন দিয়েছেন।

কক্সবাজার জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী স্বীকার করেন, গ্রেপ্তার হয়ে কারান্তরীণ ব্যক্তি প্রকৃত আসামি নয়। গত ৯ ডিসেম্বর রাতে প্রকৃত আসামি নুরুল আমিন ওরফে ইমাম হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছেন তারা।

জানতে চাইলে নুরুল আমিনের স্ত্রী মোমেনা আক্তার বলেন, তার স্বামী কখনো মাদক কারবারে জড়িত ছিলেন না। দিনমজুরের কাজ করে তিনি সংসার চালান। মোমেনা অভিযোগ করেন, স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি ও কয়েকজন নিকটাত্মীয় তার স্বামীকে অর্থের বিনিময়ে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে। একই গ্রামের বাসিন্দা মো: সেলিমের দাবি, কেবল নামের সাথে মিল থাকায় অন্যায়ভাবে গত পাঁচ  মাস ধরে কারাভোগ করছে দিনমজুর নুরুল আমিন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, মামলার প্রকৃত আসামি এলাকায় নুরুল আমিন ওরফে ইমাম হোসেন নামে পরিচিত। রোহিঙ্গা হলেও শ্বশুর মনিরুজ্জামান ও শাশুড়ি আমিনা খাতুনকে পিতা-মাতা সাজিয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে একটি জন্মনিবন্ধন করেছেন। এলাকায় সে মাদককারবারী হিসেবে পরিচিত।

কিছুদিন পূর্বে এই নুরুল আমিন ওরফে ইমাম হোসেন মনে করে মিয়ানমারের কিছু উপজাতি এক বাংলাদেশীকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কাছেও সে মাদককারবারী হিসেবে পরিচিত ছিল। নানা অভিযোগের পরও স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধির ছত্রছায়ায় নুরুল আমিন এতোদিন এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরেছে বলে দিনমজুর নুরুল আমিনের পরিবার অভিযোগ করেছেন।

এদিকে গত ২১ জুলাই নাইক্ষ্যংছড়ি থানা পুলিশ ইয়াবা সংক্রান্ত একটি মামলায় নুরুল আমিন নামে একজনকে গ্রেপ্তারের পর আদালতের মাধ্যমে বান্দরবান কারাগারে পাঠায়। সে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের জারুলিয়াছড়ি এলাকার নুরুজ্জামানের ছেলে।

যোগাযোগ করা হলে নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আলমগীর হোসেন বলেন, নির্ভরযোগ্য তথ্য ও অভিযোগের ভিত্তিতে নুরুল আমিন নামে এক আসামীকে আটক করা হয়েছিল। সে নিজের অপরাধের বিষয়ে স্বীকারোক্তিও দিয়েছে। এখানে আসামী আটকে পুলিশের কোনো ভুল নেই। তবে ডিবি কর্তৃক আটক নুরুল আমিনের বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।

দিনমজুর নুরুল আমিনের আইনজীবি শামসুল আলম জানান, আটকের ২৬ দিনের মাথায় আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেছিল। কিন্তু কক্সবাজার ডিবির একটি মামলায় তাকে শোন এ্যারেস্ট দেখানো হয়। তিনি আরো জানান- ডিবির মামলার এজাহারে প্রকৃত অপরাধী নুরুল আমিনের পিতা অজ্ঞাত দেখানো হয়েছে। এই কারণে হয়তো বিনা অপরাধে দিনমজুর নুরুল আমিন এখনো কারাগারে।

২৯ এপ্রিল কক্সবাজারের রামু থানায় দায়ের করা ডিবির মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২৮ এপ্রিল রামু-নাইক্ষ্যংছড়ি সড়কের চা-বাগান রাস্তার মাথা এলাকায় ডিবির অভিযানে ৩০ হাজার ইয়াবাসহ মোহাম্মদ রশিদ প্রকাশ খোরশেদ (৩০) নামে এক যুবককে আটক হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সে ইয়াবা কারবারে নুরুল আমিন ওরফে ইমাম হোসেন, মো. বেলাল হোসেন, বশির আহমেদ ও মাহমুদুর রহমান ওরফে গাছরা জড়িত বলে জানায়।

পরে আটক রশিদকে নিয়ে আরো ইয়াবার চালান উদ্ধারে গেলে দুপক্ষের গুলাগুলিতে তিন পুলিশ সদস্য আহত এবং রশিদ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। এ ঘটনায় ডিবি বাদী হয়ে রামু থানায় মাদক, অস্ত্র ও হত্যা মামলা দায়ের করে। মামলায় অন্য আসামীসহ নুরুল আমিন ওরফে ইমাম হোসেনকে পলাতক দেখানো হয়। তবে ওই এজাহারে নুরুল আমিনের পিতার নাম অজ্ঞাত ছিল।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: নাইক্ষ্যংছড়ি, বান্দরবান, মাদক
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন