পানছড়ির হস্তশিল্পীদের ব্যস্ততা

fec-image

সারা বছর ধরে হস্তশিল্পীরা হাতের কারুকাজে ব্যস্ত থাকলেও আমন ও বোরো মৌসুম তাদের ব্যস্ততা বাড়ে দ্বিগুন। জঙ্গল থেকে বাঁশ এনে বাঁশ থেকে বেত বের করে এক’ দুদিন পানিতে ভিজিয়ে শুরু করে দু’হাতের কারুকাজ। হাতের তৈরি এসব জিনিস বাজারজাত করেই দীর্ঘ বছর সংসারের হাল ধরে রেখেছেন পানছড়ির হস্তশিল্পীরা। কোন ধরণের প্রশিক্ষণ ছাড়াই তারা নিরলসভাবে চালিয়ে যাচ্ছে কার্যক্রম।

হাটবার রবিবারে (৮ ডিসেম্বর) পানছড়ি বাজারে সরেজমিনে দেখা যায়, হস্তশিল্পীরা বেচাকেনায় ব্যস্ত। বিশেষ করে ছাটাই বাজার জমজমাট। কথা হয় বিষ্ণু কার্বারী পাড়ার খুশিরাম, বানুরায়, রাসাই কার্বারী পাড়ার সুজেন ত্রিপুরা, ভাইবোনছড়ার থোয়াইলাসাই মারমা, কুড়াদিয়ার সমীর চাকমা, নাপিতাপাড়ার ইনাধন চাকমার সাথে। তারা জানায় এ সময়টাতে ছাটাইয়ের চাহিদা বেশী। কাল্যাছড়ি, ডুলু, মিরিঙ্গা, ভাইজ্জা ও এগুজ্যা বাঁশ দিয়েই এসব তৈরি হয়। বাঁশ থেকে বেত বের করা থাকলে দিনে দুটো ছাটাই বানানো সম্ভব। এসব ছাটাই সাইজ ভেদে ছয়, সাত ও আটশত টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। প্রতি সপ্তাহে বিভিন্ন বাজারে প্রায় দুই শতাধিক ছাটাই বিক্রি হয় বলে তারা জানায়।

বিক্রেতা খেদারবন ত্রিপুরা জানায়, এই চাটাই নিচে দিয়ে যারা ধান শুকায় বা রাখে তখন এটা তলোই হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তবে এটা বেশীরভাগ কৃষক ধানের গোলা হিসেবে ব্যবহার করে। এটাকে গোল করে মুখ দুটো একসাথ করে বাঁশ দিয়ে বেঁধে একটি চকির উপর বসিয়ে দিলে এটা ধানের গোলা হয়ে যায়। এই গোলাকে চাকমা ভাষায় চিদিরি, ত্রিপুরা ভাষায় চেম্পারাক ও মারমা ভাষায় ওয়েই ও বাংলায় গোলা বলে থাকে। এটাতে ধান রাখলে ইদুরের উপদ্র্রব কিছুটা কমে। ছাটাই ছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন বাজারে শোভা পায় বাঁশের বেতের তৈরী জিনিসপত্র। যা বিক্রি করে কেউ কেউ সন্তানদের লেখাপড়ার খরচও চালিয়ে যালাচ্ছে।

হস্তশিল্পীদের দাবি এলাকায় কোন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নাই। সরকারীভাবে বাঁশের তৈরি বিভিন্ন পণ্যাদি শহরে রপ্তানির উদ্দ্যেগ নিলে অনেক বেকার যুবক-যুবতীর বেকারত্ব দূরীকরণ সম্ভব।

এ ব্যাপারে খাগড়াছড়ি জেলা বিসিকের উপ-ব্যবস্থাপক একেএম সাদেকুর রহমান জানান, এখন তো হস্তশিল্পের প্রশিক্ষণার্থীই পাওয়া যায় না। প্রশিক্ষণার্থী পেলে সামনে চালু করা যাবে। তবে বর্তমানে যেসব প্রশিক্ষণের চাহিদা রয়েছে বিভিন্ন উপজেলায় সেসব চালু রয়েছে। এলাকার হস্তশিল্পীরা আগ্রহ প্রকাশ করে অফিসে যোগাযোগ করলে তাদের প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যাপারে আন্তরিকতার সহিত দেখা হবে বলে তিনি জানান।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: ত্রিপুরা, হস্তশিল্পী
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন