parbattanews

পানছড়ির ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী নূরজাহান বধু সেজে গেল শ্বশুর বাড়ি

 

উপজেলা প্রতিনিধি, পানছড়ি :

বই আর খাতা হাতে নয় এবার বধু সেজে শ্বশুর বাড়ি চলে গেল ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ুয়া মাদ্রাসা ছাত্রী নূরজাহান আক্তার রিংকু। সে এবারের এবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষায় পানছড়ি ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা কৃতকার্য হয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছিল।

বিশ্বস্থ সূত্রে জানা যায়, নূরজাহান পানছড়ি কলাবাগান এলাকার নুরুন্নবী ও বেবী বেগমের মেয়ে। খাগড়াছড়ি সদর উপজেলায় বউ সেজে শুক্রবারে শ্বশুর বাড়ি গেল ১২ বছর বয়সী এই কোমলমতি শিশুটি। হরেক রকম আলোকসজ্জা দিয়ে দু’দিন আগেই তৈরী হয় বিয়ের গেইট। বৃহষ্পতিবার গায়ে হলুদের রাতে আত্মীয় স্বজনরা মহাধুমধাম ও আনন্দের জোয়ারে ভাসে। তিন বোনের মধ্যে রিংকুই সবার ছোট। তার মেঝ বোনেরও বাল্য বিবাহ হয়েছিল। বর্তমানে সে স্বামীর সংসার ছেড়ে বাপের বাড়িতেই আছে। তারপরও আজ শুক্রবার নূরজাহানেরও হচ্ছে বাল্য বিয়ে।

এলাকার সুশীল সমাজের প্রশ্ন একজন অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছাত্রীরা কিভাবে হালনাগাদ ভোটার তালিকায় অর্ন্তভুক্ত হয়। নাকি জন্ম নিবন্ধন সনদ জালিয়াতি। শুধু ভোটার তালিকায় অর্ন্তভুক্তি নয় এলাকার আনাড়ী মার্কা কাজীরাও পথ চেয়ে বসে থাকে কখন আসবে বিয়ের ডাক। এলাকার কাজীদের মধ্যেও মায়া-মহব্বত বলতে নেই, হাতে টাকা পেলে বিয়ে পড়াতে আর বয়সের ধার ধারেনা।

তাছাড়া এলাকার কাজীরাও বহুরুপী। তারা বেশীরভাগ বিয়েতে পাঠায় প্রতিনিধি, আর কোন দোষ হলেই ফতুয়া ধরিয়ে দেয়, নতুন প্রতিনিধি তাই কিছু বুঝে নাই এবারের মত ক্ষমার চোখে দেখেন। এভাবে ক্ষমার চোখে দেখতে দেখতে একেক কাজী আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়েছেন।

গত প্রায় ৪/৫মাস পূর্বে পানছড়ি উপজেলা সাবেক নির্বাহী অফিসার মুফিদুল আলম ও থানা অফিসার ইনচার্জ মো: আলমগীর ৫ম শ্রেণীতে পড়ুয়া এক ছাত্রীর বাল্য বিবাহ বন্ধ করেছেন এবং মেয়ের বাবাও ভুল বুঝে স্বীকার করে অঙ্গীকার নামা প্রদান করেন যে, ১৮ বছরের আগে মেয়ে বিয়ে দিবে না। এত বাধা বিপত্তি সত্ত্বেও আজ বউ সেজে শ্বশুর বাড়ী গেল পানছড়ি ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসার ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রীটি।

গত সপ্তাহে পানছড়ি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী ফাতেমাও বাল্য বিবাহের শিকার হয়েছে। অথচ কাজীরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এসব বাল্য বিয়ের খবরে স্কুল-মাদ্রাসার অনেক ছাত্রীই হতাশাগ্রস্থ বলে বিশ্বস্থ সূত্রে জানা যায়। তারা আতংকে ভুগছেন লেখা-পড়া করে লাভ কি ? কখন যে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হবে তা তারা জানে না। শুধু ফাতেমা ও নূরজাহান নয় পানছড়ির সর্বস্তরে ছড়িয়ে পড়েছে বাল্য বিবাহ ও বহু বিবাহের প্রবণতা।

মাস তিনেক আগে উপজেলার হাসান নগর গ্রামের ৬৭ বছর বয়সী বারুক মিয়া নামে এক বৃদ্ধ প্রেম করে বিয়ে করে উপজেলায় রেকর্ড করেছেন। জাল জন্ম নিবন্ধন সনদ রোধ করা ও অঘটনের মূল হোতা অদক্ষ কাজীদের পরিবর্তন করে মেধাবী এবং মানসম্পন্ন কাজী নিয়োগ দিলে কিছুটা হলেও বাল্য বিবাহ রোধ করা সম্ভব হবে অভিজ্ঞ মহল ধারনা করছেন।

Exit mobile version