পার্বত্যাঞ্চলের শান্তি শৃংখলা ও সুষম উন্নয়নে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে- মেজর জেনারেল সাব্বির আহমেদ

1926819_218913408303466_111741112_n

পার্বত্যনিউজ রিপোর্ট:

সেনাবাহিনীর চট্টগ্রাম অঞ্চলের এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল সাব্বির আহমেদ বলেন, কোন ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক ও রাজনৈতিক দৃষ্টিতে না দেখে সকল সম্প্রদায়ের সম্মিলিত অংশগ্রহনে পার্বত্য চট্টগ্রামে সকল জনগোষ্ঠীর বসবাস নিশ্চিত করতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিকল্প নেই। তাই পার্বত্যাঞ্চলের শান্তি শৃংখলা ও সুষম উন্নয়নে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। জিওসি বুধবার বিকেলে সদর উপজেলার ভূয়াছড়ি সেনা ক্যাম্প মাঠে কমলছড়ি ইউনিয়নের পাহাড়ী-বাঙালিদের সাথে মত-বিনিময় সভায় বক্তারা উপরোক্ত কথা বলেন। খাগড়াছড়ি জেলা সদর উপজেলার কমলছড়ি গ্রামের গৃহবধু সবিতা চাকমা হত্যা ও ভূয়াছড়ি গুচ্ছ গ্রামের শহীদুল ইসলাম নিখোঁজ হওয়ার পর সৃষ্ট পাহাড়ি ও বাঙ্গালীদের মধ্যেকার সাম্প্রদায়িক সহিংসতার প্রায় এক মাস পর মহালছড়ি জোনের উদ্যোগে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে তিনি আরো বলেন, এখানে আমরা সবাই এক পরিবারের লোক। সবাইকে মিলে মিশে কাজ করতে হবে। এক পরিবারে ভুল ত্রুটি থাকতেই পারে তাই বলে একটি ঘটনা ঘটলে এক অপরকে দোষারোপ করে সাম্প্রদাযিক ঘটনা ঘটানো এটা হতে পারে না। স্থানীয় প্রশাসনের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, সবিতা চাকমা হত্যা ও শহীদুল ইসলাম নিখোঁজ এটা সত্য ঘটনা। মূলত গুজবের কারনে ঘটনাটা এতদূর ঘটেছে। তাই সবাইকে গুজবে কান না দেওয়ার জন্য পরামর্শ দেন । গুজব জিনিটা আসলে বিপদজনক ও অনেক ক্ষতিকর, তাই এর থেকে সবাইকে দুরে থাকতে হবে বলেও মত প্রকাশ করেন তিনি।

 উক্ত অনুষ্ঠানে ১১ ফেব্রয়ারী খাগড়াছড়ির কমলছড়িতে সংঘটিত পাহাড়ী-বাঙ্গালী সংঘাতকে অনাকাঙ্ক্ষিত এবং একটি অপশক্তি’র উস্কানিমুলক অপ-তৎপরতা বলে আখ্যায়িত করেছেন খাগড়াছড়ি’র সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা।

মহালছড়ি জোনের অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল মোহাম্মদ শহীদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, খাগড়াছড়ি রিজিয়নের অধিনায়ক কাজী মো. শামসুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক মোঃ মাসুদ করিম ও ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মোঃ শাহজাহান হোসেন।

এসময় অন্যান্যদের মধ্যে খাগড়াছড়ি পৌর সভার মেয়র মোঃ রফিকুল আলম, সদর উপজেলার নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান চঞ্চুমনি চাকমা, বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ শানে আলম, কমলছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান সুপন খীসা, পার্বত্য বৌদ্ধ মিশনের প্রতিষ্ঠাতা অধ্য সুমনালংকার মহাথেরো, কমলছড়ির হেডম্যান কীর্তিময় চাকমা ও স্থানীয় ইউপি সদস্য শাহজাহান ফরাজী উপস্থিত ছিলেন।

মতবিনিময় সভায় বক্তারা বলেন, কমলছড়ি ইউনিয়নে সৃষ্ট সাম্প্রদায়িক সহিংস ঘটনাটি ছিল খুবই অনাকাঙ্খিত একটি ঘটনা। সবিতা চাকমা হত্যা ও শহীদুল ইসলাম নিখোঁজের ঘটনাকে পুজি করে গুজব রটিয়ে একটি মহল রাজনৈতিক ফায়দা লুটার জন্য এ ঘটনাটি ঘটিয়েছে বলে মন্তব্য করেন।

বক্তারা আরো বলেন, ঘটনার দিন ঘটনা সম্পর্কে অবগত হওয়ার সাথে সাথে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ আকার ধারন করত। এই জন্য উপস্থিত সবাই সকল নিরাপত্তা বাহিনীসহ প্রশাসনের সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে সেজন্য সবাইকে গুজবে কান না দেওয়ার জন্য এলাকাবাসীদের অনুরোধ করা হয়।

বক্তারা আরো বলেন সবিতা চাকমা হত্যা ঘটনাটা সত্য, তবে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটি মহল রাজনৈতিক ফায়দা লুটার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচী দিয়ে যেমনি ভূল করেছিল, তেমনি বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদ মিছিল নিয়ে কমলছড়ি গ্রামের ভিতর দিয়ে যাওয়াটা ছিল একটা বড় ভুল। দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে একশ্রেণির কুচক্রী মহল উদ্দেশ্যমূলকভাবে এ ঘটনাটি ঘটিয়েছে। তাই এলাকাবাসীকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার ও পরামর্শ দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে ক্ষতিগ্রস্ত ১২ টি পাহাড়ী-বাঙ্গালী পরিবারকে প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ প্রদান, ক্ষতিগ্রস্ত বৌদ্ধ মন্দির মেরামত ও সংস্কার এবং কমলছড়ি’র আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে শিগগির উদ্যোগ গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দেন সেনাবাহিনীর এরিয়া কমান্ডার।

খাগড়াছড়ির এমপি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরাও সরকারের তরফ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় সরকারের তরফ থেকে নানা সহযোগিতার কথা ঘোষণা করেন। কিন্তু এসময় তিনি কমলছড়ির ঘটনায় নিখোঁজ শিশু শহীদের উদ্ধারের বিষয়ে কোনো আলটিমেটাম দেননি। 

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন