parbattanews

পার্বত্য চট্টগ্রামে বর্ডার রোড, প্রত্যাহাকৃত সেনাক্যাম্পে বিজিবি, পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হবে

All-focus

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, তিন পার্বত্য জেলা থেকে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, মাদক নির্মূল করা হবে। শান্তিচুক্তির নিয়মানুযায়ী যেসব স্থান থেকে সেনা ক্যাম্প উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে সেখানে বিজিবি, পুলিশ এবং র‌্যাব মোতায়েন করা হবে।

তিনি বলেন, তিন পার্বত্য জেলাসমূহে বিদেশী কূটনীতিকদের ভ্রমণের সময় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সার্বক্ষণিক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিযু্ক্ত করা হয়। কিন্তু বিদেশী কূটনীতিকবৃন্দ আঞ্চলিক দলগুলোর সাথে বৈঠকের সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের থাকার অনুমতি দিতে চান না। এ সমস্ত বৈঠকে জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়োগ করা প্রয়োজন।

বুধবার (১৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে এবং জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে তিন পার্বত্য জেলার আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত দীর্ঘ সাড়ে তিনঘন্টা বিশেষ সভা শেষে স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে ব্রিফিংয়ের সময়  তিনি এসব কথা বলেছেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, পুলিশ এবং বিজিবি’র জন্য আধুনিক সরঞ্জাম এবং হেলিকপ্টারের ব্যবস্থা করা হবে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য লজিস্টিক সাপোর্ট (যন্ত্রপাতি সহযোগিতা) প্রদান করা হবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল জানান, ১৯৯৬ সালে  তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তথা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শান্তিচুক্তির মাধ্যমে পাহাড়ে শান্তির সুবাতাস এনেছেন। এই ধারা অব্যাহত রাখা হবে। পাহাড়ি-বাঙালী সকল সম্প্রদায় মিলেমিশে বসবাস করতে পারে এ বৈঠকের মাধ্যমে সে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পাহাড়ে কোন অবস্থাতেই শান্তিপ্রিয় পাহাড়ি-বাঙালির অবস্থান ধ্বংস করা যাবে না। পাহাড়েও সন্ত্রাস, জঙ্গি ও মাদকের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত জিরো ট্রলারেন্স নীতি অনুসরণ করা হবে। এই অঞ্চলকে শান্তির জায়গা হিসেবে গড়ে তোলতে চাই।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, তিন পার্বত্য জেলায় হঠাৎ করে রক্তপাত শুরু হয়েছে। সন্ত্রাসীরা নির্বিচারের জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে নির্বাচনী কর্মকর্তা পর্যন্ত সকলকে হত্যা করছে। তাদের কাছ থেকে সাধারণ মানুষও রেহাই পাচ্ছে না। এদেশে কোন সন্ত্রাসী ও জঙ্গি গোষ্ঠী থাকবে না। যে কোন মূল্যে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে। এসব অভিযান পরিচালনা করার জন্য সরকারের বিভিন্ন সংস্থাকে যেভাবে সহায়তা করা প্রয়োজন সব কিছু করতে প্রস্তুতি রয়েছি।

তিনি আরো বলেন, কোন অবস্থাতেই পাহাড়ে শান্তি শৃঙ্খলা নষ্ট করা যাবে না। তিন জেলার এমপির সাথে কথা বলেছি। এখানে নিয়োজিত আর্মি,পুলিশ এবং বিজিবিসহ সকল সংস্থার সঙ্গেও কথা বলেছি এবং দূর্বলতা কোথায় রয়েছে তা নিয়ে আলোচনা করেছি। পাহাড়ে শান্তিচুক্তির ধারা অব্যাহত থাকবে। এখানে কিছু দুর্গম এলাকা রয়েছে, সেখানে যাওয়ার জন্য পদক্ষেপ নেয়া হবে এবং একই সঙ্গে সীমান্ত সড়ক নির্মাণ করা হবে। এখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য সকল ধরণের সহায়তা প্রদান করবো। তিনি এ বিষয়ে সকলের সহায়তা কামনা করেছেন।

মন্ত্রী আরও জানান, আমাদের দু’পাশে ভারত এবং মায়ানমার সীমান্ত রয়েছে। তাই সারাদেশের ন্যায় তিন পার্বত্য জেলায় খুব শীঘ্রই বর্ডার রোডের কাজ শুরু করা হবে। রোডগুলোর কাজ শুরু করা হলে সন্ত্রাসীরা টিকে থাকতে পারবে না। সেখানে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত করা হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করা গেলে সন্ত্রাস নির্মূল হয়ে যাবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল আরো জানান, ১৯৯৭ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তথা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শান্তি চুক্তির মাধ্যমে পাহাড়ে শান্তির সুবাতাস এনেছেন। এই ধারা অব্যাহত রাখা হবে। পাহাড়ি-বাঙালী সকল সম্প্রদায় মিলেমিশে বসবাস করতে পারে এ বৈঠকের মাধ্যমে সে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা আত্মসমর্পণ করতে চাইলে ভেবে দেখা হবে, স্বাভাবিক জীবনে ফেরার লক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের সন্ত্রাসীরা যদি ভুল স্বীকার করে আত্মসমর্পণের প্রস্তাব দেয়, তাহলে সরকার বিষয়টি ভেবে দেখবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।

এসময় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং, সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার, স্বরাষ্ট্র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এর-মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম, সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশন চট্টগ্রাম এরিয়া কমান্ডার জিওসি মেজর জেনারেল এস এম মতিউর রহমান, পুলিশের মহা-পুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম,  র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ানের (র‌্যাব) মহা-পরিচালক বেনজীর আহমেদ, বাংলাদেশ আনসার বাহিনীর মহা-পরিচালক মেজর জেনারেল কাজী শরীফ কায়কোবাদ, অতিরিক্ত সচিব সুদত্ত চাকমা ও তিন জেলার প্রশাসক, পুলিশ সুপার এবং সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা এ সভায় অংশগ্রহণ করেন।

সভায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নান বলেন, এক জেলায় অভিযান চালালে সন্ত্রাসীরা অন্য জেলায় পালিয়ে যায়। তাই তিন জেলায় একইসাথে চিরুনী অভিযান চালালে সকল অস্ত্র উদ্ধার করা যাবে। এসময় তিনি আরো বলেন, সীমান্তে রাস্তা করা গেলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারবে।

অনুষ্ঠানে রাঙামাটি জেলা পুলিশ সুপার আলমগীর কবির বলেন, বিগত ৫ বছরে রাঙামাটিতে ২৬টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, যেগুলোর সাথে এখানকার আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলো জড়িত।

তিনি বলেন, যেসব ক্যাম্পগুলো রয়েছে সেগুলো স্থায়ী করে দেয়া প্রয়োজন। পার্বত্য জেলার প্রত্যেকটি ইউনিয়ন, প্রত্যেকটি গ্রামে যদি আমরা আমাদের কর্তৃত্ব স্থাপন করতে পারি তাহলে এখানে সন্ত্রাসীরা কোণঠাসা হয়ে পড়বে।

এদিকে  অনুষ্ঠিত সভা সূত্রে জানা গেছে, তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে রাঙামাটি থেকে বেশি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।

চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১১টি বন্দুক, ১টি রিভলবার, ৪টি পিস্তল, ৯টি এলজি, ১টি শাটারগান, ১টি জি থ্রি রাইফেল, ২টি ম্যাগজিন, ৩৮টি কার্তুজ, ১১২টি গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।

চোরাচালান বিরোধী টাস্কফোর্স সংক্রান্ত ১২ হাজার ২৬৫টি অভিযান পরিচালনা করেছে। এই অভিযানে আটককৃত পণ্যমূল্য ২কোটি ৪৬লক্ষ ৮৫হাজার ৫৪৫টাকা। এ সংক্রান্ত ৭৮টি মামলায় ৯০জনকে আটক করা হয়েছে বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।

অন্যদিকে খাগড়াছড়ি জেলায় অস্ত্র আইনে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অস্ত্র আইনে ১৯টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

বান্দরবানে অস্ত্র আইনে ৩টি মামলা দায়ের করা হয়। চলতি বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১টি বন্দুক ও আগস্টে ২টি বন্দুক, ১৫টি সীসার বল, ১টি ছুরি ও ১টি লোহার পাইপ উদ্ধার করা হয়।

চোরাচালান বিরোধী টাস্কফোর্স ৩ হাজার ৫১৬টি অভিযান চালানো হয়। ৩৯ কোটি ৮৬লক্ষ ৮০হাজার ১১২টাকার পণ্য উদ্ধার করা হয়। এই ব্যাপারে ৪২২ মামলা দায়ের করা হলেও কোন আটক নেই বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।

Exit mobile version