নাসার বাংলাদেশি বিজ্ঞানী রুবাব খানের বিস্ময়কর আবিষ্কার

182197_1

পার্বত্যনিউজ ডেক্স:

বাংলাদেশের রুবাব খান (২৯)। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসার একজন বিজ্ঞানী। নতুন এক আবিষ্কার সামনে এনে তিনি শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, সারা বিশ্বে হইচই ফেলে দিয়েছেন। নাসা গোডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টারের এই বিজ্ঞানী তার গবেষণা দলকে সঙ্গে নিয়ে সূর্যের চেয়ে কয়েক শত গুণ বড় ৫টি নক্ষত্রের সন্ধান পেয়েছেন।

গত বুধবার তিনি যখন যুক্তরাষ্ট্রের আমেরিকান অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির বার্ষিক সভায় এ ঘোষণা দেন তখন উপস্থিত সবাই একে অন্যের দিকে তাকাতে থাকেন বিস্ময়ে। বাংলাদেশি তরুণ এক বিজ্ঞানী এত বড় আবিষ্কার করে ফেলেছে! বিস্ময় ছড়িয়ে পড়ে চারদিক। মুহূর্তে সে খবর ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে। বিশ্ববাসী জেনে যায় রাজধানী ঢাকার উদয়ন স্কুল থেকে এসএসসি ও নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করা রুবাব খানের কীর্তিগাঁথা। তিনি সেই ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় জ্যোতির্বিদ হওয়ার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, সব সময় জ্যোতির্বিদ্যার বইপত্র ও নিউজলেটার নিয়ে বসে থাকতেন- তার সেই স্বপ্ন যেন সত্যি হতে চলেছে। যেনতেন কথা নয়, উদয়ন স্কুল থেকে নাসার গোডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টার।

বুধবার তিনি ও তার টিমের গবেষণালব্ধ তথ্য যখন আমেরিকান অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির বার্ষিক বৈঠকে উপস্থাপন করছিলেন তখন চারদিকে পিনপতন নীরবতা। তার কথা মন দিয়ে শুনছিলেন সবাই। রুবাব খান বললেন, খুব বড় ভরের নক্ষত্র সব সময় পাওয়া যায় না। তারা বিরল। তবে রসায়ন ও পদার্থবিদ্যার বিবর্তনে রয়েছে তাদের ভীষণ অবদান বা প্রভাব। যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডের গ্রিনবেল্টে অবস্থিত তার গবেষণা কেন্দ্র গোডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টার। সেখানে গবেষণা দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন রুবাব। তার এ কৃতিত্বের কথা শুনে ঢাকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারী প্রফেসর ও রুবাবের বড় বোন সুমাইয়া ফারাহ খান বলেছেন, রুবাব যখন ছোট ছিলেন তখন থেকেই তাদের পূর্বসূরির টেলিস্কোপে আকাশের তারা, নক্ষত্রদের পর্যবেক্ষণ করতেন। আর তার সঙ্গে জ্যোতির্বিদ্যার বইয়ের ছবি মিলেয়ে দেখতেন। শৈশবেই তার মধ্যে জ্যোতির্বিদ হওয়ার এক অদম্য আগ্রহ ছিল। ভাইয়ের এমন কীর্তিতে তিনি গর্বিত। সুমাইয়া ফারাহ খান বলেন, সাধারণত মানুষ তার পিএইচডির থিসিস উৎসর্গ করেন তার পিতামাতাকে। কিন্তু রুবাব তা করেন নি। তিনি তার থিসিস উৎসর্গ করেছেন বাংলাদেশকে।

উল্লেখ্য, আমাদের সৌরজগতের নিউক্লিয়াস বা শক্তির উৎস সূর্য এতটাই বড় যে সে আমাদের পৃথিবীর মতো ১৩ লাখ গ্রহকে ধারণ করতে পারে। কিন্তু এখন রুবাব খানের আবিষ্কারের ফলে এমন একটি নক্ষত্রের কথা আমাদেরকে কল্পনা করতে হবে যা সূর্যের চেয়ে কয়েক শত গুণ বড় এবং সূর্যের চেয়ে ৫০ লাখ গুণ আলোক আছে তাতে। এমন বিশাল কোনো নক্ষত্র যখন সুপারনোভা অবস্থায় পৌঁছে তখন তা বিস্ফোরণ ঘটে। এ সময় সৃষ্টি হয় জীবন সৃষ্টির মতো গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক উপাদান। তা ছড়িয়েও পড়ে তখন। এ জন্যই এত বিশাল নক্ষত্র তার আকৃতির কারণে থাকে অস্থিতিশীল।

নাসার মতে, এমন একটি নক্ষত্র সম্প্রতি খুঁজে পাওয়া গেছে, যা এখনও বিস্ফোরিত হয় নি। এর নাম ‘ইটা কারিনেই’। মূলত দুটি বিশাল নক্ষত্রের সমন্বয়েই সৃষ্টি এই নক্ষত্রটি। এর মধ্যে বড়টিকে ইটা কারিনেই-এ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। শুধু এই নক্ষত্রটি সূর্যের চেয়ে ১০০ থেকে ১৫০ গুণ বেশি ভারি। অন্যদিকে আরেকটি নক্ষত্রের নাম ইটা কারিনেই-বি। এটি অপেক্ষাকৃত ছোট। এর ভর সূর্যের চেয়ে ৩০ গুণেরও বেশি। ১৮৩৮ সালে ইটা কারিনেই-এ বিস্ফোরিত হয়েছিল। তখন আমাদের সূর্যের ভরের ১০ গুণ ভর ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল মহাশূন্যে। বিস্ফোরণের ফলে এটি দ্বিতীয় সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে পরিচিত করায়। এক্ষেত্রে প্রথম হলো সিরিয়াস।

রুবাব খানের গবেষণায় বলা হয়েছে, ইটা কারিনেই নিয়ে বিশ্বে ব্যাপক গবেষণা হয়েছে। এই নক্ষত্রটি আমাদের পৃথিবী থেকে প্রায় ৭৫০০ আলোকবর্ষ দূরে। তবে এখনও কেউ জানেন না, কেন এটি বিস্ফোরিত হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে আরও বুঝতে হলে বিজ্ঞানীদের ইটা কারিনেইয়ের মতো নক্ষত্র নিয়ে গবেষণা করতে হবে। এ লক্ষ্যেই গবেষণা শুরু করেন রুবাব খানের টিম। তার টিম এক্ষেত্রে শুধু একটি নয়, ৫টি একই রকম নক্ষত্রের সন্ধান পেয়েছে, যা ইটা কারিনেইয়ের আকার ও ভরের সঙ্গে খাপ খায়। অন্য ছায়াপথ থেকে এগুলো ১৫ থেকে ২৬ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরত্বের মধ্যে অবস্থিত। বুধবারের সম্মেলনে রুবাব খান ইটা কারিনেইয়ের মতো ৫টি নক্ষত্র খুঁজে পাওয়ার তথ্য তুলে ধরেছেন। এই আবিষ্কারে তাকে সহায়তা করেছে হাবল স্পেস টেলিস্কোপ ও নাসার স্পিটজার স্পেস টেলিস্কোপ।

রুবাব খান সম্মেলনে বলেছেন, বিশাল আকারের এসব নক্ষত্রের বিবর্তন আরও ভালোভাবে বুঝতে পারলে আমরা ওইসব রাসায়নিক উপাদান তৈরির প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে পারবো যা দিয়ে তৈরি হয়েছে আমাদের এই পৃথিবী। কিভাবে বিশাল আকৃতির নক্ষত্রগুলোর বিবর্তন হয়েছে তার ক্লু তুলে ধরে ইটা কারিনেই। ইনসাইড সায়েন্স’কে তিনি বলেছেন, প্রথমে আমরা আশা করেছিলাম একটি নক্ষত্রের সন্ধান পাব। তারপর আরেকটা। তারপর আরেকটা। এভাবে চলতেই থাকে। যখন এভাবে একের পর এক মোট ৫টি জায়ান্ট নক্ষত্রের সন্ধান পেলাম তখন আমরা তো বিস্ময়ে থ বনে যাই। এরপর কিছু সময় নিয়ে আমরা এসব বিষয়ে বারবার যাচাই করতে থাকি। চেক করে দেখতে থাকি কোথাও কোনো ভুল হচ্ছে নাকি। রুবাব খানের স্বপ্ন বাস্তব হতে শুরু করে ২০০৪ সালে। তখন তিনি জ্যোতি পদার্থবিদ্যার ওপর পড়াশোনার জন্য কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে বৃত্তি লাভ করেন। সেখানে ২০০৮ সালে তিনি গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে সম্পন্ন করেন পিএইচডি ডিগ্রি। সেখানে তাকে সহায়তা করেন প্রফেসর ক্রিজটফ স্ট্যানেক ও ক্রিস্টোফার কোনানেক। এখন তিনি নাসা গোডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টারের জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ ফেলো (জেডব্লিউএসটি)। এ যাবৎ তিনি ৩৫টি রেফারড পেপার লিখেছেন। এর মধ্যে নয়টি পেপারে তিনি প্রথম লেখক, দুটিতে তিনি দ্বিতীয় লেখক। নাসার ওয়েবসাইটে নিজের সংক্ষিপ্ত জীবনীতে তিনি লিখেছেন, নাসা গোডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টারে আমি একজন জেডব্লিউএসটি পোস্ট ডক্টরাল ফেলো। ২০১৪ সালে ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটির অ্যাস্ট্রোনমি বিভাগ থেকে অর্জন করেছি পিএইচডি ডিগ্রি। সেখানে প্রফেসর ক্রিজটফ স্ট্যানেক ও ক্রিস্টোফার কোনানেকের অধীনে কাজ করেছি। ২০০৮ সালে আমি নিউ ইয়র্কের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে অ্যাস্ট্রোফিজিস্কে করেছি গ্রাজুয়েশন। সেখানে আমি কাজ করেছি কলাম্বিয়া এক্সপেরিমেন্টাল গ্রাভিটি গবেষণা গ্রুপে প্রফেসর সাবোলকস মারকার অধীনে। আমার প্রাথমিক গবেষণার লক্ষ্যবস্তু হলো ম্যাসিভ (প্রকাণ্ড) নক্ষত্র নিয়ে গবেষণা করা। এতে আমি জানতে চেষ্টা করি এসব নক্ষত্রের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাতে তার কি প্রভাব পড়ে।

সূত্র: আমার বাংলাদেশ

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন