parbattanews

পার্বত্য অঞ্চলে গাছ লুটের জন্য বন বিভাগ দায়ী

 কাঠ পাচার

ফসিহ উদ্দীন মাহতাব

পার্বত্য চট্টগ্রামের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের গাছ ও অন্যান্য সম্পদ লুটপাটে স্থানীয় বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জড়িত বলে অভিযোগ করেছে সশস্ত্র বাহিনী বোর্ড। সম্প্রতি সচিবালয়ে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় ওই অভিযোগ ওঠে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

তবে প্রধান বন সংরক্ষক ইউনুছ আলী বলেন, সভায় উত্থাপিত প্রতিবেদনটি সঠিক নয়। কারণ, পুরো পার্বত্য এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে পার্বত্য প্রশাসন। তা ছাড়া জোত পারমিটের গাছ, জোত থেকে কাটা গাছ পরিবহন, ডিপোতে স্থানান্তর ও চলাচলের জন্য বন বিভাগের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও আনসার ক্যাম্প এবং জেলা-উপজেলা প্রশাসনের অনুমোদন নিতে হয়। এসব ক্যাম্পকে ফাঁকি দিয়ে কাঠ পাচারের সুযোগ নেই। এ পরিস্থিতিতে বন কর্মকর্তারা কীভাবে কাঠ চুরি করবেন? তিনি আরও বলেন, কাঠ পাচারে ঢালাওভাবে বন বিভাগের ওপর দোষ চাপানো ঠিক হচ্ছে না।
ইউনুছ আলী জানান, আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভায় উত্থাপিত প্রতিবেদন সম্পর্কে আপত্তি জানানো হয়েছে। বন বিভাগের নামে আনা অভিযোগের বিপক্ষে যুক্তিও উপস্থাপন করা হয়েছে।
জানা গেছে, বৈঠকে সশস্ত্র বাহিনী বোর্ড অভিযোগ করে, বন কর্মকর্তাদের দায়িত্বে অবহেলা ও স্থানীয় প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের অবৈধ অর্থলিপ্সার কারণে প্রতিদিন বিভিন্নভাবে সংরক্ষিত এই বনাঞ্চল থেকে হাজার হাজার ঘনফুট কাঠ পাচার হচ্ছে। এ ছাড়া স্থানীয় প্রভাবশালীদের সঙ্গে যোগসাজশে বড় বড় গাছ কেটে বিক্রি করছে পাচারকারী চক্র। এসব কারণে এবং বনাঞ্চলের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে ছোট ছোট সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে।
জবাবে বন অধিদপ্তর থেকে ব্যাখ্যায় বলা হয়, পার্বত্য এলাকার পাহাড়ি জনগোষ্ঠী বনের ওপর নির্ভরশীল। তাদের জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে তারা বিভিন্ন অজুহাতে বনজ সম্পদ/বনভূমি জবরদখল করেছে। ২০১৪ সালের ২৯ জুলাই ঈদুল ফিতরের নামাজের সুযোগে তিনটি সশস্ত্র গ্রুপের ছত্রছায়ায় রাঙামাটি উত্তর বন বিভাগের গঙ্গারামকুল এলাকায় বনভূমি জবরদখল করে বুদ্ধমূর্তি স্থাপন করা হয়। বাধা দেওয়ায় বিরাজমান উত্তেজনায় বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চরম উৎকণ্ঠা, জান ও মালের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়ে। এ পরিপ্রেক্ষিতে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় থেকে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনের প্রত্যক্ষ সহায়তা চাওয়া হয়। প্রশাসন ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সহযোগিতায় পরিস্থিতি শান্ত হয়।
সভায় বন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, অবৈধভাবে কাটা গাছ পরিবহন, ডিপোতে স্থানান্তর ও চলাচলের জন্য বন বিভাগের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর বিদ্যমান ক্যাম্প ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে কাঠ পাচার করা সম্ভব নয়। তবে প্রয়োজনীয় জনবল ও আধুনিক অস্ত্রের অভাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার সংরক্ষিত বনভূমিতে সঠিকভাবে নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
বন অধিদপ্তর জানায়, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য এলাকায় রাঙামাটি অঞ্চলাধীন রাঙামাটি উত্তর, দক্ষিণ, জুম নিয়ন্ত্রণ, অশ্রেণীভুক্ত বনাঞ্চল, পাল্পউড বাগান বিভাগ, কাপ্তাই ও খাগড়াছড়ি বন বিভাগসহ ছয়টি বন বিভাগের ছয় লাখ ৮৭ হাজার ৭৬৮ দশমিক ৪৪ একর বনভূমি রয়েছে। বান্দরবান পার্বত্য এলাকায় চট্টগ্রাম অঞ্চলাধীন বান্দরবান বন বিভাগ, লামা বন বিভাগ ও পাল্পউড বাগান বিভাগ, বান্দরবানসহ তিনটি বন বিভাগের দুই লাখ ৭৮ হাজার ১১৬ দশমিক ৫৬ একর বনভূমি রয়েছে। এসব পার্বত্য এলাকায় রয়েছে অশান্ত পরিবেশ ও বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর অপতৎপরতা। প্রয়োজনীয় সংখ্যক জনবল না থাকায় দুর্গম এলাকায় নিরাপত্তাহীনতার কারণে বৃহৎ পাহাড়ি বনাঞ্চলে নিয়মিত টহল নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।
বন বিভাগের চট্টগ্রাম অঞ্চলের ৪৩২টি পদের বিপরীতে শতকরা ২০ ভাগ এবং রাঙামাটি অঞ্চলের এক হাজার ৩০২টি পদের বিপরীতে শতকরা ৩৫ ভাগ শূন্য রয়েছে। এ কারণে বনজ সম্পদ ও বনভূমির নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তা ছাড়া বন বিভাগের ব্যবহার করা যানবাহন ও আগ্নেয়াস্ত্র পুরাতন ও অপ্রতুল। ফলে অপ্রতুল জনবল, অপর্যাপ্ত অকেজো যানবাহন ও আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে বনভূমি ও বনজ সম্পদ রক্ষা করা অসম্ভব বলে জানায় বন বিভাগ।
বন বিভাগ আরও জানায়, পার্বত্য এলাকায় জুমচাষিদের কাছ থেকে হেডম্যান ও কারবারিদের মাধ্যমে খাজনা আদায়ের ঐতিহ্যগত রীতি রয়েছে। এটি বন বিভাগ নিয়ন্ত্রণ করে না। যুগ যুগ ধরে পাহাড়ি জনগোষ্ঠী পার্বত্য এলাকায় জুম চাষ করে আসছে। যে জায়গায় জুম চাষ হয়, সেখানে গাছপালাসহ আগাছা কেটে রোদে শুকানোর পর আগুনে পোড়ানো হয়। জুম চাষের নির্ধারিত স্থানে আগুন লাগানোর কারণে গাছপালা ধ্বংসসহ মাটির উপকারী পোকামাকড়ও ধ্বংস হচ্ছে। ফলে বন বিভাগ জুম চাষে নিরুৎসাহিত করে আসছে।
– সূত্র: দৈনিক সমকাল
Exit mobile version