২৯টি প্রকল্পের উদ্বোধন, ৪ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন

পর্যটন রাজধানী কক্সবাজারে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী

fec-image

সরকার প্রধানের আগমনে পুরো কক্সবাজারে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল বিকাল থেকে বিভিন্ন উপজেলার লোকজন শহরে ঢুকে গেছে। স্বাগত মিছিল করেছে। প্রধানমন্ত্রীকে অভিবাদন জানিয়ে পৌর এলাকায় খণ্ড খণ্ড মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। দৃষ্টিনন্দন ব্যানার, ফেস্টুনে ভরে গেছে শহরের অলিগলি।

কক্সবাজারে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সমুদ্র তীরবর্তী ইনানীতে বাংলাদেশসহ ২৮টি দেশের নৌবাহিনীর অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া চার দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক ফ্লিট রিভিউয়ের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন তিনি।

বুধবার (৭ ডিসেম্বর) সকালে এ আয়োজনে যোগ দিচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ভারতসহ ২৮ দেশের নৌবাহিনীর সদস্যরা।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইতিবাচক সামরিক ভাবমূর্তি ও সক্ষমতার নতুন বার্তা দিতে এবার বাংলাদেশ আয়োজন করেছে ইন্টারন্যাশনাল ফ্লিট রিভিউ-২০২২। বিভিন্ন দেশ থেকে আসা যুদ্ধজাহাজ নিয়ে প্রথমবার এ আয়োজনে অংশ নিচ্ছে তারা।

ওই অনুষ্ঠান শেষে দুপুর ২টায় কক্সবাজারের শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। জনসভা মঞ্চ থেকে তিনি কক্সবাজারে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অধীনে ১৯৬৩.৮৬ কোটি টাকার ২৯টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং চারটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।

প্রধানমন্ত্রীর সফরসূচিঃ
সময়সূচির মধ্যে থাকছে, আজ বুধবার সকাল ৮ঃ২০ গণভবন হতে সড়ক পথে বিমানবন্দরের উদ্দেশ্য যাত্রা। ৮ঃ৩০ মিনিটে হেলিকপ্টার যোগে কক্সবাজার ইনানীর উদ্দেশ্য যাত্রা। ১০ টায় ইনানী কক্সবাজারে নির্মিত হেলিপ্যাডে অবতরণ এবং নৌবাহিনীর অনুষ্ঠানে যোগদান। ১ঃ৩০ মিনিটে নামাজ ও মধ্যাহ্ন বিরতি শেষে বেলা আড়াইটার দিকে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে যাত্রা ও বেলা আড়াইটার দিকে জেলার বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন, মোনাজাত শেষে ৩টার সময় জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় উপস্থিত হবেন। বিকেলে ৫টার দিকে কক্সবাজার আন্তজার্তিক বিমানবন্দর হতে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিবেন।

দীর্ঘ পাঁচ বছর পর আজ কক্সবাজারে আসছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সরকার প্রধান শেখ হাসিনা। পাঁচ বছর আগে ২০১৭ সালের ২২ ডিসেম্বর তিনি উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে এসেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর আগমনে পুরো জেলা সেজেছে বর্ণিল সাজে। বরণ করতে প্রস্তুত জেলাবাসী। এই দিন জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ভাষণ দেবেন। এর আগে তিনি ১ হাজার ৩৯২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ২৯ প্রকল্পের উদ্বোধন এবং একই সঙ্গে ৫ হাজার ৭শত ১ কোটি ৪৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। মোট প্রকল্প ৩৩টি। গত একমাস আগে থেকে প্রধানমন্ত্রীর জনসভা সফল করতে মাঠে নেমেছেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। উপজেলা পর্যায়েও চলছে প্রচারণা। প্রচারণায় কক্সবাজারে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে দেওয়া তিনটি বড় মেগা প্রকল্প ও ৭৭টি ছোট-বড় প্রকল্পের চিত্র তুলে ধরা হচ্ছে। সবমিলিয়ে জেলায় প্রায় সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলমান।

প্রধানমন্ত্রী যেসব প্রকল্প উদ্বোধন করবেনঃ
জেলা প্রশাসনের কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তালিকায় উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত ২৯ প্রকল্পগুলো হলো- কক্সবাজার গণপূর্ত উদ্যান, বাহারছড়া বীর মুক্তিযোদ্ধা মাঠ, কুতুবদিয়া ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ভবন, পেকুয়া উপজেলা ভূমি অফিস ভবন, কক্সবাজার জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় ভবন, শেখ হাসিনা জোয়ারিয়ানালা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের চারতলা একাডেমিক ভবন, আবদুল মাবুদ চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের চারতলা একাডেমিক ভবন, মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের চার তলা একাডেমিক ভবন, কক্সবাজার জেলার লিংক রোড-লাবনী মোড় সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ, রামু-ফতেখাঁরকুল-মরিচ্যা জাতীয় মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ, টেকনাফ-শাহপরীর দ্বীপ জেলা মহাসড়কের হাড়িয়াখালী থেকে শাহপরীরদ্বীপ অংশ পুনর্নির্মাণ, প্রশস্তকরণ এবং শক্তিশালীকরণ, বাঁকখালী নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ; নিষ্কাশন; সেচ ও ড্রেজিং প্রকল্প (১ম পর্যায়), শাহপরীরদ্বীপে সী ডাইক অংশে বাঁধ পুনঃনির্মাণ ও প্রতিরক্ষা কাজ, ক্ষতিগ্রস্ত পোল্ডার সমূহের পুর্নবাসন প্রকল্প, রামু কলঘর বাজার-রাজারকুল ইউপি সড়কে বাঁকখালী নদীর উপর ৩৯৯ মিটার দীর্ঘ সাংসদ ও রাষ্ট্রদূত ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী সেতু, কক্সবাজার জেলায় নবনির্মিত ৬ টি ইউনিয়ন ভূমি অফিস ভবন, ৪টি উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন (রামু, টেকনাফ, মহেশখালী ও উখিয়া), কক্সবাজার পৌরসভার এয়ারপোর্ট রোড আরসিসিকরণ ও অন্যান্য, শহিদ সরণি আরসিসিকরণ ও অন্যান্য, বীর শ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়াম সড়ক আরসিসিকরণ ও অন্যান্য, নাজিরারটেক শুটকি মহাল সড়ক আরসিসিকরণ ও অন্যান্য, টেকপাড়া সড়ক আরসিসিকরণ ও অন্যান্য, সী বীচ রোড আরসিসিকরণ ও অন্যান্য, মুক্তিযোদ্ধা সরণি আরসিসিকরণ ও অন্যান্য, সৈকত-স্মরণ আবাসিক এলাকা সড়ক আরসিসিকরণ ও অন্যান্য। এসব প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা।

৪টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনঃ
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের জন্য থাকা ৪ প্রকল্প হলো, বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট (২য় পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্প, কুতুবদিয়া উপজেলাধীন ধুরুং জিসি মিরাখালী সড়কে ধুরুংঘাটে ১৫৩ দশমিক ২৫ মিটার জেটি এবং আকবর বলি ঘাটে ১৫৩ দশমিক ২৫ মিটার জেটি নির্মাণ, মহেশখালী উপজেলাধীন মহেশখালী গোরকঘাটা ঘাটে জেটি নির্মাণ, বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্ত নিরাপত্তা উন্নত করার জন্য উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় নাফ নদী বরাবর পোল্ডারসমূহের পুনর্বাসন প্রকল্প।

প্রধানমন্ত্রী নৌ মহড়ায় অংশগ্রহণঃ
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের ইনানীতে আজ সকালে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক ফ্লিট রিভিউ (আইএফআর)-২০২২। তাতে অংশ নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, ভারতসহ বিশ্বের ২৮টি দেশ। মহড়াতে ৪৩ টি যুদ্ধজাহাজ, ২টি বিএন এমপিএ ও ৪টি বিএন হেলিকপ্টার থাকছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থেকে আন্তর্জাতিক নৌশক্তি প্রদর্শনের এই মহড়া উদ্বোধন করবেন। জেটির উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশসহ অংশগ্রহণকারী চীন, ভারত, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজের অংশগ্রহণে আয়োজিত ফ্লিট রিভিউ পরিদর্শন করবেন।

পুলিশ সুপারের বক্তব্যঃ
কক্সবাজারে প্রধান মন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে চার স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বুধবার মেরিন ড্রাইভের উখিয়ার ইনানী এলাকায় আন্তর্জাতিক ফ্লিট রিভিউর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। এরপর তিনি কক্সবাজার শহীদ শেখ কামাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বিশাল জনসভায় ভাষণ দেবেন। অনুষ্ঠানস্থলদুটি ঘিরে কক্সবাজার জেলা পুলিশ চার স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেছে। পুলিশের সদস্যরা পোশাকে, সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করবেন। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হয়েছে। সঙ্গে রয়েছে কঠোর গোয়েন্দা নজরদারি। পুলিশের চার হাজারেরও বেশি সদস্যের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট কাজ করছে।

জেলা প্রশাসকের বক্তব্যঃ
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মামুনুর রশীদ জানান, আধুনিক ও পরিকল্পিত পর্যটন নগরী হিসেবে কক্সবাজারকে গড়ে তুলতে মহাপরিকল্পনায় ১০টি মেগা প্রকল্পসহ ছোটবড় ৭২টি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। এরই মধ্যে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক, খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্প, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ, লিংকরোড় থেকে হলিডে মোড় সড়ক এবং মহেশখালী ডিজিটাল আইল্যান্ডে সম্পন্ন হওয়া প্রকল্পের সুবিধা ভোগ করছে জনগণ। চলমান প্রকল্প থেকে আরও ২৮টি এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। সমাপ্ত হওয়ায় এসব প্রকল্প আজ ৭ ডিসেম্বর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া আরও কিছু প্রকল্পের কথা বলতে পারেন।

আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ যা বলছেনঃ
সরকার জনগনের জন্য কি করছে, দেশের উন্নয়নের অগ্রগতি কি, সবকিছু জনগনের সামনে নেত্রী আজ তুলে ধরবেন। দেশের সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ হয়েছে কক্সবাজারে। যেখানে দেশের বড় বড় মেগা প্রকল্পের ৩টি হচ্ছে এখানে। কক্সবাজারকে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে তিনি ইতোমধ্যে কক্সবাজারের বিভিন্ন উন্নয়নসহ ব্যাপক মেঘা প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। মেঘা প্রকল্পের বিভিন্ন প্রকল্প ইতোমধ্যে দৃশ্যমান এবং দ্রুত উক্ত মেঘা প্রকল্প সমূহ উৎপাদানে যেতে সক্ষম হবে।

প্রধানমন্ত্রীর কাছে জেলাবাসীর ১২ দাবিঃ
আগামী ৫ বছরে পাল্টে যাবে যেন কক্সবাজার। জেলাজু্ড়ে চলছে উন্নয়নের মহাযজ্ঞ। এই দাবির মধ্যে আছে, কক্সবাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ব বিদ্যালয়, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের সংযুক্তিকরণ, কক্সবাজারের সাথে মহেশখালী উপজেলার সংযোগ সেতু ও বাঁকখালী নদীর তলদেশ দিয়ে ট্যানেল নির্মাণ, কুতুবদিয়া মগনামার মধ্যে ফেরি সার্ভিস চালুকরণ, কক্সবাজার পর্যটন গবেষণা ইনস্টিটিউট, চার লেনের মেরিন ড্রাইভ সড়ক, ছয় লেনের কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহসড়ক, কক্সবাজার সিটি কর্পোরেশন, কক্সবাজার সিটি কলেজকে সরকারিকরণ, যুগ যুগ ধরে ঝিনুক ব্যবসার সাথে জড়িত উচ্ছেদকৃত ব্যবসায়ীদের পুণঃবাসন ও স্থায়ী আধুনিক ঝিনুক মার্কেট নির্মাণসহ অনেক প্রকল্প।

নৌকার আদলে দৃষ্টিনন্দন মঞ্চঃ
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, জনসভার স্থল শেখ কামাল স্টেডিয়ামে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী দলীয় প্রতীক নৌকা আকৃতির তিন হাজার ৫’শ বর্গফুটের দৃষ্টিনন্দন মঞ্চ তৈরি করা হবে যাতে অন্তত ২০০ জনের বসার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পঃ
জেলায় প্রায় সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। তারমধ্যে বাস্তবায়িত হচ্ছে কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্প, গভীর সমুদ্রবন্দর, সাবমেরিন ঘাঁটি, মেডিকেল কলেজ, সাবরাং ইকো ট্যুরিজম, বিকেএসপির মাঠ ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ ৭২টি প্রকল্প। এসব প্রকল্প শেষ হলে বদলে যাবে কক্সবাজারের অর্থনীতি। পর্যটনের আসবে আমূল পরিবর্তন। সেই বদলে গতি আসবে দেশের অর্থনীতিতেও। স্থানীয়রা বলছে, স্বাধীনতার বহু বছর পর কক্সবাজারকে ঢেলে সাজাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে কক্সবাজারের চেহারা পাল্টে যাবে। কর্মসংস্থান হবে লাখো লোকের।

মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প ও গভীর সমুদ্রবন্দরঃ
আগামী ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে প্রথম ইউনিট ৬০০ মেগাওয়াট এবং একই বছরের জুলাইতে দ্বিতীয় ইউনিট আরও ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৮৮ শতাংশ কাজ শেষ কাজ শেষের পথে। এ পর্যন্ত ১১০টির মতো বড় জাহাজ ভিড়ছে। কয়েকদিন আগেও বড় একটি এসেছে যেখান মালামাল আপলোড করা হচ্ছে। যেখানে দিনেরাতে কাজ করছেন ১০৪১০ শ্রমিক। ২০১৭ সালের আগস্টে মূল প্রকল্পের শুরু হয়। কয়লাবিদ্যুৎ ও গভীর সমুদ্র বন্দরের মোট আয়তন ১ দশমিক ৬৮ একর। মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫১ হাজার ৮’শ ৫৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। শুরুতে মূল প্রকল্প ব্যয় ছিল ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। পরে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে প্রায় ৫১,৮৫৪.৮৮ কোটি টাকা হয়েছে।

রেললাইন প্রকল্পঃ
১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার এবং রামু-ঘুনধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ কাজ চলমান। কাজের অগ্রগতি অনেকদূর এগিয়েছে।

বিমান বন্দর আধুনিকায়নঃ
২ হাজার ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়নকাজ চলমান রয়েছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘ রানওয়েটি হতে যাচ্ছে কক্সবাজার বিমানবন্দরের। আর এই রানওয়ের একটি অংশ থাকবে বঙ্গোপসাগরের ভেতরে। নদীগর্ভে আরও ১৭০০ ফুট রানওয়ে বর্ধিতকরণের লক্ষ্যে ২০২১ সালের ২৯ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্প কাজের শুভ উদ্বোধন করেন। ইতিমধ্যে ৪২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আগামী ২০২৩ সালের অক্টোবরে এ প্রকল্প কাজ শেষ হবে বলে তিনি আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

আরও থাকছেঃ
বাঁকখালী নদীর ওপর ৫৯৫ মিটার পিসি বক্স গার্ডার ব্রিজসহ ২.৩০ কিমি অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণকাজ চলছে। নির্মিত হয়েছে ৪.৭৭ কিমি বাঁধ। এ ছাড়া অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ১১টি বাস ভবন, ৫৫০ মিটারের ১টি ও ৭০০ মিটারের ৩টি, ৯৫টি স্কুল কাম সাইক্লেন সেন্টার, ১৯০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন ১৮টি ভূমি অফিস নির্মাণ, ৪টি মুক্তিযোদ্ধা মেমোরিয়াল জাদুঘর, ১৯৮টি সর্বজনীন সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়ন, ২৭টি পুকুর ও খাল উন্নয়ন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অভ্যন্তরীণ ৫৩ কিমি সড়ক ও ৫০ কিমি সংযোগ সড়ক, ৩টি বহুমুখী সেবাকেন্দ্র, ৪টি ফুড ডিস্ট্রিবিউশন সেন্টার, ৯টি ফায়ার সিসেস্টম ওয়ার হাউজ, ৩টি হাটবাজার, ২.৫০ কিমি ড্রেন, ১০ কিমি ওয়াটারবডি রিটেনশন ক্যানেল, ৪ কিমি প্রটেকটিভ ওয়ার্ক ও জেলা ফায়ার স্টেশন ভবন নির্মাণ এবং ১ হাজার ৭২৫ কিমি গ্রামীণ সড়ক মেরামত ও সংরক্ষণ করা হয়েছে। তা ছাড়া ৭৮৯ কিমি বিটুমিনাস কার্পেটিং সড়ক, ১ হাজার ২০০ কিমি এইচবিবি সড়ক নির্মাণ ও ৫২৫ কিমি আরসিসি সড়ক নির্মাণকাজ চলছে। জেলা প্রশাসনের সূত্র অনুযায়ী এ তথ্য।

৮টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলঃ
বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য কক্সবাজার জেলার ৮টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রকল্পগুলো হলো টেকনাফের সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক, নাফ ট্যুরিজম পার্ক, কক্সবাজার বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, মহেশখালী অর্থনৈতিক অঞ্চল, মহেশখালীর কালারমারছড়া অর্থনৈতিক অঞ্চল, মহেশখালীর ধলঘাটাতে অর্থনৈতিক অঞ্চল ও মহেশখালীর ঘটিভাঙ্গা-সোনাদিয়ায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল।

মুজিব শতবর্ষ ঘর উপহারঃ
মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে জেলার ৪ হাজার ৭৭২টি গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবার চিহ্নিত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ২ হাজার ৮৪৬ ভূমিহীনকে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এবং ৭৯৪টি পরিবারের গৃহ নির্মাণকাজ চলছে।

কক্সবাজার জেলা ২৫০ শয্যার হাসপাতাল আধুনিকায়নঃ
কক্সবাজার জেলা ২৫০ শয্যার হাসপাতালকে অত্যাধুনিক হাসপাতাল হিসেবে বিনির্মাণ করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে এই সরকারের আমলে আধুনিক বহির্বিভাগ ভবন, ১০ হাজার লিটার অক্সিজেনপ্ল্যান্ট স্থাপন, ১০ শয্যার পূর্ণাঙ্গ ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) প্রতিষ্ঠা, ৬৫ বেডের অত্যাধুনিক শেখ রাসেল স্ক্যানো, একটি আধুনিক মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং ১০ শয্যার ডায়ালাইসিস ইউনিট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের ১৪ বছরে স্বাস্থ্য বিভাগের আওতায় বেশ কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। এর মধ্যে ৫১টি নতুন কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করা হয়েছে। ১৪টি কমিউনিটি ক্লিনিক পুনর্নির্মাণ করা হয় চকরিয়া এবং পেকুয়ায়।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কক্সবাজার, প্রধানমন্ত্রী
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন