parbattanews

নিজের দক্ষতা নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপরে আটকে রাখলে পরিণত হবেন ‘গর্দভে’

কর্মক্ষেত্রে নিজের দক্ষতা কেবল একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপরে আটকে রাখলে আপনি একজন ‘গর্দভে’ পরিণত হবেন। বর্তমান সময়ে আমাদের আধুনিক প্রতিষ্ঠানগুলোই কর্মীদের গাধা তৈরি করার জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী। অনেকক্ষেত্রে এসব প্রতিষ্ঠানে অন্যকে সহযোগিতা বা জ্ঞানের আদানপ্রদানও অনুৎসাহিত করতে দেখা যায়।

ম্যাক্স ওয়েবার বিখ্যাত জার্মান রাজনৈতিক অর্থনীতিবিদ একবার নিজের অ্যাকাডেমিক ডিসিপ্লিনের বাইরে গিয়ে লেখা প্রকাশ করায় তার এক সহকর্মী তার সমালোচনা করেছিলেন। সেটার উত্তরে ওয়েবার বলেছিলেন, ‘আমি কোনো গাধা নই, আর আমার কোনো জমিও নেই।’

ওয়েবারের ‘ক্ষেত্র সংকীর্ণ করা’র এ প্রতিবাদের একশ বছর পার হয়ে গেছে। কিন্তু বিষয়টি এখন আগের চেয়ে বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। আর সেটা কেবল বিদ্যায়তনিক নয়, ব্যবসায়িক ক্ষেত্রেও সত্য।

বর্তমানে উদ্যোক্তাজগতে গাধা হওয়াটা বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। একটি ব্যবসায় শুরু করা ও সেটা পরিচালনা করার জন্য যে কারওরই ব্যবসায় নিয়ে বিস্তর জ্ঞানের প্রয়োজন হয়। উদ্যোক্তাকে বাজারের সুযোগ কোথায় আছে, কীভাবে নতুন ও উদ্ভাবনী পণ্য তৈরি করতে হয় ইত্যাদি বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা রাখতে হয়। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, একজন উদ্যোক্তাকে ব্যবসায়িক বিভিন্ন দিক সুচারুভাবে সামলাতে সক্ষম এমন একটি দল পরিচালনা করাও জানতে হয়।

আজকের দুনিয়ায় ম্যানেজারেরা তাদের সুনির্দিষ্ট কাজে দক্ষ হন। শিক্ষাজীবনে তাদের পাঠের নির্দিষ্ট একটি বিষয় থাকে। কর্মজীবনে প্রবেশ করার পর তাদেরকে কোনো সুনির্দিষ্ট বিষয়ে দক্ষতা বাড়ানোর জন্য উৎসাহ দেওয়া হয়। কিন্তু একসময় সিনিয়র ম্যানেজারের দায়িত্ব পড়লে তারা টের পান তাদের দক্ষতা কেবল একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রের ওপর সীমাবদ্ধ।

এরাই ওই ক্ষেত্রটির গাধায় পরিণত হন। তারা স্মার্ট ও কঠোর পরিশ্রমী- এ কথা অনস্বীকার্য। তারপরও তারা গাধা হিসেবেই রয়ে যান।

যে কারণে বহুবিদ্যা আয়ত্ত করা কঠিন

এর জন্য আমাদের আধুনিক প্রতিষ্ঠানগুলোই সবচেয়ে বেশি দায়ী। এ প্রতিষ্ঠানগুলোই গাধাদের তৈরি করে। অনেকক্ষেত্রে এসব প্রতিষ্ঠানে দেখা যায় অন্যকে সহযোগিতা বা জ্ঞানের আদানপ্রদানও অনুৎসাহিত করা হয়। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানে কেউ যদি নিজের সেকশনের বাইরে গিয়ে কাজ করতে চান, তাহলে তাকে পুরোদস্তুর আমলাতান্ত্রিক প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয়। এসব পরিস্থিতিতে ব্যক্তি বেশিরভাগক্ষেত্রে হাল ছেড়ে দেন।

হোম-অফিসের মতো কর্পোরেট সংস্কৃতি তৈরি হওয়ার পর এটির ঝুঁকি আরও বেশি তৈরি হয়েছে। হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলের সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় জানা গেছে, ২০১৯ ও ২০২০ সালে করোনা মহামারির সময়ে ঘর থেকে কাজ করার জরুরি ব্যবস্থার কারণে অনেক কোম্পানি আগের তুলনায় বেশি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এসব কোম্পানির কর্মীরা বিভিন্ন বিচ্ছিন্ন যোগাযোগ নেটওয়ার্কে ডিজিটালভাবে ভাগ হয়ে গেছেন।

বিভিন্ন বিদ্যায় পারদর্শী হওয়ার উপায় খুঁজে বের করুন

আপনি কর্মক্ষেত্রে যত শীর্ষস্থানের দিকে অগ্রসর হবেন, ততই একাধিক বিষয়ে দক্ষতা অর্জন আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াবে। কোনো বিশেষ বিষয়ে পারদর্শী হওয়ার নিয়ত চাপকে উপেক্ষা করে একজন নেতাকে বিভিন্ন বিষয়ে ধারণা রাখতে হবে। আর এভাবে এগোলে আপনার সামনে আরও ভালো নেতা হওয়ার পথ খুলে যাবে।

বর্তমান বিশ্ব যেখানে ‘বিশেষায়িত’ নির্ভর, সেখানে যার একাধিক ক্ষেত্রে জ্ঞান আছে, তিনি ক্যারিয়ার পাল্টাতেও বিশেষ অসুবিধার সম্মুখীন হন না।

গবেষণায় দেখা গেছে, কর্মজীবনে নতুন করে প্রবেশ করা তরুণকর্মীরা ক্যারিয়ারে প্রাথমিকভাবে সাফল্য লাভ করেন। কিন্তু শীঘ্রই বহুবিদ্যায় জ্ঞান রাখা তাদের সহকর্মীরা তাদেরকে টপকে যান। যারা মাঠপর্যায়ে কাজ করেন, তাদের হাল ছেড়ে দেওয়ার প্রবণতা অন্যদের চেয়ে কম হয়। কারণ তারা শুরু থেকেই চ্যালেঞ্জিং কাজে প্রবেশ করেন। তাদের কাজে তারা অনেক কিছুই বাধ্য হয়ে শেখেন।

নিজের চারপাশ গাধায় ভরা থাকলে আপনার নিজেরও গাধায় পরিণত হওয়া সহজ হয়ে যাবে। তাই শুরু থেকেই যদি নিজের কর্মপরিধি থেকে বের হয়ে আরও অন্যান্য বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে পারেন, তাহলে সেটা আপনার ক্যারিয়ারের জন্য আখেরে লাভই হবে।

সূত্র: ইঙ্ক ডটকম

Exit mobile version