parbattanews

টেকনাফে ছেলে ধরা সন্দেহে এক নারীকে গণপিটুনির অভিযোগ মামলায় আটক ১০

ভিকটিমের ছবি

কক্সবাজারের টেকনাফে ছেলে ধরা সন্দেহে দিলুয়ারা বেগম (২৪) নামে এক ভারসাম্যহীন নারীকে গণপিটুনির অভিযোগে টেকনাফ থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনায় এজাহার নামীয় ১০ জনকে আটক করে টেকনাফ থানা হয়ে আদালতে প্রেরণ করা হয়।

২৬ জুলাই ভিকটিমের ভাই মোঃ আবছার বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় মামলা দায়ের করে। যার মামলা নং ৮৬।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, ২৫ জুলাই রাত ৮টার দিকে উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের দৈংগ্যকাটা এলাকায় মানসিক ভারসাম্যহীন এক নারীকে ছেলে ধরা সন্দেহ করে স্থানীয় বেশ কিছু পুরুষ নারী গণপিটুনি দেয়। বিষয়টি স্থানীয় হোয়াইক্যং ফাঁড়ি পুলিশ ঘটনাটি জানতে পেরে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে। শতাধিক উত্তপ্ত নারী পুরুষের অবরুদ্ধ থেকে পুলিশ নারীটিকে উদ্ধার করতে হিমশিম হয়ে পড়ে।

স্থানীয় র‌্যাবের সহায়তায় নারীটিকে উদ্ধার করে টেকনাফ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা করায়। এর মধ্যে পুলিশ তার কাছ থেকে একাধিকবার পরিচয় উদঘাটন করতে চাইলে বার ব্যর্থ হয়। নারীটি কুষ্টিয়া, উখিয়ার কুতুপালং সহ বিভিন্ন এলাকার পরিচয় দেয়। বেশ কিছু সময় চিকিৎসা সে কোনো রকম চট্টগ্রাম রাঙ্গুনিয়ার বলে পরিচয় দেয়। সে সুবাধে টেকনাফ থানা পুলিশ রাঙ্গুনিয়া থানা পুলিশের সহায়তায় বিস্তারিত পরিচয় উদঘাটন করতে সক্ষম হয়। ওই নারীটি চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনিয়া থানার উত্তর পাদুয়ার পশ্চিম খুরুশিয়া এলাকার মতিউর রহমান মতির স্ত্রী।

উদ্ধারকারী ও মামলা তদন্তকারী অফিসার বোরহান উদ্দিন ভুইয়া জানান, ওই নারীকে গণপিটুনি সংবাদে যে অবস্থায় ছিলাম, মাত্র ৩ জন পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। সেখানে গিয়ে দেখি স্থানীয়রা মারমূখী। কোনো মতেই তারা ওই নারীটিকে ছাড়ছেনা। তাদের একটি দাবি নারীটিকে লাশ করে হস্তান্তর করা হবে। নানা কৌশল অবলম্বন করে অবশেষে উদ্ধার করা হয়। পরে দেখছি সে একজন ভারসাম্যহীন। তার ভাই বাদী হয়ে এজাহারনামীয় ১৬ জন ও অজ্ঞাতনামা ৫০/৬০ জন আসামি করে থানায় মামলা করে। এর মধ্যে ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। বাকীদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

তিনি আরো জানান, গত রাতে (২৭ জুলাই) ১৬৪ ধারা মতে বিচারকের কাছে জবানবন্দি করা হয়।
তবে একাধিক এলাকাবাসী জানান, স্থানীয় তালেব বাহার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১ম শ্রেণীর ছাত্র আব্দুল খালেককে ওই নারী টানা হেচড়া করছিল। তার চিৎকার শুনে এলাকাবাসীরা এগিয়ে এসে উদ্ধার করে। আব্দুল খালেক মৃত আবুল কালামের ছেলে। খালেক বলেন, ওই নারীটি আমাকে টানা হেছড়া করে আহত করে।

ভিকটিমের পরিবার জানায়, সে মানসিকভাবে ভারসাম্য হয়ে ৩ বছর আগে নিখোঁজ হয়। এরই প্রেক্ষিতে একাধিক পত্রিকায় নিখোঁজের সচিত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলেও তার সন্ধ্যান মিলেনি।

এ দিকে টেকনাফে গুজব বন্ধ করতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বাজারে সচেতনতামুলক প্রচরণা চালিয়েছে টেকনাফ মডেল থানা পুলিশ। এসময় শিক্ষার্থীদের মাঝে বিভিন্ন সচেতনতামুলক বক্তব্যসহ লিফলেটও বিতরণ করা হয়েছে। ২৭ জুলাই উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে দিনব্যাপী এ প্রচারণা চালানো হয়।

এ সময় পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয় সম্প্রতি দেশব্যাপী একটি কূ-চক্রীমহল ‘ছেলেধরা’ গুজব ছড়িয়ে নিরীহ মানুষকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করেছে। যা ফৌজদারী অপরাধ। এটি বন্ধ করতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। এধরনের গুজবে বিভ্রান্তি না হয়ে আইন নিজের হাতে তুলে না নিতে সচেতনতা মুলক প্রচারণা চালায়। কাউকে ছেলে ধরা সন্দেহ হলে আইন নিজের হাতে তুলে না নিয়ে তাৎক্ষণিক আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবহিত করার আহ্বান জানান।

প্রচারণার সময় উপস্থিত ছিলেন টেকনাফ মডেল থানার ওসি (তদন্ত) এবিএসএস দোহার নেতৃত্বে একটি দল, অপরটিতে হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ীর ইনচার্জ এসআই বোরহান উদ্দিন ভুইয়া, এএসআই অহিদ উল্লাহ সহ অন্যান্য পুলিশ সদস্য। এতে শিক্ষক সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।

Exit mobile version