পনের আগস্ট বাকশাল কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের সম্বর্ধনা দেয়ার কথা ছিল পার্বত্যবাসীর 

fec-image

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন অনুষ্ঠান ছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার ব্যাপারে সকল প্রস্তুতিও নেয়া হয়েছিল। কিন্তু সে অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে ভোর রাতে ঘাতকের বুলেটে বঙ্গবন্ধু স্বপরিবারে নিহত হন। বদলে যায় সমস্ত পরিবেশ, পণ্ড হয়ে যায় সকল আয়োজন। রচিত হয় ইতিহাসের এক অন্ধকারতম অধ্যায়।

তবে ঘাতকের বন্দুক গর্জে না উঠলে সে দিনটি পার্বত্যবাসীদের জন্যও অন্য রকম হতে পারত। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শুক্রবার প্রকাশিত দৈনিক ইত্তেফাকের একটি খবর থেকে তেমনটিই জানা যায়। সেদিন বিকাল সাড়ে ৫টায় রাজধানীর হোটেল পূর্বাণীতে বাকশাল কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের সম্বর্ধনা দেয়ার কথা ছিল পার্বত্যবাসীর। ঢাকায় বসবাসরত চট্টগ্রাম এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীদের পক্ষ থেকে এ সম্বর্ধনার আয়োজন করা হয়েছিল।

‘বাকশাল কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের সম্বর্ধনা’ শিরোনামে প্রকাশিত ইত্তেফাকের সংবাদে বলা হয়, “আজ অপরাহ্ন সাড়ে ৫টায় হোটেল পূর্বাণীতে বাকশাল কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের সম্বর্ধনা দেওয়া হইবে। ঢাকায় বসবাসকারী চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীরা এই সম্বর্ধনার আয়োজন করিয়াছেন। ঢাকায় অবস্থানরত চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামবাসীদের অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।”

হোটেল পূর্বাণীতে চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামবাসীদের আয়োজিত সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে কি বঙ্গবন্ধুর উপস্থিত থাকার কথা ছিল? এ প্রশ্নের জবাবে বাকশাল সদস্য এবং রাঙ্গামাটি বারের সিনিয়র আইনজীবী জ্ঞানেন্দু বিকাশ চাকমা শুক্রবার (১৪ আগস্ট ২০২০) পার্বত্যনিউজকে বলেন, ‘এতদিন পর আর সে ব্যাপারে কিছু মনে পড়ছে না।’

বঙ্গবন্ধুর আর্মি এডিসি ছিলেন ক্যাপ্টেন শরীফ আজিজ; বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ আজিজ শুক্রবার (১৪ আগস্ট ২০২০) পার্বত্যনিউজকে বলেন, ‘হোটেল পূর্বাণীর প্রোগ্রামটার কথা মনে করতে পারছি না। তাছাড়া সেদিনটা আমার জীবনে ভয়ঙ্করতম অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছে। সে অবস্থায় অন্য কিছুর কথা মনে রাখাও কঠিন ছিল। আমি ছিলাম বঙ্গভবনে, ভোরে ধানমন্ডি ও মিরপুর রোডের দিক থেকে গুলির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে বলে খবর পাই। খবর পেয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাশহুরুল হক এবং অপর এডিসি লে. রাব্বানীসহ ছুটে গিয়েছিলাম ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে। সেখানে গিয়ে আমরা ঘাতকদের হাতে বন্দি হয়ে যাই।’

দৈনিক ইত্তেফাকের খবর অনুযায়ী, হোটেল পূর্বাণীতে ১৫ আগস্ট বিকালের অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতির ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া না গেলেও সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেয়া যায় না। কারণ, সে সময় বঙ্গবন্ধুকে বাদ দিয়ে বাকশালের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের সম্বর্ধনা দেওয়া হবে, এমনটা ভাবাই যায় না। তবে সে সব সম্ভাবনাই মুছে দেয় ঘাতকদের নির্মম বুলেট।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন