পানছড়িতে প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে বাল্য ও বহু বিবাহ

শাহজাহান কবির সাজু, পানছড়ি প্রতিনিধি:

খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলায় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বাল্য ও বহু বিবাহের সংখ্যা। উপজেলার হাসান নগর গ্রামের বারকু মিয়া (৬৭) বছর বয়সে একই গ্রামের সুলতান আহাম্মদ বৈদ্যর মেয়ে শাহিনুর আক্তার (৪৩) কে কোর্ট ম্যারেজের মাধ্যমে বিয়ে করে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছেন। শাহিনুর আক্তারের ছেলে সুমন (২৫) জানান, আমার মায়ের কাছে কিছু টাকা রয়েছে সেই টাকাগুলো আত্মসাতের জন্যই শয়তান বারকু এই অঘটন ঘটিয়েছে। এরূপ বহু বিবাহের ঘটনা পানছড়িতে দিন দিন যেন রেওয়াজে পরিনত হচ্ছে।

জানা যায়, এলাকার স্কুল পড়ুয়া ১২/১৩ বছর বয়সী ছাত্রীরা যেন মা-বাবার বোঝার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিয়ের নামে কোমলমতি এই শিশুমনা মেয়েদের স্কুল ব্যাগ ও বইয়ের পরিবর্তে মা-বাবারা তুলে দিচ্ছে দ্বিগুন বয়সী স্বামীর হাতে। যারা যত সামান্য যৌতুক নিয়ে সাময়িক সুখের সংসারের মুখ দেখালেও এক-দুটো বাচ্চার মা হলেই সংসারে নামছে অশান্তি কেউ কেউ বেছে নিচ্ছে আত্মহননের পথ। সরকার বাল্য বিবাহ, বহু বিবাহ সর্ম্পকে পত্র-পত্রিকা ও বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় মাধ্যমে কুফলগুলো তুলে ধরলেও সে দিকে কর্ণপাত করছে না অভিভাবক মহল। স্থানীয় প্রশাসন বাল্য বিবাহে বাধা সৃষ্টি করলেও তা উপেক্ষা করে অন্যত্র আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে গিয়ে সেরে নিচ্ছে বিবাহের কাজ।

কিছুদিন পূর্বে পানছড়ি সদর ইউপির কানালাল এলাকার রহিম হুজুরের ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ুয়া মেয়েকে বিবাহ কার্যে বাধা সৃষ্টি করলেও মহালছড়ি উপজেলায় গিয়ে সেরে নেয় বিয়ের কাজ। পানছড়ি বালিকা বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীর ছাত্রী পুরাতন ব্রীক ফিল্ড এলাকার আবুল কাসেমের মেয়ে মা-বাবার সংসারে বোঝা হওয়ায় স্কুলে না পাঠিয়ে বৌ সাজিয়ে পাঠিয়ে দিল শ্বশুর বাড়ি। এলাকার সুশীল সমাজের প্রশ্ন একজন ৭ম/৮ম শ্রেণীর ছাত্রী কিভাবে হালনাগাদ ভোটার তালিকায় অর্ন্তভুক্ত হয়। শুধু ভোটার তালিকায় অর্ন্তভুক্তি নয় এলাকার আনাড়ী মার্কা কাজীরাও পথ চেয়ে বসে থাকে কখন আসবে বিয়ের ডাক। এলাকার কাজীদের মধ্যেও মায়া-মহব্বত নেই তাদের হাতে টাকা গেলেই বিয়ে পড়াতে আর বয়সের ধার ধারেনা। তাছাড়া এলাকার কাজীরাও বহুরুপী। তারা বেশীরভাগ বিয়েতে পাঠায় প্রতিনিধি, আর কোন দোষ হলেই ফতোয়া দেয় নতুন মানুষ কিছু বুঝে নাই এবারের মত ক্ষমার চোখে দেখেন। এভাবে ক্ষমার চোখে দেখতে দেখতে একেক কাজী আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন।

মাস খানেক পূর্বে পানছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুফিদুল আলম ও থানা অফিসার ইনচার্জ মো: আলমগীর ৫ম শ্রেণীতে পড়ুয়া এক ছাত্রীর বাল্য বিবাহ বন্ধ করেছেন এবং মেয়ের বাবাও ভুল বুঝে স্বীকার করে অঙ্গীকার নামা প্রদান করেন যে, ১৮ বছরের আগে মেয়ে বিয়ে দিবে না। এত বাধা বিপত্তি সত্ত্বেও বউ সেজে শ্বশুর বাড়ী গেল পানছড়ি বালিকা বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী পাইলট ফার্ম এলাকার ইছাক মিয়ার মেয়ে নাছিমা। বিয়ের ব্যস্ততায় প্রথম সাময়িকের শেষ পরীক্ষাটাও দিতে দেয়নি মা-বাবা।

জানা যায়, যৌতুক দিয়েই উপজেলার ১নং লোগাং ইউপির হুক্কু মিস্ত্রীর ছেলে জাহিদের কাছে বিয়ে দিয়েছেন। নাছিমার বিয়ের খবরে স্কুলের অনেক ছাত্রীই হতাশাগ্রস্থ বলে বিশ্বস্থ সূত্রে জানা যায়। তারা আতংকে ভুগছেন লেখা-পড়া করে লাভ কি কখন যে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়। শুধু নাছিমা নয় পানছড়ির সর্বস্তরে ছড়িয়ে পড়েছে বাল্য বিবাহ ও বহু বিবাহের প্রবনতা। জাল জন্ম নিবন্ধন সনদ রোধ করা ও অঘটনের নায়ক কাজীদের পরিবর্তন করে মেধাবী এবং মানসম্পন্ন কাজী নিয়োগ দিলে কিছুটা হলেও বাল্য বিবাহ রোধ করা সম্ভব হবে অভিজ্ঞ মহল ধারনা করছেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন