parbattanews

পানছড়িতে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী নিয়ে উধাও তিন সন্তানের জনক

FARID PIC

পানছড়ি প্রতিনিধি:
খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলায় অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী নিয়ে তিন সন্তানের জনক উধাও হওয়ার চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে বলে জানা যায়। এ নিয়ে এলাকার বিভিন্ন গ্রাম, মহল্লার চা দোকান থেকে শুরু করে রাস্তা-ঘাটেও বইছে সমালোচনার ঝড়। জানা যায়, তিন সন্তানের জনকের নাম ফরিদ মিয়া ও অষ্টম শ্রেণীতে পড়ুয়া ছাত্রীর নাম রাজিয়া বেগম।

সরেজমিনে এলাকাবাসী ও বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৫ নং উল্টাছড়ি ইউপির জিয়ানগর গ্রামের বয়োবৃদ্ধ এয়াকুব আলীর ছেলের নাম ফরিদ (৩০)। ফরিদের এক নিকটাত্মীয়র কাছে তার পূর্বের কিছু কুর্কীর্তি ও অপকর্মের কাহিনীর চিত্র এ প্রতিবেদকের কাছে উঠে আসে। তার নিকটাত্মীয় জানান, আপন ফুফু শাহানা ও আপন জেঠাত বোন সুমির সাথে ফরিদের বিভিন্ন অপকর্মের কাহিনী আমরা পারিবারিকভাবে সমাধান করে গোপন রাখলেও স্কুল পড়ুয়া ছাত্রী নিয়ে পালানোর ঘটনায় আমরা নিজেরাও তার সুষ্ঠু বিচার চাই।

এলাকাবাসী ও স্কুল ছাত্রী রাজিয়ার আত্মীয়র সূত্রে জানা যায়, কাঠ মিস্ত্রি ফরিদ মিয়া উপজেলার ১ নং উল্টাছড়ি ইউপির ফাতেমা নগর গ্রামে কাঠ মিস্ত্রির কাজ করতে গিয়ে রাজ্জাক মিয়ার স্কুল পড়ুয়া মেয়ে রাজিয়াকে আম্মু সম্বোধন করে তাদের ঘরে আসা যাওয়া শুরু করে। আম্মু নামের মধুর সম্বোধনে কেউ তেমন সন্দেহের চোখে দেখত না। লম্পট ফরিদ আম্মু নামের মধুর সূরটিকে যে কলংকের সাগরে ভাসাবে তা ছিল পরিবারের সবার ধারনার বাইরে। কিন্তু সেই মধুর সুরটিকে কলংকিত করে স্কুল পড়ুয়া ছাত্রী রাজিয়ার সাথে গোপন সংখ্যতা গড়ে তোলে শেষ পর্যন্ত তাকে নিয়ে পাড়ি জমায় অজানার উদ্দ্যেশে। ঘটনাটি প্রথম দু’তিন দিন গোপন থাকলেও গত দু’একদিনে খবরটি ছড়িয়ে পড়ে পানছড়ির সর্বত্র।

এদিকে লম্পট ফরিদ উধাও হওয়ার পর থেকেই তিন সন্তান নিয়ে মানবেতর দিনযাপন করছে আট মাসের গর্ভবতী স্ত্রী আছিয়া খাতুন। ১৬-৫-২০১৪ ইং শুক্রবার বেলা পৌনে তিনটার দিকে আছিয়া খাতুনের সাথে ০১৫৫২৫০২৬৬১ (তার মামা শ্বশুরের নাম্বার) এ যোগাযোগ করা হলে আছিয়া কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, তার স্বামী পালিয়ে যাওয়ার দু’দিন পরেই শ্বাশুড়ী ফাতেমা ও ননদ কুলসুমা তাকে বেদম মারধর করে বাড়ি থেকে বের দেয়। বর্তমানে তার মামা শ্বশুর নজরুল ইসলামের আশ্রয়ে মেয়ে ইয়াছমিন (৯), ছেলে আবছারুল (৪) ও দুই বছরের ছেলে হৃদয়কে নিয়ে কোন রকম দিনাতিপাত চলছে।

ফরিদের আপন মামা নজরুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে জানান, আমার ভাগিনার কুকীর্তির শেষ নাই। অনেক কিছু গোপন করে তাকে ভালো করার চেষ্টা করেছি কিন্তু সে আমাদের বংশের মুখে চুনকালি দিয়ে একটি অবুঝ মেয়ে নিয়ে পালিয়েছে। তাছাড়া ফরিদের স্ত্রী আছিয়া খুব ধৈর্য্যশীল এবং সামাজিক মেয়ে বলেও তিনি জানান।

এদিকে ফরিদের মা ফাতেমা এই ঘটনায় ছেলে বৌ’কে কোন শান্তনা তো দুরের কথা বরং তার খুব কাছের মানুষ মিরাজ আলীকে নিয়ে আছিয়ার ঘরের খাট, হান্ডি-পাতিল ইত্যাদি নিয়ে ঘরে তালা মেরে আছিয়াকে বের করে দেয় বলেও জানায়। ফরিদের এই অপকর্মের ঘটনায় জিয়ানগর এলাকার মিরাজ আলীর সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে জানা গেছে। আছিয়া বর্তমানে ছেলে-মেয়ে নিয়ে মামা শ্বশুর নজরুলের আশ্রয়ে রয়েছে।

আছিয়ার বাবা ছালেহ আহাম্মদ (৬০) ও ভাই মনির আহাম্মদের সাথে এ ব্যাপারে কথা বলতে গেলে তারা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তারা দু’জন পানছড়ি বাজারের ক্ষুদ্র পান ব্যবসায়ী। মনির জানায়, গত তিন/চার মাসে ফরিদ বিভিন্ন বায়না ধরে প্রায় সত্তর/আশি হাজার টাকা নিয়েছে। বোন ও ভাগিনা-ভাগনীর সুখের কথা চিন্তা করে টাকা দিতেও কৃপণতা করিনি কিন্তু এখন আমার বোন, ভাগিনা-ভাগনীর কি হবে। ফরিদের মা ও বোন মিলে তাদের বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার কথাও জানান। মনির আরো জানায়, গত কয়েকদিন গোপনে ফরিদের সাথে সমস্যা সমাধানের জন্য মোবাইলে যোগাযোগ করেছি কিন্তু সে কোন সাড়া দিচ্ছেনা। এ ব্যাপারে সুষ্ঠু বিচার পাওয়ার জন্য থানায় একটি অভিযোগ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানান।

ফাতেমানগর এলাকার ইউপি সদস্য আবদুল কাদের এই প্রতিবেদককে জানান, অষ্টম শ্রেণীতে পড়–য়া একটি মেয়ে শিশু সমতুল্য। এই মেয়েকে নিয়ে ফরিদের অপকর্ম সমাজকে অপমান, অপদস্ত করেছে। অভিভাবকরাও এখন মেয়ে নিয়ে আছে বিপাকে। সুষ্ঠু বিচারের মাধ্যমে এ ধরনের লম্পটদের বিচার হওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।

এদিকে পানছড়ি বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জ্ঞান প্রভাত তালুকদার জানান, রাজিয়া অত্র বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী। অষ্টম শ্রেণীতে পড়–য়া ছাত্র বা ছাত্রীর সর্বোচ্চ বয়স তের বা চৌদ্দ। যারা নাবালক বা নাবালিকার আওতায় পড়ে। কোন প্রাপ্ত বয়স্ক বা বিবাহিত লোক যদি তাদের বিয়ের প্রস্তাব দেয় বা নিয়ে পালিয়ে যায় তা সত্যিই অমানবিক। এ ধরনের দুষ্ট লোকেরা যাতে আইনের ফাঁক ফোকড় দিয়ে বের হতে না পারে সে ব্যাপারে তিনি প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করেন।

এ ব্যাপারে লম্পট ফরিদের সাথে ১৬/৫/২০১৪ ইং শুক্রবার বেলা তিনটা চল্লিশ মিনিটে (০১৫৫৩০৭০৪২৫) নাম্বারে যোগাযোগ করা হলে সে জানায়, সাত তারিখ আমি রাজিয়াকে নিয়ে পালিয়ে এসে নয় তারিখ বিয়ে করেছি। তবে এখন বাড়িতে আসবো না কারণ এলাকার পরিস্থিতি এখন গরম। পরিস্থিতি ঠান্ডা হলে দেখি আশা যায় কিনা। তার বড় স্ত্রী আছিয়া কোথায় আছে জিজ্ঞাসা করলে সে জানায়, আমার আম্মার সাথে ব্যবহার খারাপ করে তাই আম্মা বাড়ি থেকে চলে যেতে বলেছে। বর্তমানে দু’জনের অবস্থান চট্টগ্রাম বলেও সে জানায়।

পানছড়ি থানা অফিসার ইনচার্জ আব্দুস সামাদ মোড়ল জানান, এ ব্যাপারে থানায় কেউ কোন অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই আইনানুগ ব্যব্স্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

Exit mobile version