নীলাচলে মেঘ পাহাড়ের লুকোচুরি

Bandarban Hill pic-1 

জহির রায়হান

চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিশাল আকৃতির রহস্যভরা পর্বতমালা। বর্ষায় রহস্যভরা এসব পর্বতমালায় অনায়াসে মেঘের ছোঁয়া পাওয়া যায়। পর্বত আর মেঘের লুকোচুরি খেলায় অপরূপ সৌন্দর্যে ভরে উঠে পাহাড়ী কন্যা হিসেবে খ্যাত বান্দরবান। পর্বত, মেঘ, প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা নজরকাড়া, মনোমুগ্ধকর অসংখ্য পর্যটন স্পটের কারণে পাহাড়ী কন্যা বান্দরবান সারাদেশ ও বিশ্বে পরিচিতি পেয়েছে অনেক আগেই। শুরুতে কিছু সংখ্যক পর্যটক পাহাড় দেখতে বান্দরবানে আসলেও এখন সারাবছরেই দেশী-বিদেশী পর্যটকেরা ছুটে আসছে। বর্ষায় খুবই কাছ দিয়ে মেঘের উড়ে বেড়ায়, ফলে অনায়াসে মেঘের ছোঁয়া পাওয়া যায়। একারণে পাহাড়ী কন্যা বান্দরবানকে বর্ষা অনেকে মেঘের রাজ্যে বলে থাকে।

গত শনিবার সরেজমিনে বান্দরবান শহর থেকে ৬ কিলোমিটার দুরে ২৬০০ ফুট উঁচু পাহাড় অন্যতম পর্যটন স্পট নীলাচল ঘুরে দেখা গেছে, বিস্তির্ণ পাহাড়ের দিগন্তছোঁয়া দৃশ্য এবং পাহাড়, আকাশ আর মেঘের মিতালী ও লুকোচুরি খেলা দেখতে এখানে হাজারো পর্যটক ভীড় জমিয়েছে। মেঘ আপনা আপনিতেই শরীর ছুয়ে যাওয়ার মনোমুগ্ধকর দৃশ্যে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের আনন্দে মেতে উঠতে দেখা গেছে।

এসময় ঢাকা থেকে আগত পর্যটক সান সুমন জানান, সোমবার সকালে সড়ক যোগে এই প্রথম তিনি বান্দরবানে এসেছেন। তিনি বান্দরবানের কয়েকটি পর্যটন স্পট বৌদ্ধ স্বর্ণ জাদি, মেঘলা, শৈলপ্রপাত ঘুরে দেখেছেন। গতকাল মঙ্গলবার নীলাচল পর্যটন স্পটে এসেছেন। এখানে অপরূপ নজরকাড়া বিস্তির্ণ পাহাড়ের সারি ও পাহাড়, আকাশ মেঘের মিতালী দেখে তাকে এক প্রকার আত্মহারা মনে হলো। তিনি জীবনে কখনো দেখেননি মেঘ আপনা আপনিতেই শরীর ছুয়ে যাওয়ার দৃশ্য। তিনি ভারত, নেপালসহ অনেক দেশ ঘুরে দেখেছেন। কিন্তু বাংলাদেশের বান্দরবানে এত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রয়েছে যা অন্য আর কোন দেশে নেই। এখানে না আসলে তা কেউ বুঝতে পারবে না বলে তার ধারণা।

নীলাচল পর্যটন স্পটে ঘুরতে আসা চট্টগ্রাম কলেজের শিক্ষক অসীম বড়–য়া জানান, তিনি নতুন বিয়ে করেছেন। নতুন বধূকে নিয়ে বান্দরবানে ঘুরতে এসেছেন। তিনি বান্দরবানে প্রথম আসলেও বান্দরবান যে খুবই সুন্দর বন্ধুদের কাছ থেকে আগেই শুনেছেন। এর আগে তিনি কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি ভ্রমণ করেছেন। কিন্তু বান্দরবানে এসে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও মেঘ দেখে তার এক অন্যরকম অনুভুতি হয়েছে। এখানে না আসলে কেউ কল্পনাও করতে পারবে না যে,  বাংলাদেশে এত সুন্দর এলাকা রয়েছে। তিনি বলেন, কক্সবাজারকে যেভাবে মার্কেটিং বা দেশ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরা হয়েছে। বান্দরবানকে সেভাবে তুলে ধরা হলে বান্দরবান কক্সবাজার থেকে অনেক বেশি দেশী-বিদেশী পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে পারতো। 

বান্দরবান জেলা প্রশাসক কে.এম তারিকুল ইসলাম জানান, ঐতিহ্যগতভাবে পর্যটনের দিক থেকে গুত্বপূর্ণ জেলা বান্দরবান। বান্দরবানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে সারাবছরেই দেশী-বিদেশী পর্যটকদের আনাঘোনা লেগে থাকে। জেলা প্রশাসন থেকে পর্যটকদের নানাভাবে সহযোগিতা দেয়া হয়। পর্যটকেরা যাতে এখানে এসে কোন প্রকার হয়রানী না হয়, সেদিকে লক্ষ্যে রেখে সবসময়ে শহরের ও পর্যটন স্পটগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়। এছাড়াও জেলা প্রশাসন, পার্বত্য জেলা পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড বান্দরবান জেলাকে আধুনিক পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলতে কাজ করে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে দেশ-বিদেশে বান্দরবানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে তুলে ধরতে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন আঙ্গিকে সাজানো হয়েছে নীলাচল পর্যটন স্পটকে।

এদিকে বান্দরবানে ঘুরতে আসা পর্যটক ও স্থানীয়রা মনে করেন, যোগাযোগ ও আবাসন ব্যবস্থাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে বান্দরবানে পর্যটকের সংখ্যা আরো বাড়বে। তারা এবিষয়ে সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনকে দ্রুত উদ্যোগ নেয়ার জন্য আহবান জানিয়েছেন।

 

 

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন