পঞ্চম দফা উপজেলা নির্বাচনে রাঙামাটিতে ব্যাপক সহিংসতা : আহত ৮, আটক ২

 upazila-election-logo

ফাতেমা জান্নাত মুমু, রাঙামাটি থেকে :

রাঙামাটি শহরে ৭টি ভোট কেন্দ্রে গোলযোগ ব্যালট পেপার ছিনতাই, কেন্দ্র দখলের চেষ্টা, বিভিন্ন কেন্দ্রে আওয়ামীলীগ বিএনপি প্রার্থীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ও পুলিশের ফাঁকা গুলি বর্ষণের মধ্যে দিয়ে রাঙামাটির সদর উপজেলাসহ ৪টি উপজেলার নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার পঞ্চম দফায় অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে রাঙামাটি সদরে দিনভর ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটে। দুর্বৃত্তদের তান্ডবে শহর জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে আতংক-উত্তেজনা। প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। হামলার শিকার হয়ে ৮জন। আহতদের রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

সোমবার রাঙামাটি শহরের গোধুলি আমানত বাগ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কেন্দ্রে ২শ ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এসময় পুলিশ ৫ রাউন্ড ফাকাগুলি ছোড়ে। ঘটনায় আটক করা হয় ২জনকে। এ ঘটনায় আওয়ামীলী-বিএনপির মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় উভয় পক্ষের মোট ৮জন নেতাকর্মী আহত হয়।

সোমবার দুপুর আড়াইটার দিকে একদল দুষ্কৃতিকারী শহরের গোধুলি আমানত বাগ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হানা দিয়ে কেন্দ্র দখলেন চেষ্টা করে ২শ ব্যালট পেপার ছিনতাই করে নিয়ে যায়। এসময় ৫ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। আটক করে ২জনকে। অন্যদিকে রাঙামাটি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে জাল ভোট দেওয়াকে কেন্দ্রে আওয়ামীলীগ বিএনপির সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় আধা ঘন্টা ভোট গ্রহণ বন্ধ করে দিলেও পরে ভোট গ্রহণ স্বাভাবিক হয়ে যায়।

প্রাপ্ত অভিযোগে জানা যায়, বিভিন্ন ভোট কেন্দ্র দখল করে হামলা ও ব্যালট পেপার ছিনতাই করে দরজা বন্ধ করে সিল মেরে বাক্সে ফেলে দেয় দুর্বৃত্তরা। ওই সময় কয়েক দফায় আওয়ামী লীগ-বিএনপির সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় শহর এলাকার বেশ কিছু কেন্দ্র।

তবে জেলা রিটানিং অফিসার মোঃ রফিকুল করিম জানান, নির্বাচনে গোলযোগ নিয়ে লিখিত কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। প্রশাসনের কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু ও অবাধ ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী কঠোর অবস্থানে ছিল। তবে ৩৬ কেন্দ্রে পুন:নির্বাচনের দাবি নিয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থী মোঃ জাকির হোসেন সেলিমের পক্ষে একটি আবেদন দাখিল করা হয়েছে। কোনো কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ বা নির্বাচন স্থগিত করা হয়নি। অন্যদিকে রাঙামাটি সদর ছাড়া অপর তিন উপজেলা লংগদু, বিলাইছড়ি ও রাজস্থলীতে শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সকাল থেকে রাঙামাটি শহর এলাকায় কেন্দ্রে কেন্দ্রে দুর্বৃত্তরা তান্ডব শুরু করে। দফায় দফায় বিভিন্ন ভোট কেন্দ্র দখল ও  ব্যালট পেপার ছিনতাই ঘটনা ঘটে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শহরের শাহ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে এক প্রার্থীর সমর্থকরা ভোট কেন্দ্রে ঢুকে ১২২ ব্যালট পেপার ছিনতাই করে বাক্সে ফেলে। বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রিসাইডিং অফিসার অটন চাকমা জানান, ওই সব ব্যালটে স্বাক্ষর দেয়া হয়নি। সেগুলো বাতিল হয়ে যাবে। ভয়ভীতি প্রদর্শন করে সেগুলো ছিনতাই করা হয়েছে।

সকাল সাড়ে ১১টার দিকে শহরের কাঠালতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। পরে দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোমানা আক্তার শম্পার নেতৃত্বে প্রশাসন পরিস্থিতি সামাল দেয়। এ সময় আওয়ামী-বিএনপি ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোমানা আক্তার শম্পা জানান, প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ভোট প্রদানে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখা হয়েছে। এসব ঘটনায় নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে।
এরপর বিকালের দিকে রাঙামাটি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, রিজার্ভ বাজারের শহীদ আব্দুল আলী একাডেমি, রানী দয়াময়ী উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি কলেজ ও গৌধুলী আমানতবাগ, স্বর্ণটিলা কেন্দ্রে ভাংচুর চালিয়ে তান্ডব চালানো হয়।

এদিকে রাত ৭টার দিকে আওয়ামীলীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থীর জাকির হোসেন সেলিমের সমর্থকরা রাঙামাটি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে এসে রাস্তায় বিক্ষোভ করে। বিক্ষোভকারীরা রাঙামাটি সদর উপজেলার ভোটের ফলাফল ঘোষণা না করতে এবং মঙ্গলবারের ডাকা সকাল সন্ধ্যা হরতালের সমর্থনে শ্লোগান দেয়। বিক্ষুদ্ধ আওয়ামী সমর্থকরা এলোপাতারী ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। সেনাবাহিনীর সদস্যরা রাঙামাটি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অবস্থান নিয়ে নিরাপত্তা জোরদার করে। রাস্তায় বিক্ষুদ্ধকারীদের সরিয়ে দিতে পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা অবস্থান নেয়। বিক্ষোভকারীরাও রাস্তায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে।

পঞ্চম দফায় রাঙামাটি সদর, বিলাইছড়ি, লংগদু ও রাজস্থলী উপজেলায় ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনী সহিংসতাকে কেন্দ্র করে রাঙামাটি সদরে চরম উত্তেজনা ও থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। উত্তেজনা রুপ নেয় আওয়ামী লীগ-বিএনপি ও জেএসএস।

ইতিপূর্বে শেষ হওয়া চতুর্থ দফা নির্বাচনে ৬টি উপজেলার মধ্যে আওয়ামীলীগ ১টি, বিএনপি-১, জনসংহতি সমিতি ৩টি ও জনসংহতি সমিতি (সংস্কার পন্থী ) ১টিতে জয় লাভ করে।

আজ ৫ম দফা নির্বাচনে শেষ ৪ উপজেলায় আওয়ামীলীগ, বিএনপি ও জনসংহতি সমিতির ১৩ জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দিতা করে। বিএনপি বিলাইছড়ি উপজেলায় কোন প্রার্থী দেয়নি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন