parbattanews

নিখোঁজ জেনার চাকমার বাড়িতে শোকের মাতম: পথ চেয়ে বসে আছে অশ্রুসিক্ত মা

নিজস্ব প্রতিনিধি, দীঘিনালা:
চারদিন ধরে নিখোঁজ জেনার চাকমার বাড়িতে শোকের মাতম চলছে। সংসারের বড় সন্তান বেঁচে আছে কিনা জানা নেই- এ অবস্থা কোনভাবেই মানতে পারছেন না মা সুজাতা চাকমা।

গত বুধবার দীঘিনালা উপজেলার উত্তর কৃপাপুর গ্রামের জেনার চাকমার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মূর্ছা যাওয়া জেনার চাকমার মাকে সান্তনা দিচ্ছে প্রতিবেশিরা। জেনার চাকমা খাগড়াছড়ি সরকারী কলেজের স্নাতক চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। গত রবিবার খাগড়াছড়ি থেকে বাড়ি ফেরার পথে উপজেলা সদর অপহৃত হয়। এরপর ঐ এলাকায় দুইটি হত্যাকান্ডের কথা শোনা গেলেও সেগুলোর লাশ না পাওয়ায় তা কাদের লাশ না নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কারো কারো ধারণা তাকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। তবে এ ঘটনায় কোন প্রকার মামলা হয়নি।

পরিবার সুত্রে জানা যায়, উপজেলার উত্তর কৃপাপুর গ্রামের কৃষক সুনীতি রঞ্জন চাকমার বড় ছেলে জেনার চাকমা খাগড়াছড়ি জেলা সদরে থাকে। কৃষক পরিবারে অভাব থাকায় বাড়ি থেকে লেখাপড়া করার খরচ দেয়ার কোন উপায় করতে পারে না বাবা-মা। তাই খাগড়াছড়ি সরকারী কলেজে পড়াশুনার পাশাপাশি গৃহশিক্ষকের কাজ করে পড়াশুনা করছে। এবার সে স্নাতক শ্রেণির চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। বৈসাবী উৎসব খাগড়াছড়িতে পালন করার পর গত রবিবার সকালে জেনারের মাকে বাড়ি আসার কথা জানায়।

পরে খাগড়াছড়ি থেকে বাড়ি ফেরার পথে গত রবিবার উপজেলা সদরে পৌঁছার পর অজ্ঞাত ৪/৫জনের একটি সন্ত্র্রাসীদল তাঁকে অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। ঘটনার পর আর বাড়ি ফিরেনি।

এদিকে জেনার চাকমা জীবিত আছেন ধরে নিয়ে সন্তানের খোঁজে আত্মীয় স্বজনের বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়াচ্ছে জেনারের বাবা সুনীতি রঞ্জন চাকমা।

জেনার চাকমার ফুফু মুহিনী বালা চাকমা জানান, ঘটনার পর পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। জেনার চাকমা সংসারের বড় ছেলে। তার বাবা-মায়ের ইচ্ছা ছিল, হয়তো একদিন সংসারের হাল ধরবে। কিন্তু কে জানে এভাবেই যে চলে যেতে হবে।

গত বুধবার জেনার চাকমার বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, সন্তানের শোকে বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন মা সুজাতা চাকমা। এসময় তিনি জানান, সর্বশেষ গত রবিবার সকালে ফোনে জেনার জানান, বাড়িতে এসে ভাত খাবে। তাই সকাল থেকেই তার জন্য ভাত রান্না করে রেখেছি। কিন্তু অটোরিক্সা করে বাড়ি ফেরার পথে দুপুর একটার দিকে উপজেলা সদর পর্যন্ত আসার পর সন্ত্রাসীরা অপহরণ করে নিয়ে যায়। এর পর থেকেই তার মোবাইল বন্ধ। বার বার যোগাযোগ করেও আর কোন সংযোগ পাওয়া যায়নি।

তিনি আরো জানান, জেনার চাকমারা দুই ভাই। দুজনের মধ্যে জেনার খুব শান্ত প্রকৃতির। সে কোন আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের সাথে সর্ম্পৃক্ত ছিল না।

স্থানীয়দের ধারণা, জেনারকে রবিার রাতেই মেরে ফেলে দেয়া হয়েছে। কিন্তু যেহেতু তার দেহ পাওয় যায়নি, তাই পিতামাতা সন্তানের পথ চেয়ে বসে আছে অস্ত্রুসিক্ত নয়নে।

দীঘিনালা স্থানীয় দিঘীনালা থানার অফিসার ইনচার্জ(তদন্ত) মো. নেয়ামতুল করিম পাটোয়ারী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, অপহরণ অথবা হত্যা সর্ম্পকে কেউ কোনা প্রকার অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উল্লেখ্য, গত পয়লা বৈশাখের দিবাগত রাতে কৃপাপুর এলাকা থেকে জেনার চাকমা অপহরণের পর হত্যা করা হয়েছে এমন সংবাদের পর পুলিশ অনেক খোঁজাখুজি করেও কোন লাশের দেহ পাননি।

Exit mobile version