নিয়মিত ভাতা তুলছেন রাজস্থলীর ভুয়া মুক্তিযোদ্ধারা

প্রতারণা

রাজস্থলী প্রতিনিধি :

জেলার রাজস্থলী উপজেলার সেনাবাহিনীর সদস্য মোঃ চাঁদ আলী সম্প্রতি চাকুরীচ্যুত হয়েছেন বলে জানা গেছে। তার শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ বেতন ভাতা উত্তোলনের নথি নির্বাচন কমিশনের হালনাগাদ ভোটার তালিকা, জাতীয় পরিচয়পত্র সব খানেই তার নাম চাঁদ আলী, পিতা: শুক্কুর আলী উল্ল্যেখ রয়েছে। তিনি নাম বদল করে মুক্তিযোদ্ধা সনদে উল্লেখ করেন, চান্দু মিয়া, পিতা: শুক্কুর আলী গুড়া মিয়া। আসলে তার প্রকৃত নাম হল, চাঁদ আলী, পিতা: মরহুম শুক্কুর আলী। তিনি রাজস্থলীতে ২৩ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে সেনাবাহিনীর সৈনিক পদে চাকুরী করার সময় মুক্তিযোদ্ধার কোন পরিচয় প্রদান করেননি। বরং সেনাবাহিনীর সদস্য বলে পরিচয়পত্র প্রদান করেন।

তবে কিভাবে সে মুক্তিযোদ্ধা হলো তা রাজস্থলী উপজেলার জনসাধারণের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ’৭১ কোন সময়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন এমনটাও জানা নেই রাজস্থলী এলাকাবাসীর। ১৯৭২ সনের বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ২৩ ইস্ট বেঙ্গলে সৈনিক পদে ভর্তি হন তিনি। তখন তার বয়স ছিল ১৭ বছর। বর্তমান জন্ম তারিখ হিসেবে তার চাকুরী ও মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে গড়মিল রয়েছে যা প্রমাণ করার মত নয়। নামবদল করে দুই মন্ত্রণালয়ের আলাদা নামে সরকারী সুবিধা এমনকি মুক্তিযোদ্ধার ভুয়া সার্টিফিকেট বানিয়ে মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় দিয়ে মুক্তিযোদ্ধার ভাতা উত্তোলন করছে বলে জানা গেছে।

রাজস্থলীতে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই সংক্রান্ত দায়িত্ব পালনকালে বিষয়টি জেলা প্রশাসকের নজরে পড়লে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক স্মারক নং. ০৫.৪২.৮৪০০.২০৪.০৬.০০১.১৪-৫৮৮ মুলে একটি পরিপত্র বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা ইউনিট কমান্ড এর কার্যালয়ে প্রেরণ করেন। উক্ত পরিপত্র অনুযায়ী ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিবেদনে জানা যায়, রাজস্থলীতে চাঁদ আলী, সুলতান আহম্মদ, ইউছুপ, রুহুল আমীন ও আবুল কাশেম তাদের সঠিক মুক্তিযোদ্ধার যাবতীয় কাগজপত্র অসম্পুর্ণ থাকায় তাদের ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রমাণিত হয়েছেন বলে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড রবার্ট রোনাল পিন্টুর স্বাক্ষরিত পরিপত্রে জানা যায়।

এদিকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা চাঁদ আলীর তথ্য অনুসন্ধান করতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে চাঁদ আলী প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নন। একাত্তরে কোন সময়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন এমন কোন প্রমাণ নাই । মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ে চাঁদ আলীর নিকট সঠিক কাগজপত্র বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি সেনাবাহিনীতে চাকুরীরত একটি পরিচয় পত্র যার ক্রমিক নং-০৪১৫৮৭ এবং ৩৯৫৩৪৭৪ দেখাতে পেরেছেন। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কোন সনদ দেখাতে পারেন নাই। ২০১৩ সালের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত ও বিশেষ গেজেট মুলে কপিতে দেখা গেছে সেখানে যুদ্ধকালীন বিভাগ, রাজশাহী জেলা, সিরাগঞ্জ উপজেলা, শাহজাত পুরে ১৩ জন সেনা সদস্য নাবিক ও সেনা শহীদদের নাম ছাপা হলেও চাঁদ আলী নামক কারোর নাম নেই।

এ বিষয়ে চাঁদ আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার নাম চাঁদ আলী, আমি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে চান্দু মিয়া পরিচিত। তবে তিনি দাবী করেন, সেনাবাহিনী থাকাকালীন মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। তখন ভুলক্রমে তার নাম চান্দু মিয়া লেখা হয়েছে এবং ঐ নামে তিনি সনদ পেয়েছেন।

এভাবে রাজস্থলীতে আরো ৪ জন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা আছে। কিন্তু তারা এখনো কোন মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সনদ দেখাতে পারেন নাই। স্বাধীনতা পরবর্তি সময়ে বিভিন্ন সরকারের আমলে নানা কৌশলে তারা মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় গেজেট প্রাপ্ত হোন। গেজেট প্রাপ্ত হয়ে তারা বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা ভোগ করে সরকারী ভাতা গ্রহণ করে আসছেন। বর্তমানে শেখ হাসিনা সরকার এসব ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তারা মুক্তিযোদ্ধার সঠিক ইতিহাস বিকৃত করে নিজেরা যুদ্ধ না করে মুক্তিযোদ্ধা সেজে সঠিক মুক্তিযোদ্ধাদের আবেগে আঘাত করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল কুদ্দুস এর সাথে আলাপ কালে তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের কাগজপত্র দেখে এবং প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের গেজেট যাচাই বাছাই করে আগামী ১৬ ডিসেম্বর প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দেওয়া হবে এবং ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: পার্বত্যনিউজ, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন