parbattanews

পানছড়িতে নার্সারি করে সফল আবদুল হালিম

Halim Pic copy

স্টাফ রিপোর্টার:

খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলার মোহাম্মদপুর গ্রামের এরশাদ আলী ও হালিমা খাতুনের ৬ ছেলে-মেয়ে মাঝে সবার বড় আবদুল হালিম। গরীব পরিবারের সন্তান হওয়ায় লেখা-পড়ায় প্রাথমিকের গণ্ডি পার হতে পারেনি। কিন্তু তাতে কি? পরিবারের সবার বড় তাই নিজে অশিক্ষিত হলেও ভাই-বোনদের উচ্চ শিক্ষিত বানানোর চিন্তায় আবদুল হালিম খোঁজতে থাকে স্বাবলম্বী হওয়ার উপায়।

অবশেষে কৃষির প্রতি ঝুঁকে পড়ে পাল্টাতে থাকে তার জীবনের পথ চলার গতি। বিভিন্ন নার্সারিতে গিয়ে নিবিড়ভাবে শিখতে থাকে কিভাবে গাছে কলম করা যায়। নানান প্রতিকূলতা ও অভাব অনটনের সংসারে বিগত ২০০০ সাল থেকে বিভিন্ন গাছের কলম করতে থাকে আবদুল হালিম। এখন নার্সারি প্রায় সবকিছুই আয়ত্ত করেছে। তার নার্সারির নাম গাউছিয়া নার্সারি।

পানছড়ি টিএন্ডটি টিলায় নার্সারিতে কর্মরত অবস্থায় কথা হয় আবদুল হালিমের সাথে। স্বভাব সুলভ হাঁসি দিয়ে সে জানায়, প্রথম প্রথম নার্সারি করতে গিয়ে সফলতা না পেলেও কৃষির প্রতি অবাধ ভালোবাসার কারণে পিছ পা হননি। প্রথম কয়েক দফা লোকসান হলেও আস্তে আস্তে খুঁজে পান সফলতার মুখ। তাছাড়া পানছড়ি হর্টিকালচারে একদিনের প্রশিক্ষণই আমার একমাত্র পূঁজি। বর্তমানে পানছড়ি বিভিন্ন হাঁটে আবদুল হালিমের কলম চারার জুড়ি নেই। আম্রফালি, ফজলি, বার্মিজ, বারি ফোর, রত্না, ব্যানানা ম্যাংগো, লিচু চায়না-টু, চায়না-থ্রি, মাল্টা, কমলা, লেবু, জাম্বুরা, ছফেদা, আপেল কুল, বাউ কুলসহ নানান জাতের ফলের কলম বর্তমানে পানছড়িসহ জেলার বিভিন্ন বাজারে পেয়েছে প্রচুর জনপ্রিয়তা। তার পিতা মাতা ও একভাই নানাভাবে দিয়ে যাচ্ছে সাহস ও সহযোগিতা।

২০১৩ সালে হালিমের নার্সারিটি সরকারিভাবে রেজিস্ট্রেশন করা হয়। যার রেজি. নং ডিএই-২৪/১৪। উপজেলার বিভিন্ন কৃষি মেলায় অংশ নিয়ে হালিম কয়েকবার জিতেছে উপজেলা সেরার পুরষ্কার। বর্তমানে তার নার্সারি ভরপুর রয়েছে প্রায় ২০ হাজারেরও অধিক কলমের চারায়। যার বর্তমান বাজার মূল্য রয়েছে প্রায় ৭লাখ টাকার অধিক।

আবদুল হালিমের বাবা এরশাদ আলী জানায়, ঝড়-বৃষ্টিতেও সে তার নার্সারি নিয়ে ব্যস্ত থাকে। কোন কলমে সময়মত ঔষধ প্রয়োগ করতে হয় তা সে দেখলেই বুঝতে পারে। বর্তমানে আমার ছেলে-মেয়েরা এইচএসসি, এসএসসি ও নবম শ্রেণিতে পড়তেছে। যার পুরো অবদান হালিমের।

হালিমের দাবি সরকারি কৃষি ঋণ পেলে নার্সারির পরিধি আরো রাড়ানো যেত। তাছাড়া আমার রক্তের সাথে মিশে একাকার হয়ে যাওয়া নার্সারিই আমার পরিবার এবং প্রতিটি কলমই আমার নিজ ভাই-বোনের মত বলে নিজের মনের ভাব প্রকাশ করেন হালিম।

পানছড়ির উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মানিক মিয়া জানান, আবদুল হালিমকে আমিই প্রথম এ কাজের পরামর্শ প্রদান করি। তার পরিশ্রম, ধৈর্য্য ও মেধা দিয়েই সে আজ পানছড়ির সফল কলম চাষী। তার কলমের গুনগত মানও বেশ ভালো। ফলে বাজারজাত ছাড়াও কৃষকরা কলম সংগ্রহের জন্য তার নার্সারিতে আসে। বেকার যুবকরা তার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখে নিতে পারে বলেও তিনি জানান।

Exit mobile version