parbattanews

নেকাব পড়ে অনলাইনে ক্লাস নেওয়ায় স্কুল শিক্ষিকাকে হেনস্থা করলেন প্রধান শিক্ষক

নেকাব পড়ে অনলাইন ক্লাস নেওয়ায় একজন মহিলা শিক্ষককে হেনস্থা করেছেন উখিয়ার পালং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমিমুল এহসান মানিক।

মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে তিনি ওই ঘটনা ঘটিয়েছেন। হেনস্থার শিকার শিক্ষিকা কামরুন নেছার দাবি, তিনি ধর্মীয় বিধান মতে প্রতিনিয়ত নেকাব পরেন। বছরের পর বছর ধরে নেকাব পরেই স্কুলে ক্লাস করে আসছিলেন। মঙ্গলবারও তেমন ভাবেই অনলাইন ক্লাসে লাইভ ক্লাস করেছেন। কিন্তু ক্লাস শেষে প্রধান শিক্ষক তাকে রুমে ডেকে নিয়ে নেকাব না খোলায় সহকর্মী ও অন্য লোকজনের সামনে তিরস্কার ও হেনস্থা করেন। একই সময়ে লাইভ করা ক্লাসটি স্কুলের ফেসবুক পেইজ থেকে মুছে দেন।

শিক্ষিকা কামরুন নেছার স্বামী মোহাম্মদ ইসলাম জানান, কামরুন নেছা ওই স্কুলে জয়েন্ট করার পর থেকেই প্রধান শিক্ষক আমিমুল এহসান মানিক তার বিরুদ্ধে লেগে আছেন। এমনকি স্কুলে গেলে প্রায় প্রতিনিয়তই ওই প্রধান শিক্ষক নানা ভাবে তাকে হেনস্থা ও অশ্লীল ব্যবহার করেন।

তিনি দাবি করেন, স্কুলে সুন্দর সহাবস্থানে থাকার জন্য এতদিন প্রতিবাদ না করে মানিয়ে চলার চেষ্টা করেছেন তার স্ত্রী কামরুন নেছা। অভিযোগ উঠেছে, দীর্ঘদিন ধরে ওই প্রধান শিক্ষক স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সাথে নানা ভাবে হয়রানি মূলক কাজ করে আসছিলেন। পরিচালনা কমিটির মতামত না নিয়ে নানা বিতর্কিত কর্মকান্ড করেছেন।

একাধিক সূত্র মতে, দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর বাসিন্দা এই আমিমুল এহসান মানিক ছাত্রজীবনে ইসলামি ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি পড়ালেখাও করেছেন ছাত্রশিবিরের টাকায়। অথচ এখন নিজের শিবির পরিচয় ঢাকার জন্য নাস্তিক্যবাদী আচরণ করে যাচ্ছেন।

সূত্র মতে, পালং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়টি ঐতিহ্যবাহী স্কুল হলেও আমিমুল এহসান মানিক ওই স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদানের পর থেকে নামাজের ব্যবস্থা রাখেননি। শিক্ষক-কর্মচারীরা নামাজ পড়তে চাইলে স্কুল মাঠের পশ্চিম পাশের শৌচাগারের ট্যাংকের ঢাকনার উপর দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে হয়। কোন শিক্ষিকা খালি ক্লাস রুমে নামাজ আদায় করতে চাইলে সেখানেও বাধা দেন এই প্রধান শিক্ষক। ওই স্কুলে সাড়ে ৪ হাজার ছাত্র-ছাত্রী থাকলেও নামাজ পরার জন্য কোন নামাজ ঘর কিংবা মসজিদ এখানে নেই।

শিক্ষিকা কামরুন নেছার স্বামী মোহাম্মদ ইসলাম আরও জানান, তার সহধর্মিনী ওই স্কুলে সহকারি শিক্ষিকা হিসেবে যোগদানের পর থেকে প্রধান শিক্ষক মানিক তার পেছনে পড়ে আছেন। শুরুতেই কামরুন নেছারর এমপিওভূক্তি নিয়ে টালবাহানা করেন। পরে কোভিড-১৯ এর লকডাউন চলাকালে অন্য শিক্ষিকারা স্কুলে উপস্থিত না থাকলেও আমার স্ত্রীকে স্কুলে যেতে বাধ্য করেছেন। শুধুমাত্র নেকাব পরা ও প্রধান শিক্ষকের চেম্বারে দীর্ঘ সময় ধরে বসে না থাকায় প্রতিহিংসাপরায়ন হয়ে এই অপকর্ম করে যাচ্ছেন তিনি।

তার মতে, তিনি বেশ কয়েকবার এই বিষয়ে কথা বলতে প্রধান শিক্ষকের সাথে যোগাযোগ করেছেন। স্কুলেও গেছেন বেশ কয়েকবার। কিন্তু দেখা করে আসার পর শিক্ষিকা কামরুন নেছার উপর নিপীড়ন আরও বেড়ে যায়।

মঙ্গলবারও তেমন ভাবে নেকাব পরে ক্লাস নেয়াকে অজুহাত বানিয়ে প্রধান শিক্ষক আমিমুল এহসান মানিক আবারও শিক্ষিকা কামরুন নেছাকে হেনস্থা করেছেন। তিনি একজন ধর্মপ্রাণ মুসলিম নারীর পর্দার অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছেন।

এ ব্যাপারে জানতে প্রধান শিক্ষক আমিমুল এহসান মানিকের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে তিনি তার মোবাইলটিই বন্ধ করে দেন।

এ ব্যাপারে স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি জালাল আহমদ মোবাইলে বলেন, তিনি বিষয়টি শুনেছেন। এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন।

 

Exit mobile version