পানছড়িতে ঝুল ঝাড়ুর রমরমা বাজার

JARU

শাহজাহান কবির সাজু, পানছড়ি:

সুজলা-সুফলা শস্য সবুজ ও প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর পার্বত্য জেলাগুলো। বিধাতার ঐশ্বরিক হাতের ছোঁয়ায় যেন পার্বত্য এলাকার প্রত্যন্ত এলাকাগুলোকে সাজিয়েছেন ফলজ ও বনজ সম্পদে। যার মধ্যে একটি জনপদের নাম পানছড়ি উপজেলা। এক সময় পানের বরজে ভরপুর ছিল এ এলাকা। এখানকার পান এলাকার চাহিদা মিটিয়ে নদী পথে বিভিন্ন জেলা এমনকি বড় বড় শহরগুলোতেও রপ্তানি করা হতো। যার ফলে সরকারী রাজস্বের পাশাপাশি এলাকার কৃষকেরাও হতো লাভবান। ফলে বিশেষজ্ঞরা এই এলাকার নাম দেন পানছড়ি।

কিন্তু বর্তমানে বিলীন হতে চলেছে পানছড়ির পানের ঐতিহ্য। গত কয়েক বছর যাবত পানছড়ির বিভিন্ন বাজারগুলো শোভা পাচ্ছে ঝুল ঝাড়ুতে। চেংগী নদীর বুক চিরে সাঁপের মতো এঁকে-বেঁকে যাওয়া উঁচু-নিচু প্রত্যন্ত রাস্তাগুলো বেয়ে এই ঝুল-ঝাড়ু বাজারে বয়ে নিয়ে আসে উপজাতীয় সংগ্রহকারীরা। জানা যায়, এ জন্য তারা বছরের শুরুতে আড়তদার থেকে দাদনও নিয়ে যায়। গহীন জঙ্গলে কাঁশফুলের মতো থোকায় থোকায় ঝুল ঝাড়ুর ফুল ফোটে বনের সৌন্দর্যকে দ্বিগুন বৃদ্ধি করার দৃশ্যও সরেজমিনে দেখা যায়। যা দেখতে সত্যই নয়নাভিরাম ও মনোমুগ্ধকর। ফুলগুলো সবুজ বর্ণ থেকে হালকা হলদে হলেই কাটার উপযোগী হয় বলে সংগ্রহকারীরা জানান।

কথা হয় পানছড়ির ঝুল ঝাড়ুর আড়তদার মরন কান্তি সাহার সাথে। তিনি জানালেন দীর্ঘ বৎসর যাবত এ ব্যবসার সাথে জড়িত। এ ব্যবসা করে তিনি মোটামুটি লাভবান হয়েছেন বলে জানান। পানছড়ি-খাগড়াছড়ি সড়কের পাশেই তার ঝাড়ুর মাঠ। মাঠের বুকে বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে হাজার হাজার ঝাড়ুর আটি। ঝাড়ু পরিষ্কার, আটি বাঁধাই ও রোদে শুকানোর কাজে ব্যস্ত রনজিত সাঁওতাল, মিনু সাঁওতাল, শানু সাঁওতাল ও মনিকা সাঁওতাল। এদের দেখাশোনার দায়িত্বে আছেন রনজিত।

তারা জানালেন মাসিক বেতন হিসাবে ঝাড়ুর মাঠে দুই মাস ধরে কাজ করছেন। মরণসাহা এ প্রতিবেদককে জানান, গত বছরের তুলনায় এবার ফলন কম। তার পরও পাঁচ ট্রাক বাজারজাত করা যাবে বলে তিনি জানান।

এ ব্যাপারে পানছড়ির রেঞ্জার ফারুক হোসেন জানান, গত ৩/৬/২০১২ থেকে এ পর্যন্ত আঠারো ট্রাক ব্রুম (ফুলের আটি) পানছড়ি থেকে সমতলে যাওয়ার অনুমতি সরকারীভাবে পায়। যা থেকে সরকারী রাজস্ব আদায় হয়েছে দুই লক্ষ আট হাজার পঞ্চাশ টাকা। যার মধ্যে ভ্যাটও আছে ১৫%। তিনি আরো জানান, এক ট্রাকে  লোড  করা হয় পঁয়ত্রিশ হাজার ব্রুম। স্থানীয় কৃষকরা জানান, প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে অনেকে ঝাড়ু কাটার সময় শিকড়সহ উপড়ে ফেলে যার ফলে এই ঝুল-ঝাড়ুর  ফলন দিন দিন কমে আসছে। সরকারীভাবে সচেতনতামূলক পদক্ষেপ নেওয়া হলে সংগ্রহকারী ও আড়তদারের পাশাপাশি সরকারও রাজস্ব আদায় করে লাভবান হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন