পানছড়ির মধু মাস্টারের বাগানে ঝুলছে লাখো টাকার আম

Mango Pic (1) copy

স্টাফ রিপোর্টার:

খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলায় ফলজ বাগান সৃজনের মাধ্যমে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন অবসর প্রাপ্ত এক স্কুল শিক্ষক। এই বাগান গড়ার কারিগর মৃদু মধুর চাকমা (মধু মাস্টার) উপজেলার ৫নং উল্টাছড়ি ইউপির উত্তর শান্তিপু গ্রামের রজনী রঞ্জন কার্বারীর সন্তান। মধু মাস্টারের দুই ছেলে ও দুই মেয়েই উচ্চ শিক্ষিত।

জানা যায়, মৃদু মধুর চাকমা ২০০৫ সালে পানছড়ি উপজেলার বড়কলক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণ করেন। বর্তমান বয়স প্রায় ৭৪ বছর। অবসরের পর থেকে নিজ বাড়িতে শুয়ে বসে সময় কাটাতে গিয়ে প্রায়ই অসুস্থতা বোধ করেন। পরবর্তীতে তার সহধমিনীর পরামর্শে নিজ জায়গার উপর বাগান করার পরিকল্পনা নেন। যেমনি কথা তেমনি কাজ। বর্তমানে বাগানই তার একমাত্র পেশা ও নেশা।বুদ্ধি, সাহস, মনোবল আর কায়িক শ্রমের মাধ্যমেই বাগান সৃজন শুরু করে নিজস্ব ২৩ একর বিশালাকার জায়গা জুড়ে। ফলজ বাগান বিশেষ করে লিচু আর নানান জাতের আমের মাধ্যমেই শুরু হয় তার বাগান পরিচর্চার যুদ্ধ।

বর্তমানে পানছড়ি উপজেলা তথা জেলায় আম বাগানের মাঝে সেরা বাগানের একটি মধু মাস্টারের বাগান। যার দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ও সারিবদ্ধতার দৃশ্য এক নজর দেখলেই চোখ জুড়াবে।

উপজেলার জিয়ানগর, ওমরপুর ও অরণ্যকুটির সীমান্তে অরণ্যর মাঝে এক মনোমুগদ্ধকর ও প্রাণবন্ত এলাকা জুড়ে গাছে গাছে বাদুর ঝুলা হয়ে ঝুলে আছে বিভিন্ন জাতের আম। আর যত্নসহকারে পরিচর্চা করছেন মধু মাস্টার। বাগান মালিক মধু মাস্টার চিনিয়ে দিলেন আ¤্রপালি, মল্লিকা, গোপাল ভোগ, রাঙ্গোয়াইজাতের আম। বিশালাকার বাগানে আম ঝুলার দৃশ্য মন মাতিয়ে তোলে।

তিনি জানালেন, ২টি বাগানে ১ হাজার ৭০০টি গাছের মাঝে ফল দিয়েছে প্রায় ৭০০টি গাছে। মুকুলে পরাগায়নের সময় বৃষ্টির কারণে ফলন কিছুটা কম হয়েছে। তবে ফলনের পরিমাণ আনুমানিক ১৬ থেকে ১৭ মেট্রিকটন হবে বলে মুচকি হেসে জানান মধু মাস্টা। বেপারীরা অগ্রিম চার লাখ টাকা দাম হাকালেও বিক্রি করেননি। নিজে বাজারজাত করে বিক্রি করলে প্রায় ৮ লাখ টাকা বিক্রি হবে বলে জানান তিনি। এতে তার খরচ হয়েছে প্রায় দেড় লক্ষাধিক টাকার মতো।

গত বছর আমের দাম কম থাকার কারণে প্রায় ৩ লাখ টাকার অধিক বিক্রি হয়েছে। তাছাড়া এবারে তার বাগানের লিচুও বিক্রি হয়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকার মত। ৪ জন শ্রমিক বাগানে সারা বছর ধরেই কাজ করে। বাগানে শ্রমিকদের সাথে নিজেও করেন কঠোর পরিশ্রম। আর এই পরিশ্রমের ফলেই এসব বাগান থেকে বছর শেষে পাচ্ছে লাখ লাখ টাকা।

পানছড়ির উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নির্বান চাকমা জানান, মধু মাস্টার একজন পবিপূর্ণ কৃষক। একজন আদর্শ কৃষকের মাঝে যেসব গুণাবলী থাকা দরকার সবই তার মাঝে বিদ্যমান। এ বয়সেও তার শেখার প্রতি প্রচুর আগ্রহ এবং বেশ পরিশ্রমী। কৃষি বিষয়ক কোন নতুন পরামর্শ পেলেই তিনি সে প্রযুক্তি কাজে লাগান।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন