পর্যটন নগরী রাঙামাটি সেজেছে কৃষ্ণচূড়ায়
পাহাড়ি জেলা রাঙামাটির আকাঁ-বাঁকা সড়কগুলো এখন কৃষ্ণচূড়ার লালে রঙিন হয়ে উঠেছে। প্রতি বছর মে-জুন মাসে এমন রূপের দেখা মেলে জেলা শহরে। এই যেন লাল গালিচার স্বাদরে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে অতিথিদের। কাঠফাটা জ্যৈষ্ঠ তীব্র গরমে ক্লান্তি দূর করতে ফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ নয়নে কৃষচূড়ায় ঠাই নেয় পথচারীরা। প্রাকৃতিক অপরূপ শহর রাঙামাটিকে কৃষচূড়া আলাদাভাবে দৃষ্টিনন্দন করে তুলেছে।
রাঙামাটি শহরের ভেদভেদী, টিএন্ডটি এলাকা, কাঠালতলী, রিজার্ভবাজার, ডিসি বাংলো, ফিসারী বাঁধ এলাকায় কৃষ্ণচূড়ার দেখা মেলে। মে-জুন মাসে লাল কৃষ্ণচূড়ায় ওই স্থানগুলো রঙিন হয়ে উঠে। তবে কৃষ্ণচূড়া বেশি দেখা যায় রাঙামাটি শহরের ফিসারী বাঁধ এলাকায়। স্নিগ্ধ সকাল, তপ্ত দুপুর কিংবা গৌধূলী বেলায় এর সৌন্দর্য অবলোকন করে পথচারীরা। জেলার বিভিন্ন স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের প্রাঙ্গণ সাজিয়ে নিয়েছেন কৃষ্ণচূড়ায়।
রাঙামাটিতে কী পরিমাণ কৃষ্ণচূড়া আছে তার ঠিক কোন তথ্য, উপাত্ত না থাকলেও স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, অতীতে জেলা শহরের বাঁকা সড়কগুলোতে কয়েকহাজার কৃষ্ণচূড়া থাকলেও সময় গড়ার সাথে সাথে তা এখন শতাধিক সংখ্যায় পরিণত হয়েছে। ভূমিধ্বস এবং সড়কের উন্নয়নমূলক কাজ করার সময় অনেক কাজ কাটা হয়েছে। যে কারণে শহরের সৌন্দর্য কিছুটা হলেও শ্রীহিন হয়েছে।
কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন,-
‘কৃষ্ণচূড়ার রাঙা মঞ্জুরি কর্ণে
আমি ভুবন ভোলাতে আসি গন্ধে ও বর্ণে’
বৃক্ষ প্রেমী স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মী দীপ্ত হান্নান বলেন, ‘প্রত্যেক বছর মে, জুন মাসে কৃষ্ণচূড়া গাছগুলো ফুলে ফুলে ভরে যায়। অবসর ফেলে নিজের বাচ্চাদের নিয়ে কৃষ্ণচূড়ার নিচে আশ্রয় নিয়। বাচ্চারা লাল ফুলগুলো নিয়ে খেলা করে মনের আনন্দে মেতে উঠে; যা সত্যি উপভোগ্য।’
এ বৃক্ষ প্রেমী আরও বলেন- ‘দুঃখ লাগছে মনে, শহরের পরিধি বাড়ানো, অবৈধ জবর দখল এবং অবৈধ একটি চক্র প্রাকৃতির সৌন্দর্য মণ্ডিত গাছগুলো কেটে সাবাড় করে দিচ্ছে। শহরের সৌন্দর্য দিনদিন হারিয়ে যাচ্ছে। কারণ, গাছগুলো শহরের সৌন্দর্য যেমন বৃদ্ধি করছে তেমনি পর্যটকরা এসে কৃষ্ণচূড়ায় ছায়ায় সেলফি (ছবি) তোলে মনের আনন্দে। তাই স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অনুরোধ শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধিকল্পে এখনি কৃষ্ণচূড়া গাছগুলো সংরক্ষণ করা অত্যন্ত জরুরি।’
আরেক বৃক্ষ প্রেমী মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘আমি নিজে অবসর সময়ে বাগান করি। বৃক্ষ প্রেমে আমি মজে আছি সেই ছোটবেলা থেকেই। তাই ছোটকাল থেকেই আমার বৃক্ষের সাথে বসবাস। বাড়িতে যেমন বাগান করেছি। তেমনি ব্যবসার ফাঁকে সময় পেলে বাচ্চা-স্ত্রীকে নিয়ে এসময়ে কৃষ্ণচূড়ার ছায়ায় সময় কাটায়।’
রাঙামাটি পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ড কমিশনার পুলক দে বলেন, ‘আমরা ছোটকাল থেকে দেখে আসছি রাঙামাটি শহরকে আগে সৌন্দর্যমণ্ডিত করতো কৃষ্ণচূড়া। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় সেইদিন আর নেই। যে যেদিকে পারছে অগাচরে অবৈধভাবে গাছ কর্তন করছে।’
এ জনপ্রতিনিধি আরও বলেন, ‘কৃষ্ণচূড়া এসময়ে রাঙামাটি শহরকে রাঙিয়ে তোলে। ভীষন্ন মন পুলকিত হয় ফুলফোটা স্থানে গিয়ে সময় পার করে। ঝড়ে পড়া ফুলগুলো পাকা সড়কে এমন ভাবে পড়ে থাকে মনে হয় কেউ পুরো শহরবাসীকে লাল গালিচায় সংবর্ধনা দিচ্ছে। পরিকল্পনা নিয়ে শহরের বিভিন্ন স্থানে কৃষ্ণচূড়া লাগানো যায় তাহলে শহরের সৌন্দর্য একদিকে যেমন বৃদ্ধি পাবে অন্যদিকে তেমন পথচারীরা ছায়া পাবে।’
তবে অর্থনৈতিক দিক থেকে কৃষ্ণচূড়া লাভজনক কোন গাছ না হলেও এ গাছ দ্রুত বর্ধনশীল হওয়ায় জ্বালানি কাঠ হিসেবে অধিক ব্যবহৃত হয়। ছায়া প্রদানকারী ও শোভাবর্ধনকারী গাছ হিসেবে এর বহুল ব্যবহার রয়েছে। তাই অবৈধভাবে গাছটিকে না কেটে এর সংরক্ষণের জন্য জোর দাবি জানান স্থানীয়রা।