পার্বত্যাঞ্চলে বাঙ্গালী সংগঠনগুলোর ডাকে ৭২ ঘন্টা হরতালের তৃতীয় দিন চলছে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনার মধ্য দিয়ে

আলমগীর মানিক,রাঙামাটি:
প্রস্তাবিত পার্বত্য ভূমি কমিশন সংশোধন আইন বাতিলের দাবীতে রাঙ্গামাটিতে বাঙ্গালী সংগঠনের ডাকা ৭২ ঘন্টার হরতালের আজ শেষ দিনের হরতাল চলছে। পার্বত্য সম অধিকার আন্দোলন গতকাল হরতাল প্রত্যাহারের ঘোষনা দিলেও অপর ৪টি বাঙ্গালী সংগঠন তা প্রত্যাখান করায় রাঙ্গামাটিসহ তিন পার্বত্য জেলায়  আজ হরতাল অব্যাহত রয়েছে।

সকাল থেকে শহরের অভ্যন্তরীন ও দুরপাল্লার সড়ক পথে সবধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। দোকান পাট খোলেনি। রাঙামাটি জেলার ছয়টি উপজেলার নৌ পথে কোন লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকার পাশাপাশি শহরের অভ্যন্তরে ও দুর পাল্লার সকল প্রকার যানবাহন বন্ধ রয়েছে। স্কুল, কলেজ ব্যাংক বীমা খোলা থাকলেও উপস্থিতি  একেবারেই কম দেখা গেছে। সকাল থেকে হরতাল সমর্থনকারীরা শিমুলতলী, মানিকছড়ি. ভেদভেদী, বনরুপা, কাঠালতলী, রির্জাভ বাজার, তবলছড়িতে পিকেটিং করছে। রাস্তায় টায়ার পুড়িয়েও গাছের গুড়ি ফেলে অবরোধ করে মিছিল করেছে হরতাল সমর্থন কারীরা। আইন শৃংখলা রক্ষায় শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

এদিকে ৭২ ঘন্টার হরতালের শেষ দিনে আজ বান্দরবানে হরতাল পালিত হচ্ছে কিছুটা ঢিলেঢালাভাবে। শহর থেকে দুর পাল্লার যানবাহন চলাচল না করলেও শহরের অভ্যন্তরে কিছু যানকাহন চলাচল করতে দেখো গেছে। শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বান্দরবান জেলা প্রশাসন সূত্রে জানাগেছে াাজ প্রধানমন্ত্রীর জন প্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্ঠা এইচটি ইমাম বান্দরবান সফরে আসছেন, তার সাথে বাঙ্গালী সংগঠন গুলোর প্রতিনিধিদের একটি দলকে বৈঠকে বসানোর ব্যাপারে জেলা প্রশাসক কর্তৃক প্রচেষ্ঠার চালানোর পদক্ষেপ হিসেবে সমঅধিকার আন্দোলনের একাংশ কতৃক হরতাল প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়া হলেও অন্য সংগঠনগুলো তা না মেনে হরতাল অব্যাহত রাখার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়।

অপরদিকে টানা ৭২ ঘন্টার হরতালের শুরুতে পিকেটিংয়ের দায়ে চেঙ্গী স্কয়ার ও দক্ষিণ বাজার এলাকা থেকে তিন হরতাল সমর্থক পিকেটারকে আটক করেছে খাগড়াছড়ি কোতয়ালী থানা পুলিশ। আটকৃতরা হলো মূছা (২০), রবিউল ইসলাম (১৯) ও আল আমিন(২০)। পুলিশ জানায় নাশকতার অভিযোগে সন্দেহভাজন হিসেবে তাদের আটক করা হয়েছে। এছাড়া হরতালে খাগড়াছড়ি শহরের অভ্যন্তরে ও দুর পাল্লার কোনো যানবাহন চলাচল করছেনা। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে জেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে নিরাপত্ত্বা জোরদার করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, সোমবার সন্ধ্যায় সমমনা অন্য দলগুলোর সাথে কোনো প্রকার আলাপ আলোচনা না করে হঠাৎ করে হরতাল প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয় পার্বত্য সমঅধিকার আন্দোলনের একাংশের তিন নেতা। এর প্রতিবাদে তাৎক্ষণিকভাবে রাঙামাটি শহরে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও মাইকিং করেছে পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদ, নাগরিক পরিষদ ও বাঙ্গালী ছাত্র ঐক্য পরিষদ ও সমঅধিকার আন্দোলন রাঙামাটি জেলা শাখার নেতৃবৃন্দ।

পার্বত্য চট্টগ্রাম সমঅধিকার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতাদের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে ৭২ ঘন্টার হরতাল অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে রাঙ্গামাটির স্থানীয় ৪টি বাঙ্গালী সংগঠন। গণমাধ্যমে হরতাল প্রত্যাহারের খবর আসার পর পরই হরতাল অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়ে শহরে মাইকিং করা হয়েছে। তবে পুলিশ রিজার্ভ বাজার হতে মাইক খুলে নিয়ে যায়।

সোমবার রাত ৯ টায় রাঙ্গামাটি সাংবাদিক ফোরাম কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ৭২ ঘন্টার হরতাল অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন পার্বত্য নাগরিক পরিষদ, পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদ, পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র ঐক্য পরিষদ ও রাঙ্গামাটি জেলা সমঅধিকার আন্দোলন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য নাগরিক পরিষদের আহবায়ক বেগম নুরজাহান, পার্বত্য সমঅধিকার আন্দোলনের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট আবছার, বাঙ্গালী ছাত্র ঐক্য পরিষদের সভাপতি উজ্জ্বল পাল, বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদের সভাপতি মোঃ ইব্রাহিম। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ৭২ ঘন্টার হরতালের প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত তারা প্রত্যাখ্যান করে মঙ্গলবার পর্যন্ত হরতাল পালিত হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন