পানছড়ির প্রতিবন্ধী ৩ ভাই-বোন হতে চায় ডাক্তার ও শিক্ষক

24-01. PIC

শাহজাহান কবির সাজু, পানছড়ি :

খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলার এক অবাক করা পরিবার প্রধান আবদুল আলী। রাস্তার পাশে শীতকালীন পিঠা বিক্রি করা তার পেশা। আবদুল আলী এবং তার স্ত্রী হামিদা খাতুন দু’জনই সুস্থ সবল দেহের অধিকারী হলেও তাদের পরিবারের ৩টি সন্তানই জন্ম নেয় শারীরিক প্রতিবন্ধী রূপে।

আশ্চর্য হলেও সত্য যে, বড় মেয়ে উনিশ বছর বয়সী শাহানা ২য় শ্রেণিতে পড়ে, মেঝ মেয়ে আম্বিয়া (১৩) তৃতীয় শ্রেণিতে ও ছোট ছেলে আবদুল হামিদ (১১) ৪র্থ শ্রেণিতে পড়ে। পানছড়ি ইসলামিয়া মাদ্রাসার পাশে ভাড়া বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় ৩ জনই মায়ের সাথে খেলা করছে। সিগারেটের পেকেট ছিড়ে টাকা বানিয়ে একে অপরের সাথে ২০ টাকা ৫০ টাকা খেলছে বলে মুচকি হেঁসে জানায় আবদুল হামিদ।

৩ জনই এই প্রতিবেদকের কাছে জানান, কেউ ডাক্তার হবে, কেউ শিক্ষক হবে। আম্বিয়া ও আবদুল হামিদ জানায়, তারা স্কুল প্রতিবন্ধীর আওতায় প্রতি মাসে তিনশত টাকা করে ভাতা পায় কিন্তু শাহানা ভাতা পায়না কেন তাদের প্রশ্ন ? আবদুল আলী জানায়, পিঠা বিক্রি করে কোন রকম চাউল ও ঘর ভাড়ার টাকা হয়। কিন্তু ছেলে-মেয়ের চাহিদা কখনও মিঠাতে পারিনা। তাছাড়া শীতকালীন পিঠা  ৩ থেকে ৪ মাস চলে। বছরের বাকি সময় নুন আনতে পানতা ফুরায় বলে জানান ৩ প্রতিবন্ধীর প্রধান অভিভাবক আবদুল আলী।

৩ টি সন্তান নিয়ে অনেক সময় না খেয়েও দিনাতিপাত করে বলে জানায় আবদুল আলীর স্ত্রী হামিদা খাতুন। তাছাড়া  হামিদা খাতুন ৩ জনকেই কাপড় পরানো, খাওয়ানো ও কোলে চড়িয়ে স্কুলে দিয়ে ও নিয়ে আসার কাজ তাকেই করতে হয়। তাই বাহিরে কোন জায়গায় ঝিয়ের কাজ করাও সম্ভব হয় না বলে জানান হামিদা। বর্তমানে পানছড়ি মাদ্রাসার পাশে একটি ভাড়া ঘরে তাদের বসবাস। উপজেলার জিয়া নগর এলাকায় তাদের অল্প নিজ ভুমি রয়েছে বলে জানায়। কিন্তু অভাবের সংসারে ঘর বানানোর সাধ্য তাদের নেই। তাদের আশা বিত্তবান কেউ যদি কিছু টিন ও কাঠ বাঁশ দিয়ে সহায়তা করে তাহলে হয়তো মাথা গোঁজার ঠাঁই হবে।

এ ব্যাপারে পানছড়ি প্রতিবন্ধী কল্যাণ সংঘের সভাপতি জয়নাল আবেদীন খন্দকার জানান, পরিবারটি খুবই নিরিহ। বিত্তবানরা এদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসা দরকার। তিনি আরো জানান, দু’জনকে প্রতিবন্ধী কোঠায় মাসে তিনশত টাকা করে স্কুল বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। তাদের জন্য স্থায়ীভাবে কিছু একটা করার চেষ্টা চলছে। আশা করি প্রশাসনের সহযোগিতায় তা সহসাই সম্ভব হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন