parbattanews

পাউবো’র বেড়িবাঁধ ভেঙে নোনা পানিতে তলিয়ে গেছে ৩৬০ একর ধান

কক্সবাজারের চকরিয়ায় তলিয়াঘোনা এলাকায় পাউবো’র বেড়িবাঁধ ভেঙে নোনা পানিতে তলিয়ে গেছে প্রায় ৩৬০ একর জমির ধান। গত সোমবার ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রবল জোয়ারে পানিতে উপজেলার খুটাখালী ইউনিয়নের বহলতলী মৌজার তলিয়াঘোনাস্থ মেম্বার ফখরুল ইসলামের নিয়ন্ত্রাধীন চিংড়ি ঘেরের পলবোট পয়েন্টের বাঁধ ভেঙে এ ক্ষতির সম্মুখীন হয় কৃষকেরা। এতে পানি ঢুকে প্রায় ৩৬০ একর কানি জমির আধাপাকা ধান তলিয়ে যায়। ফলে ডুবে যাওয়া পাকা-আধপাকা ধান নিয়ে বর্তমানে দিশেহারা স্থানীয় ৪ শতাধিক কৃষক।

জানা যায়, গত সোমবার সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় চিত্রাংয়ের প্রভাবে অস্বাভাবিকভাবে নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফলে ফকরু মেম্বারের চিংড়ি ঘেরের পলবোট পয়েন্টের বাঁধ ভেঙে প্রবল বেগে নোনা পানি ঢুকতে শুরু করে।

স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, ওই পয়েন্ট নড়বড়ে অবস্থায় ছিল। ঘের সংশ্লিষ্টদের অনেকবার বলা হয়েছে, তারা নজর দেয়নি। এমনকি বাঁধ ভেঙে যাওয়ার তিনদিন অতিবাহিত হলেও বাঁধ সংস্কারে কালক্ষেপণ করে। তারা এ ঘটনায় চকরিয়া ইউএনও’র কাছে নালিশি অভিযোগ করবেন বলে জানান।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা হলেন, চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী ইউনিয়নের মো. শাহজাহান, আবু ছৈয়দ, কুতুবদিয়া পাড়ার আরিফুল ইসলাম, নুরুল হক, চারিঘোনা গ্রামের মো. ইসলাম, কুতুবদিয়া পাড়ার মো. ছৈয়দ, কামাল উদ্দীন, চেয়ারম্যান পাড়ার নুরুল হাকিম, আমান উদ্দীন, নুর আহমদ, শাহাব উদ্দীন, মুজিবুর রহমান, মো. ছাবের, মো. শাহিন, লুতু মিয়া, আবু ছিদ্দিক, জাফর আলম, মো. ছলিম, কোরবান আলী ও নেজাম উদ্দীন।

স্থানীয় কৃষক মোহাম্মদ কামাল উদ্দীন জানান, তিনি তলিয়াঘোনায় সাড়ে ৩ একর জমিতে ধান লাগিয়েছিলেন। ফকরু মেম্বারের চিংড়ি ঘেরের পলবোট ও বাঁধ ভেঙে তার সমস্ত জমির ধান তলিয়ে গেছে। কাঁচা ধানগুলো পাকা হওয়ার আগেই আমার সব শেষ হয়ে গেল।

ইউনিয়নের স্কুলপাড়া গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ শাহজান বলেন, আমার প্রায় ৫ একরসহ মোট ৩৬০ একর জমির ধান নোনা পানিতে তলিয়ে গেল চোখের পলকে।

ডুলাহাজারা ইউপি মেম্বার ও চিংড়ি ঘেরচাষি ফখরুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ওই চিংড়ি ঘের করে আসছি। বিগত সময়ে এমনতর ঘটনা ঘটেনি। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে মূলত ঘেরের বেশ কয়েকটি পয়েন্ট ভেঙে নোনা পানি ঢুকেছে। তাৎক্ষণিকভাবে লাখ টাকা ব্যয় করে শ্রমিক দিয়ে ভাঙা বাঁধ সংস্কার করেছি। আমি নিজেও ক্ষতিগ্রস্ত, ও ঘোনায় আমার প্রায় সাড়ে ৩ একর জমির ধান তলিয়ে গেছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আবদুল আওয়াল বলেন, ‘নদীতে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধির ফলে চিংড়ি ঘেরের পলবোট ও বাঁধ ভেঙে ৫ গ্রামের কৃষকের অনেক বিঘা জমির ধান পানিতে ডুবে নষ্ট হয়েছে।

জানতে চাইলে চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এসএম নাসিম হোসেন বলেন, ‘খুটাখালীতে বাঁধ ভেঙে ধানি জমি প্লাবিত হওয়ার বিষয়টি কেউ বলেনি। আপনার মাধ্যমে জানতে পেরেছি। ফলে এখানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ কেটে যারা চিংড়ি ঘেরের পানি নিষ্কাশন করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। যে বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করছে সেটি সরজমিন দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে ‘

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান বলেন, ‘তলিয়াঘোনার বাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্প। নদীতে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বাঁধটি ভেঙে গেছে। আমরা ক্ষতির পরিমাণ ও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করব। পরবর্তীতে সরকারি কোন সহযোগিতা এলে তা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের দেওয়া হবে।’

Exit mobile version