শাহজাহান কবির সাজু, পানছড়ি:
খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার বিভিন্ন বাজারে এখন শোভা পাচ্ছে কাঁচা কাঁঠাল। আর এইসব কাঁঠাল স্থানীয়দের কাছে বারোমাসি কাঁঠাল নামেই বেশ পরিচিত। তবে মজার ব্যাপার হলো এসব কাঁঠাল বিক্রি হয় কাঁচা অবস্থায়। এই কাঁচা কাঠালের তরকারি খেতে বেশ সুস্বাদু, তাই যেমনি চাহিদা তেমনি দামও বেশ চড়া।
স্থানীয়রা জানায়, তরকারীর উপকরণ হিসেবে অনেকের কাছে প্রিয় বলে এসব কাঁঠালের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলছে। কয়েক প্রকার সবজির সাথে কাঁচা কাঁঠালের বাইরের অংশ ফেলে দিয়ে ভেতরের অংশকে শুটকি দিয়ে রান্না করা লাবড়া খেতে খুবই সু-স্বাদু। গত কয়েক মাস ধরে উপজেলার পানছড়ি, লোগাং, দুধুকছড়া, পূজগাং ও উল্টাছড়ি বাজারে বিক্রি হচ্ছে এসব কাঁঠাল। তবে এই কাঁঁঠাল এলাকার বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মাঝে ভিন্ন নামে পরিচিত।
কাঁঠাল চাকমা ভাষায় “কাত্তোল” ত্রিপুরা ভাষায় “থাইপং” আর মারমা ভাষায় “প্লেচি” নামেই পরিচিত। আবার সবজির বেলায়ও কাঁঠালের সবজিকে চাকমা ভাষায় “কাত্তোল তোন” ত্রিপুরা ভাষায় “থাইপং মুই” মারমা ভাষায় “প্লেচি হাং” নামে চেনে। পানছড়িতে বাজার করতে আসা পরিমল ত্রিপুরা জানান, নামের যত পার্থক্য থাকুক না কেন রান্না করা পাতিলে স্বাদ একই রকম।
পানছড়ি বাজারে ৪০ টাকা দিয়ে একটি কাঁঠাল (কাত্তোল) কিনেছেন লতিবানের জ্ঞান বিকাশ চাকমা। তিনি বলেন, কাঁঠাল দিয়ে রান্না করা লাবড়া খেতে খুব সু-স্বাদু। তাই বেশী দাম দিয়েই একটি কাঁঠাল কিনেছেন।
পানছড়ি বাজারে বিক্রির জন্য ৬টি কাঁচা কাঁঠাল নিয়ে আসেন লোগাং ইউনিয়নের খেদারছড়া গ্রামের ৭০ বছর বয়সী বৃদ্ধা বুদেশ্বরী চাকমা (মজাআলি মা)। ছোট কাঁঠালটি ৩০ টাকা, আর তার চেয়ে একটু বড় কাঁঠালটি ৪০ টাকা, এর চেয়ে আর একটু বড়টি ৬০ টাকায় বিক্রি করেছেন বলে তিনি জানান। ৬টি কাঁঠাল বিক্রি করে তিনি ২৬০ টাকা পেয়েছেন। তিনি জানান, বাগানে আরো কাঁঠাল রয়েছে বিভিন্ন হাটে এসব কাঁঠাল বিক্রি করবেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানান, তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা চারজন। সবাই কাঁচা কাঠালের তরকারী পছন্দ করে তাই ছোট একটি কাঁঠাল ৩০ টাকা দিয়ে কিনেছেন। তাছাড়া কচি কাঁঠাল শুটকি দিয়ে খেতে খুব মজাদার বলেও তিনি মন্তব্য করেন।।
পানছড়ি উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো: মানিক মিয়ার সাথে এসব কাঁঠাল নিয়ে আলাপকালে তিনি জানান, স্থানীয় দেশী কাঁঠালের মধ্যে দুটি জাত রয়েছে। একটি বারোমাসি জাত অন্যটি নাবি জাতের। সারা বছর যেসব গাছে বেশী ফলন হয় সেগুলোকে বারোমাসি আর ফলন কম হওয়া জাতকে নাবি বলে। আগাম ও বারোমাসি কাঁঠাল বর্তমানে বাজারে দেখা যাচ্ছে। তবে কাঁচা কাঁঠালের সবজি বেশ পুষ্টিকর বলেও তিনি জানান।