parbattanews

পানছড়িতে শালিকের বাসায় হুতুমপ্যাঁচার ডিম

BIRD PIC

শাহজাহান কবির সাজু:

ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকা শহরের উল্লেখযোগ্য এলাকার নামের সাথে হুবহু মিল রয়েছে পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ির কয়েকটি এলাকার নাম। যেমনটি ৩নং পানছড়ি উপজেলার কলাবাগান, মোহাম্মদপুর, ইসলামপুর ও ১নং লোগাং ইউপির শান্তিনগর। ঢাকা শহরের মতো পানছড়ির এসব এলাকাগুলোতে নেই সোডিয়াম লাইটের আলো আর পিচঢালা পথ। তবে সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা আর পাখির কলকাকলীসহ নানান নয়নাভিরাম দৃশ্যে ভরপুর রয়েছে এসব এলাকা। যার একটি ইসলামপুর।

পানছড়ি বাজার হয়ে লোগাং সড়কে মাইল দুয়েক পরেই ওই গ্রাম। ইসলামপুরের মুক্তিযোদ্ধা শিশু মিয়ার নানা কারনে রয়েছে ব্যাপক পরিচিতি। এই তো ২০১৫ সালের ১৭মার্চ জাতীয় শিশু দিবসে শিশু মিয়াকে দেয়া হয়েছিল ব্যাপক সংবর্ধনা। এই শিশু মিয়ার বাড়িতেই নানা জাতের পাখির অভয়ারণ্য গড়ে উঠেছে।

পাশের ঘরের গৃহবধু সেলিনার ছেলে নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া মোস্তাফিজুর রহমান অপু আবার খুব পাখি বান্ধব। তাইতো বিদ্যালয় ছুটির আগে ও পরে পাখিদের সুবিদার্থে পুরনো টিনের টুকরো রশি দিয়ে গোল করে বাসা বেঁধে ঝুলিয়ে দিয়েছে গাছের মগডালে, আবার কোনটা গাছে মাঝডালে। বর্তমানে ৫/৬টি বাসা ঝুলে আছে গাছে। এগুলোর মাঝে শালিক খড়-কুটা, পাতা-লতা দিয়ে বাসা বেঁধে ডিম পাড়ে ও বাচ্চা ফুটায়।

কিন্তু এরই মাঝে ঘটেছে আজব ঘটনা। শালিক পাখির উপস্থিতি কম দেখে সন্দেহ জাগে মোস্তাফিজের। সহপাঠী ওয়াসিম ও হাবিবুরসহ খুঁজতে থাকে আসলে ঘটনা কি? অনেক পর্যবেক্ষণের পর দেখতে পায় শালিকের বাসায় বসে ডিম তা দিচ্ছে হুতুমপ্যাঁচা। অনেক শলা-পরামর্শের পর কৌশলে হুতুমপ্যাঁচাকে আটক করে মোস্তাফিজ। বাসায় রয়েছে চারটি ডিম। ধ্বস্তা-ধ্বস্তির এক পর্যায়ে ৩টি ডিম ভেঙ্গে যায়। তাদের অনেক আপসোস ডিমের ভিতর বাচ্চাগুলো দেখে। ডিমের ভিতর সবগুলোই পরিপূর্ণ হুতুমপ্যাঁচার বাচ্চা। মোস্তাফিজের কপালে হাত! কেন যে ধরতে গেলাম।

হুতুমপ্যাঁচা আটকের খবর পেয়ে সরেজমিনে দেখা যায় লোহার পিঞ্জিরায় বন্দি হয়ে আছে হুতুমপ্যাঁচা। লাল লাল চোখের বড় বড় তাকানি দেখে ছোট শিশুরা ভয়ে পালায়। পানছড়ি বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সুলতান মাহামুদ ও এ প্রতিবেদকের সহায়তায় প্রায় ২০/৩০ শিশুর সামনেই অবমুক্ত করা হয় হুতুমপ্যাঁচাকে। লোহার পিঞ্জিরা থেকে বের করা মাত্রই ডানা মেলে উড়ে চলে আপন ভুবনে। আর শিশুদের স্বস্তির করতালি।

হুতুমপ্যাঁচার কাহিনী শেষ হতে না হতেই শিশু কণ্ঠে শুনা গেল ‘শালার পুত’। হতভম্ব হয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখি কেউই নেই। গৃহবধু সেলিনা জানালেন এটা আসলে শালিক পাখির কণ্ঠ। মোস্তাফিজের পোষা শালিক পাখিটি অনেক কথাই বলে। তার মাঝে অপরিচিত মুখ দেখলেই পাখিটি বলে ‘শালার পুত’। যার মাঝে এই প্রতিবেদকও ছিল অপরিচিত মুখ। মোস্তাফিজের সাথে পাখিটি অনেক কথাই শুনাল “মা, ভাই, ভাবি, ফাহিম, অপু, কাকা” ইত্যাদি। শুধু শালিক নয় ওই বাড়িতে রয়েছে ৫/৬টি ঘুঘু পাখি।

গৃহবধু সেলিনার ঘরটি মাটির তৈরি। পানছড়িতে মাটির গুদাম যার পরিচিতি। সে ঘরটিতে রয়েছে প্রায় অর্ধ শতাধিক তক্ষক। আলমিরা ও শোকেসের পেছনে সারি সারি তক্ষকের ডিম ঝুলে থাকার দৃশ্যও বেশ চমৎকার। অনেকেই তক্ষক ধরার জন্য আসে। কিন্তু গৃহবধু সেলিনার কঠোর অবস্থান ও পুলিশের ভয় দেখানোর ফলে সবাই পিছু হটে বলে জানা যায়।

পাশেই রয়েছে মিজানুরের মৌ চাষের বাক্স। ৩/৪টি বাক্সেই মিজান মধু আহরণ করে থাকে। ইসলামপুর গ্রামের ওই দু’তিনটি বাড়ি আসলেই দেখার মত। বিভিন্ন প্রজাতির বন্য প্রাণির অভয়ারণ্য আর লাউয়ের মাচায় ঝুলে থাকা বিভিন্ন সাইজের লাউ এক নজর দেখলেই মন জুড়াবে।

পাখি বান্ধব ছোট্ট ফিরোজ, তানিয়া, মহরম, ফাহিম, সৈকত, ইমন, নজরুল ও ইয়াছমিন জানায়, আমরা এই বাড়ির প্রতিটি গাছে গাছে পাখির বাসা বানিয়ে ঝুলিয়ে দেয়ার প্ররিকল্পনা করেছি। আমাদের এই বাড়িটি বন্য প্রাণির অভয়ারণ্য হিসাবে গড়ে তুলব। তবে হুতুমপ্যাঁচার ডিমগুলো ভেঙে ফেলায় তারা অনুতপ্ত বলে বার বার এই প্রতিবেদককে জানায়।

Exit mobile version