কাজের সন্ধানে গিয়ে...

পাকিস্তানে কারাবাস শেষে ৩৫ বছর পর ফিরল মুনাফ

fec-image

খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি উপজেলার যোগ্যাছোলার ফকির টিলার মো. করিম বক্সের ৩৫ বছরের টগবগে যুবক মুনাফ। পিতা-মাতা, ৪ বোন, ৬ ভাইয়ের একক পরিবারের অভাবী সংসার। স্ত্রী, ১ ছেলে, ১ মেয়েকে রেখে ১৯৮৭ সালে চোরাই পথে কর্মের সন্ধানে পাড়ি জমান প্রতিবেশি দেশ ভারতে। সেখানে স্থায়ী কর্ম না পেয়ে এক বছর পর আদমবেপারীর খপ্পরে পড়ে পাড়ি জমান পাকিস্তানের করাচি শহরে। না সেখানেও ভাগ্য তাকে সুপথ দেখায়নি! কিছুদিন যেতে না যেতে অবৈধ অনুপ্রবেশ আইনে তাকে জেলে যেতে হয়েছে কয়েকবার। দেশে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা তখন উন্নত না থাকায় জীবনের বিভীষিকাময় কাহিনী বা ঘটনাগুলো পরিবারে জানানো সুযোগও ছিল না মুনাফের! এভাবে এক বার জেল, এক বার বাইরে থেকে জীবনের ৩৫ টি বছর কেটে গেছে অকাতরে৷ নিঃসঙ্গতায়!

অবশেষে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির পারিবারিক যোগাযোগ পুন:স্থাপন (আরএফএল) বিভাগ, সংগঠনটির খাগড়াছড়ি ব্রাঞ্চ ও মানিকছড়ি ইউনিটের সহযোগিতায় দীর্ঘ ৩৫ বছর পর পাকিস্তানের কারাগার থেকে বাড়িতে ফিরে আসার সুযোগ পেয়েছেন খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলা ৩ নং যোগ্যছলা ইউনিয়নের ফকির টিলা এলাকার বাসিন্দা আব্দুল মুনাফ (৭০)।

মঙ্গলবার (২৮ জুন) সকালে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির পারিবারিক যোগাযোগ পুন:স্থাপন (আরএফএল) বিভাগ ও সদর দপ্তরের সহযোগিতায় একটি ফ্লাইটে বাংলাদেশে ফিরেন মো. আব্দুল মুনাফ (৭০)। পরে সকল কার্যক্রম শেষে গত ২৯ জুন বুধবার বিকেলে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির জুনিয়র সহকারী পরিচালক এস এম জাহিদুর রহমান ও আরএফএল বিভাগের খাগড়াছড়ি সদস্য আল আমিন, মানিকছড়ি ইউনিটের যুব প্রধান থোয়াই অংপ্রু মারমা ও আবু জাফরসহ একটি প্রতিনিধি দল তাকে (মুনাফ) পরিবারের কাছে পৌঁছে দেন। দীর্ঘ ৩৫ বছর পর বাড়ি ফিরে আসায় বয়োঃবৃদ্ধ স্ত্রী ও সংসারিক কন্যা ও ভাই বোনেরা আনন্দে আত্মহারা! এ সময় মুনাফের স্ত্রী ও একমাত্র কন্যা আবেগাপ্লুত হওয়ায় কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেন।

বড় ভাই মো. আবদুল জব্বার সর্দার জানান, প্রায় ৩ যুগ আগে আমাদের পরিবারে আয়-রোজগার কম ছিল। ফলে পরিবারের আয়ের কথা রেখে একদিন আমার ভাই মুনাফ ভারতে যান। এর পর নিরুদ্দেশ! ভাইকে ফিরে পেতে অনেক চেষ্টা, খোঁজ খবর নিয়েও খোঁজ পাইনি। ফলে আমরা ভাইয়ের, স্ত্রী তাঁর স্বামীর এবং পুত্র-কন্যা তাঁদের বাবার আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন।

কিন্তু সম্প্রতি বিশ্ব মানবিক সংগঠক রেড ক্রিসেন্টের পারিবারিক যোগাযোগ পুন:স্থাপন বিভাগের কারাবন্দি অনুসন্ধানে পাকিস্তানের একটি কারাগারে খোঁজ মেলে আমার ভাই আব্দুল মুনাফের! পরে সংগঠনটির সদর দপ্তর, পাকিস্তান রেড ক্রিসেন্ট ও ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্যা রেড ক্রস (আইসিআরসি)’র সহযোগিতায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে আমাদের কাছে হস্তান্তর করেন। আমরা ভাইকে ফিরে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা। রেড ক্রিসেন্টের সকল সদস্যের প্রতি আমরা চিরকৃতজ্ঞ।

পরিবারে ফিরে এসে মো. আব্দুল মুনাফ জানান, দীর্ঘ ৩৫ বছর আমি পাকিস্তানে অবস্থান করি এবং সেখানে প্রায় ১৭ বছর আমি বিভিন্ন কারণে কারাবরণ করি। কারাগারে থাকা অবস্থায় রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সহযোগিতায় আমি মুক্ত হয়ে দেশে ফিরতে পেরেছি। আমার স্ত্রী ও দুই ছেলে-মেয়েকে কাছে পেয়েছি। আমি সংগঠনের সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

এলাকার টগবগে যুবক এখন বয়োঃবৃদ্ধ। দীর্ঘ ৩৫ বছর পর মুনাফ ফিরে আসার খবরে তাকে একনজর দেখতে বাড়িতে ভীড় করছেন স্বজন ও উৎসুক জনতা। রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির আরএফএল বিভাগের জুনিয়র সহকারী পরিচালক এসএম জাহিদুর রহমান জানান, মো. আব্দুল মুনাফকে বিমানযোগে পাকিস্তান থেকে প্রথমে তুরস্ক এয়ারলাইন্স হয়ে বাংলাদেশে আনা হয়। তাকে পরিবারের কাছে হস্তান্তরের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি।

তাকে পরিবারের কাছে হস্তান্তরকালে রেড ক্রিসেন্টের খাগড়াছড়ি জেলা আরএফএল টীমের সদস্য মোহাম্মদ আল আমিন, মানিকছড়ি উপজেলা যুব রেড ক্রিসেন্টের সাবেক যুব প্রধান মিন্টু মারমা, দলনেতা থোয়াই অং প্রু মারমা, যুব সদস্য আবু জাফরসহ যুব রেড ক্রিসেন্ট সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন