পানছড়ির বাজারগুলো রসালো লটকনের দখলে
স্টাফ রিপোর্টার:
খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলার বিভিন্ন বাজারগুলো এখন লটকনের দখলে। বিশেষ করে পানছড়ি বাজারের প্রধান সড়কে থোকায় থোকায় বাঁধা লটকনের দিকে তাকালে যে কারোরই জিবে আসবে জল। তাই তো এই মৌসুমী ফলের এখন দারুণ কদর। তাছাড়া এখন পানছড়ির প্রতিটি গ্রামেই লটকনের গাছ চোখে পড়ে।
পার্বত্য এলাকায় এই লটকন নানা নামে পরিচিত। চাকমা ভাষায় পচিমগুল, মারমা ভাষায় ক্যানাইজুসি, ত্রিপুরা ভাষায় খুচমাই ও বাঙালী সম্প্রদায়ে লটকন নামেই চিনে।
পানছড়ি বাজারে কথা হয় প্রদীপ পাড়ার উত্তম বিকাশ ত্রিপুরা, জিরানী খোলার চিনু মারমা, মরাটিলা বাদশা কুমার ত্রিপুরা পাড়ার কাজল দেবী ত্রিপুরা, লোগাং শান্তি নগর গ্রামের হারুণ, মধ্যনগর গ্রামের রফিক ও মোল্লাপাড়া গ্রামের আ. রাজ্জাকের সাথে। তারা কেউ কেউ নিজেদের গাছের ফল নিজেরাই বিক্রি করছে আবার কেউ অগ্রিম গাছ কিনে ব্যবসা করছে। তারা প্রতি কেজি নটকন বিক্রি করছে ৪০ টাকা দরে। আর থোকা বিক্রি করছে ১০ টাকা দরে। তবে বাজারে কেজি মাপার চেয়ে থোকার চাহিদাই বেশী। বিশেষ করে বিদ্যালয় পড়–য়াদের হাতে হাতে থোকায় বাধা লটকনই বেশীর ভাগ নজরে আসে।
৫নং উল্টাছড়ি ইউপির মধ্যনগর গ্রামের মো. রফিক মিয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির আঙ্গিণায় সবুজ পাতা বেষ্ঠিত গাছে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত ঝুলছে হাজারো লটকন। হালকা হলদে রঙের গোলাকার লটকন গাছে ঝুলে থাকার দৃশ্য একবার দেখলে মনে দাগ কাটবে অনেক দিনের জন্য।
গাছে চড়ে রসালো লটকন খাচ্ছে রফিকের ৩য় শ্রেণিতে পড়ুয়া সুমাইয়া ও ৪র্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া রিমা। তারা মুচকি হেসে জানালেন খুব মজার ফল। তাছাড়া নিজ গাছের ফল দেখতে যেমন সুন্দর খেতেও তেমন মজা বলে জানায় তারা। রফিক মিয়ার স্ত্রী লায়লা বেগম জানায়, প্রতিবছরই সারা গাছজুড়ে লটকন ধরে। নিজেরা খাই ও আত্মীয় স্বজনকে দেয়ার পরও এক গাছ থেকে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকার লটকন বিক্রি করে থাকি।
পানছড়ি কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, লটকন নরসিংদী, গাজীপুর নেত্রকোনা ও সিলেটে বেশী চাষ হলেও পার্বত্য এলাকার মাটি এটি চাষের জন্য খুবই উপযোগী। দিন দিন এর ফলন পার্বত্য এলাকায় বেড়েই চলছে।
পানছড়ি উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মানিক মিয়া জানান, ভিটামিন বি-টু সমৃদ্ধ এই লটকন বারি-১ জাতের। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে এখন এই মৌসুমী ফলে ভরা। এই এলাকার মাটি লটকন চাষের জন্য খুবই উপযোগী তা বিভিন্ন কৃষকদের জানিয়ে দেয়া হচ্ছে। তাছাড়া কৃষরাও লটকন চাষের দিকে আগ্রহ দেখাচ্ছে বলে তিনি জানান।
পানছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য ও প. প. কর্মকর্তা ডা. সনজীব ত্রিপুরা জানান, দেশীয় ফল লটকনের অনেক গুন। বিশেষ করে ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ এই ফল মানব দেহের জন্য খুবই উপকারী।