ড. ফেরদৌস আহমদ কোরেশী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ স্থাপনের তীব্র বিরোধিতা করে প্রবন্ধ লিখেছেন। তার ভাষায়, সরকার পার্বত্য এলাকায় শিক্ষিত বাঙালিদের পুনর্বাসনের সুযোগ করে দেয়ার জন্য এ উদ্যোগ নিয়েছে। তিনি মনে করেন, ইতিপূর্বে দরিদ্র ও অশিক্ষিত বাঙালিরা সেখানে পুনর্বাসিত হয়েছে। পাহাড়িরা তাতে যতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এখন শিক্ষিত বাঙালিরা সেখানে পুনর্বাসিত হলে তারা তার চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ঐতিহাসিক কারণে পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠী এবং সুবিধাবঞ্চিত মানুষের প্রতি সহমর্মিতা প্রদর্শন অবশ্যই মহৎ কাজ। রোবায়েত ও তার বন্ধুরা নিশ্চয়ই সেই মনোভাব থেকেই এসব কথা বলছেন। তবে দুঃখজনক বিষয় হল, “আমাদের কিছু বুদ্ধিজীবী ও বামপন্থী রাজনীতিক দীর্ঘকাল ধরেই পাহাড়ি ও আদিবাসীদের প্রতি সহমর্মিতা দেখাতে গিয়ে এমনভাবে কথা বলেন যেন, এ দেশের সমতলের মানুষেরা সবাই পাহাড়ি বা আদিবাসী মানুষের শত্র“। তাদের রক্ষা করার মহৎ দায়িত্ব তাদের কাঁধে অর্পিত হয়েছে। তাদের লেখা পড়ে মনে হবে- এদের পিছিয়ে থাকার জন্য দেশের বাঙালি জনগণই দায়ী। এখন বাঙালিদের হাত থেকে তাদের রক্ষা করার গুরুদায়িত্ব পড়েছে কয়েকজন পাহাড়ি-দরদি এনজিও-বন্ধু মহৎ ব্যক্তির ওপর। তারা সুযোগ পেলেই বাঙালিদের বিরুদ্ধে কারণে-অকারণে ঢালাও বিষোদগার করে নিবন্ধ লিখছেন।
পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালি পুনর্বাসনের ব্যাপারটি নিয়ে অনেক বিতর্ক। একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের এক জেলার মানুষ অন্য একটি জেলায় যাবে, এ নিয়ে প্রশ্ন উঠবে কেন? রংপুরের মানুষ চট্টগ্রাম গেলে এবং সেখানে বসবাস করলে কি প্রশ্ন ওঠে? কিন্তু এ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। সে প্রশ্ন দেশের সীমানা ছাড়িয়ে ইউরোপ-আমেরিকা-অস্ট্রেলিয়া-জাতিসংঘ পর্যন্ত চলে যাচ্ছে। দেশের কোথাও বিরান এলাকা থাকলে অন্য এলাকার মানুষ সেখানে যাবে এটাই স্বাভাবিক। সরকারও সেসব এলাকায় তার খাস জমিতে ভূমিহীন মানুষকে পুনর্বাসিত করতে পারে। কিন্তু সে কাজটি এমনভাবে করা দরকার যাতে করে স্থানীয় জনগণের অসন্তোষের কারণ না ঘটে। পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে তৎকালীন সরকার এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন না করায় নানা সমস্যার উদ্ভব ঘটেছে।
বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির পত্তন যেভাবে ঘটেছে, তাতে কাঠামোগত ধারাবাহিকতায় তার কোনো জেলার আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের কোনো সুযোগ নেই। ১৯৪৭-এর আগে এটি ছিল চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসনের অধীন। ব্রিটিশ সরকার ১৯০০ সালে খ্রিস্টান মিশনারিদের চাপে এ অঞ্চলটিকে Partially excluded area ঘোষণা করে সেখানে পার্শ্ববর্তী সমতলের লোকজনের যাতায়াত নিয়ন্ত্রিত রাখে। লক্ষ্য সেখানকার বিভিন্ন পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকে বাইরের জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন ও পশ্চাৎপদ করে রাখা এবং তাদের এতদাঞ্চলের ইসলাম ও হিন্দু ধর্ম থেকে দূরে রেখে খ্রিস্টান মিশনারিদের অবাধে ধর্মপ্রচারের সুযোগ করে দেয়া (এ ব্যাপারে অনেক প্রামাণ্য দলিল-দস্তাবেজ রয়েছে)। সেভাবেই এটি পাকিস্তানে এসেছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার সময় এই সমগ্র অঞ্চল ছিল চট্টগ্রাম জেলার একটি মহকুমা। এই অঞ্চল কখনোই স্বায়ত্তশাসিত ছিল না। কিংবা পৃথক রাজ্য ছিল না।
স্বাধীন বাংলাদেশ হওয়ার পর এটি স্বাভাবিক নিয়মেই দেশের অন্যান্য জেলার মর্যাদায় অভিষিক্ত হয়েছে। বিশাল আয়তনের কারণে প্রশাসনিক সুবিধার জন্য এক জেলা তিন জেলা হয়েছে। ১৯৯৭ সালে তৎকালীন সরকার পার্বত্য এলাকার চাকমা বিদ্রোহীদের ভারত থেকে ফিরিয়ে আনতে গিয়ে তাদের সঙ্গে যে শান্তি চুক্তি করে, সেই চুক্তির কিছু ধারা সরকারকেই উভয় সংকটে ফেলেছে। কোনো স্বাধীন রাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক তার কিছু বিদ্রোহী নাগরিকের সঙ্গে এ ধরনের সমানে-সমান চুক্তি স্বাক্ষর করার নজির আর কোথাও পাওয়া যায় না। একটি এককেন্দ্রিক দেশের বিশেষ কোনো জেলাকে অন্যান্য জেলা থেকে পৃথক মর্যাদা দেয়ার ক্ষমতা সরকারের থাকে না। এজন্য রাষ্ট্র-কাঠামোর পরিবর্তন আবশ্যক (ভারত একটি ফেডারেল রাষ্ট্র হওয়ায় তার পক্ষে নতুন রাজ্য গঠন করে বিকেন্দ্রীকরণ অনেক সহজ)।
তবে শান্তি চুক্তি থাকুক বা না থাকুক, রাষ্ট্র তার কোনো পশ্চাৎপদ অংশের কল্যাণের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা অবশ্যই নিতে পারে। আমাদের দেশের নাগরিকদের কোনো অংশের, বিশেষ করে ধর্ম, বর্ণ বা অঞ্চল ভিত্তিতে প্রশাসনিক, সাংস্কৃতিক বা জাতিগত প্রশ্নে বিশেষ সুবিধা বা রক্ষাকবচ প্রদানে কোনো বাধা নেই। আমাদের পাহাড় ও সমতলের বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জন্য সে ধরনের সংরক্ষণমূলক ব্যবস্থা নিয়ে কোনো প্রশ্ন ওঠে না। সব খণ্ডজাতি, উপজাতির পৃথক জাতিসত্তার স্বীকৃতি এবং তাদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা ও অগ্রাধিকার দিয়ে স্বল্পতম সময়ে অন্যদের সমপর্যায়ে উন্নীত করা রাষ্ট্রের মৌলিক কর্তব্য। কিন্তু আঞ্চলিক বা গোষ্ঠীগত দাবি-দাওয়াকে যদি এমন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়, যখন রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা এবং জাতীয় ঐক্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়, জাতি দীর্ঘমেয়াদি সংকটে নিক্ষিপ্ত হয়, তাহলে তাকে দেশদ্রোহিতা বলতে হয়।
১৯৯৭ সালে কথিত শান্তি চুক্তি যারা মুসাবিদা করেছেন এবং যারা অনুমোদন করেছেন, তারা এদিকে লক্ষ্য রেখেছেন বলে মনে হয় না। এই চুক্তি ইতিহাস, ভূগোল, প্রতিরক্ষা ও ভূ-রাজনীতির প্রতি সংশ্লিষ্টদের সীমাহীন অবজ্ঞা-উপেক্ষার কুতুব-মিনার হয়ে বিরাজ করছে। যা কোনো সরকারই কার্যকর করতে পারছে না। যাদের কল্যাণের কথা বলে এ কাজটি করা হয়েছে তাদেরও চিরস্থায়ী সংঘাতে ঠেলে দেয়া হয়েছে। পার্বত্য এলাকার মানুষ এখন বহুমুখী সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির শিকার হয়ে নিজভূমে পরবাসী। শান্তি চুক্তি শান্তির পরিবর্তে নতুনতর অশান্তি আমদানি করেছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে বিদেশী মিশনারি সংগঠনগুলো তাদের নীল নকশা অনুযায়ী কাজ করছে সুদীর্ঘকাল ধরে। পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণকে একটি পৃথক জাতিসত্তায় একত্রিত করার প্রয়াস তারই একটি অংশ।
পার্বত্য চট্টগ্রামের ছোট-বড় ১২টি বিভিন্ন উপজাতিকে একজোটে জুম্ম জাতি নামে অভিহিত করা হচ্ছে। পৃথিবীতে জুম্ম জাতি বলে কোনো জাতি কখনও ছিল না, এখনও নেই। জুম্ম জাতি বলে বোঝানোর চেষ্টা হয়- যারা জুম পদ্ধতিতে চাষ করে। পাহাড়ের গায়ে হালচাষ করে চাষাবাদ করা যায় না। জঙ্গল কেটে আগুন জ্বালিয়ে জমি তৈরি করতে হয় এবং নির্দিষ্ট এলাকায় একবার চাষ করে পরবর্তীকালে অন্য এলাকায় গিয়ে একইভাবে জমি তৈরি করে চাষ করতে হয়। এভাবে একদল মানুষ ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন পাহাড়ে চাষাবাদ করে। পৃথিবীর বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় এভাবেই চাষ করতে হয়। কিন্তু এভাবে যারা চাষ করে ফসল ফলায় তারা সবাই এক জাতি- এই তত্ত্ব একেবারেই অভিনব। সম্ভবত পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্যই বিশেষভাবে উদ্ভাবিত।
পার্বত্য চট্টগ্রামের ১২ উপজাতির প্রতিটির নৃ-তাত্ত্বিক পরিচয়, ইতিহাস, ভাষা, শারীরিক গঠন, সমাজ কাঠামো, খাদ্যাভ্যাস- সবকিছুই পৃথক। তাদের কোনোভাবেই এক জাতি বলা যায় না। তবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী হিসেবে তারা ধীরে ধীরে বাংলাদেশের সামগ্রিক পরিবেশে বাংলাদেশী জনজীবনের সঙ্গে একাত্ম হয়ে উঠছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ইংরেজ প্রবর্তিত হিল ট্র্যাক্টস্ ম্যানুয়েল-এর কারণে গড়ে ওঠা বিচ্ছিন্নতার অবসান ঘটেছে। এখন প্রশাসনিক অবকাঠামো বিস্তারের কারণে পারস্পরিক যোগাযোগ এবং আদান-প্রদান ও শিক্ষার প্রসারের মধ্য দিয়ে সব ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষ বাংলা ভাষা বুঝতে এবং এ ভাষায় কথা বলতে অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন। যেভাবে গত সহস্র বছরে বহু জনগোষ্ঠী, বহু ভাষা, বহু জাতি-উপজাতি একীভূত হয়েছে- এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম ঘটার কোনো কারণ নেই। পৃথিবীর সর্বত্রই এই জাতিগত সংমিশ্রণ অব্যাহতভাবে চলে আসছে। এটাই প্রকৃতি ও প্রগতির ধর্ম। এটা যেমন জোর করে চাপিয়ে দেয়া অন্যায়, তেমনি কালের প্রবাহে এই নিয়ত-সংমিশ্রণে বাধা সৃষ্টি করাও হবে প্রকৃতি বিরুদ্ধ।
আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি বড় উপজাতি- চাকমা, মারমা, টিপ্রা- তাদের নিজস্ব ঐতিহ্যগত ভাষা-সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্য ও ধর্মবিশ্বাসে এখনও কমবেশি স্থিত। তাদের বাঙালি বানানোর চেষ্টা যেমন অবান্তর, তেমনি তাদের একক জাতীয়তায় পরিচিত করার চেষ্টাও অর্থহীন। সংখ্যাল্পতার কারণে পার্বত্য এলাকার অপর ৯টি ক্ষুদ্রতর উপজাতির অবস্থা খুবই শোচনীয়। পৃথক পরিচয়ে আলাদা দাঁড়ানোর মতো জনসংখ্যা তাদের নেই। ফলে তারা খ্রিস্টান মিশনারিদের টার্গেট গ্রুপ হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার এবং দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর অবজ্ঞা-অবহেলার কারণে তাদের বিরাট অংশ ইতিমধ্যেই খ্রিস্টান হয়ে গেছে। যদিও সারা দুনিয়ায় প্রচার করা হয় তাদের জোর করে মুসলমান বানিয়ে ফেলা হচ্ছে। বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় খ্রিস্টান মিশনারিরা পার্বত্য এলাকা চষে বেড়াচ্ছে এবং পাহাড়িদের দারিদ্র্য ও পশ্চাৎপদতার সুযোগ নিচ্ছে। কেবল অসংখ্য চার্চ সংগঠনই নয়, ইউএনডিপি, বিশ্বব্যাংকের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও এই ধর্মান্তরকরণে প্রত্যক্ষ ছত্রছায়া দেয়। আমাদের সমতলের বিভিন্ন স্থানে যেসব ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী রয়েছে (যাদের আদিবাসী নামে অভিহিত করা হয়, যদিও এ নামকরণ বিভ্রান্তিকর), তাদের অবস্থাও তথৈবচ। তাদেরও খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরিত করার জন্য সর্বাত্মক প্রয়াস চলছে।
কেউ স্বেচ্ছায় খ্রিস্টান হয়ে গেলে তাতে বাধা দেয়া অন্যায়। কিন্তু বিশেষ রাজনৈতিক লক্ষ্যে বৈষয়িক সুযোগ-সুবিধার বিনিময়ে ধর্মান্তর অনৈতিক ও অগ্রহণযোগ্য। এটি এখন পশ্চিমের পুঁজিবাদী দেশগুলোর বিশ্ব বিজয়ের নীল নকশারই অন্যতম প্রধান কর্মযজ্ঞ। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নিজেদের প্রভাববলয় নির্মাণের জন্য জনসংখ্যা বিন্যাসে পরিবর্র্তন ঘটানো, এমনকি যেখানে সম্ভব নতুন খ্রিস্টান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সুপরিকল্পিত উদ্যোগ- যার পরিণতি পূর্ব তিমুর ও দক্ষিণ সুদান নামে দুটি নতুন খ্রিস্টান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং একদা আফ্রিকার বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে খ্যাত নাইজেরিয়ার খ্রিস্টানপ্রধান রাষ্ট্রে পরিণত হওয়া। এখন এ প্রকল্পের শীর্ষে রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম।
বাংলাদেশকে এ ব্যাপারে অবশ্যই সতর্কতা, ধৈর্য ও সংযমের সঙ্গে কাজ করতে হবে। খ্রিস্টধর্ম প্রচারকরা দুনিয়াজুড়ে হতদরিদ্র ও পিছিয়ে থাকা মানবগোষ্ঠী খুঁজে বের করে পরিকল্পিতভাবে সেগুলোকে খ্রিস্টীয় বলয়ে আনার জন্য সর্বাত্মক প্রয়াসে লিপ্ত। তাদের বিপুল সম্পদ এবং পরিকল্পিত উদ্যোগের সামনে অন্যরা অসহায়। এটা খুবই স্বাভাবিক যে, নব-দীক্ষিত খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা খ্রিস্টান চার্চ এবং বিভিন্ন খ্রিস্টান এনজিওর মাধ্যমে সরাসরি পশ্চিমের চিন্তাধারা ও জনজীবনে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ পায়। পিছিয়ে থাকা ও প্রায় জনবিচ্ছিন্ন পার্বত্য অঞ্চল বা বনভূমি থেকে সরাসরি ইউরোপ-আমেরিকার হাতছানি অপ্রতিরোধ্য হওয়াই স্বাভাবিক। বিশেষ করে যারা অন্যান্য প্রতিষ্ঠিত ধর্মমতের বাইরে এবং প্রাগৈতিহাসিক জীবনে রয়েছে, তারা এতে আকৃষ্ট হবে না কেন?
পার্বত্য চট্টগ্রামের এবং আমাদের বনাঞ্চলের ছোট জনগোষ্ঠীগুলো এ কারণেই খ্রিস্টধর্মের আওতায় চলে যাচ্ছে। এর পরিণতি সুদূরপ্রসারী। তাদের সুপরিকল্পিতভাবে পারিপার্শ্বিক সমতলবাসীদের থেকে আলাদা করে রাখা এবং সমতলের মানুষের সঙ্গে তাদের দূরত্ব সৃষ্টি করে রাখা খ্রিস্টীয় ধর্ম প্রচারকদের প্রধান রণকৌশল। যা তারা সর্বত্র প্রয়োগ করে আসছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে যা ঘটছে, তা এ প্রকল্পেরই অংশ হবে, তাতে বিচিত্র কী!
আর সে জন্যই পার্বত্য চট্টগ্রামে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটলে এবং সেখানে দেশের অন্যান্য জেলার শিক্ষিত মানুষদের আনাগোনা বাড়লে তাতে শংকিত না হয়ে স্বাগত জানানোই যুক্তিসিদ্ধ। রোবায়েত ও তার সঙ্গীরা সে বিষয়টি মাথায় রাখলে খুশি হব।
ড. ফেরদৌস আহমদ কোরেশী : রাজনীতিক, ভূ-রাজনীতি ও উন্নয়ন গবেষক
shapshin@gtlbd.com