parbattanews

পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিচুক্তি-পূর্ব সংঘাতময় পরিস্থিতি বিরাজ করছে : রাশেদ খান মেনন

পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিচুক্তি পূর্ব সংঘাতময় পরিস্থিতি বিরাজ করছে জানিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি বলেছেন, স্থানীয় অধিবাসীদের উপর রাষ্ট্রীয় দমন-নির্যাতন অব্যাহত রয়েছে। শান্তিচুক্তির ২৩ বছরেও চুক্তির চার-তৃতীয়াংশ বাস্তবায়ন ঘটেনি। এ নিয়ে পাহাড়িদের মধ্যে হতাশা আরও ঘণীভূত হচ্ছে। পাহাড়ি-বাঙালি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এক হয়ে কাজ করলে এ অবস্থার সুরাহা করা সম্ভব।

বুধবার (২ ডিসেম্বর) পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৩তম বার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন। রাজধানীর ধানমণ্ডিতে উইমেন্স ভলান্টারী এসোসিয়েশনে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলুন’-শিরোনামে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

মেইনথিন প্রমীলার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং। এতে শুভেচ্ছা বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সহ-সাধারণ সম্পাদক পল্লব চাকমা।

আলোচনা সভায় অনলাইনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি রাশেদ খান মেনন। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে বিরাজমান পাহাড়ি-বাঙালি সংঘাত নিরসনে শান্তি আনয়নের লক্ষে জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনী দিয়ে শান্তি আনতে চেয়েছিলেন। পরবর্তীতে এরশাদসহ স্বৈরশাসকরা তাদের শোষণ নিপীড়ন চালিয়েছে এ অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের উপর। কিন্তু পরবর্তীতে গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় আসলেও বন্ধ হয়নি শোষণ নির্যাতন। বন্ধ হয়নি হানাহানি, কেন? এ হানাহানি কি বন্ধ করা যেতনা? শান্তিচুক্তির ২৩ বছরেও এর পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। যেখানে এদিন ছিলো একটি আনন্দের দিন। আমরা এদিন সবাই মিলে উদযাপন করতাম, কিন্তু দু:খের ব্যাপার হচ্ছে এখনও চুক্তি বাস্তবায়নে আমাদের আন্দোলন করতে হচ্ছে।

মেনন বলেন, শান্তিচুক্তির বাস্তবায়ন না হওয়া শুধুমাত্র পাহাড়িদের সমস্যা না। এটি পুরো বাংলাদেশের সমস্ত জাতিসত্তার সমস্যা। এই সমস্যা বাঙালি-পাহাড়ি সবাইকে মিলেই সুরাহা করতে হবে।

অনুষ্ঠানে ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পংকজ ভট্টাচার্য বলেন, পাহাড়ের জম্মু জনগোষ্ঠীর মাঝে যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি চলছে বহুদিন ধরে এর সমাধানে শান্তিচুক্তির বাস্তবায়ন জরুরী ছিলো। কিন্তু এতো বছরেও এই চুক্তির বাস্তবায়ন হলোনা। বরং পাহাড়ে খুন, জখম অপহরণ বেড়ে গেছে। গুম-খুনে অস্থিতিশীল পার্বত্য অঞ্চল। শাসকগোষ্ঠীর দমন পীড়ন আগের মতোই অব্যাহত রয়েছে। পার্বত্য অঞ্চলে এখনও চুক্তি-পূর্ব অবস্থা বিরাজমান। তবে এই দু:খবোধে আমরা আর থাকতে চাইনা। আমরা চাই শান্তিচুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন। এই আশাবাদ রাখতে চাই।

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সদস্য রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের স্বপ্নভঙের বেদনা এখনও পোড়াচ্ছে। উন্নয়নের নামে সেখানে বৈষম্য হচ্ছে। পার্বত্য অঞ্চলে এতো উন্নয়ন হলে পাহাড়ি শিশু ও নারীরা পুষ্টিহীণতায় ভুগছে কেন? তিনি বলেন, প্রকৃতি ধ্বংস করে, জীবনমানের ক্ষতি করে উন্নয়নে কোন লাভ নেই। উন্নয়ন করলে সেটা হতে হবে জীবনমানের। পাহাড় কেটে বড় বড় স্থাপনা বানালেই উন্নয়ন হয়না।

সাংবাদিক গোলাম মোর্তুজা বলেন, রাষ্ট্রের মূল চরিত্র পরিবর্তন না হলে পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যার সমাধান হবেনা। তিনি বলেন, উন্নয়ন জরুরী নয়, জরুরী জীবনমানের উন্নয়ন। পাহাড়িদের পাহাড়ের রাজনীতি বাদ দিয়ে আখের গোছানোর জন্য যে জাতীয় রাজনীতি এর পরিবর্তন করতে হবে। পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের স্বার্থে কাজ করতে হবে। পাহাড়ি-বাঙালি দেশের সবাইকে মিলেই আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং অতি দ্রুত শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের দাবি তুলে বলেন, ২৩ বছরেও শান্তিচুক্তির বাস্তবায়ন হলোনা। সরকার দাবি করছে চুক্তির ৭৩টা ধারার মধ্যে ৪৮টা ধারা বাস্তবায়ন হয়েছে যা তাদের কল্পনাপ্রসূত ভাবনা। শান্তিচুক্তির মূল যে ধারাগুলো সেগুলোই এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। পার্বত্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের মৌলিক অধিকারেরই বাস্তবায়ন ঘটেনি। মানুষের মৌলিক অধিকার আদায়ে সমতলে, পাহাড়ে সব ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের এক হয়ে আন্দোলন করা উচিত। প্রয়োজনে সরকারের সঙ্গে সংলাপেও বসা যেতে পারে।

অনুষ্ঠানে অনলাইনে যুক্ত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক মেজবাহ কামাল, সাংবাদিক গোলাম মুর্তজা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তানজিম উদ্দিন খান। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কবি ও সাংবাদিক সোহরাব, কুষ্টিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফারাহ তানজিম তিতিল।

Exit mobile version