পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর অবস্থান বিষয়ে টিআইবি’র বক্তব্যে নিন্দার ঝড়

http://parbattanews.com/wp-content/uploads/2013/05/Cirdap-Nazmul-bg201305180635561.jpg

ডেস্ক নিউজ:

গত ১৮ মে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে টিআইবি আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে অস্থায়ী সেনাক্যাম্প প্রত্যাহার, সামরিক শক্তির উপস্থিতির কারণে স্থানীয় প্রশাসনের ক্ষমতা খর্ব এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠিদের অধিকার হরণের কথা বলে যে সব বক্তব্য দেয়া হয়েছে তাতে ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছে পার্বত্যাঞ্চলের বাঙালীরা। এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে এ অঞ্চল বিভিন্ন অরাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন। তারা টিআইবি’র এ বক্তব্যকে ষড়যন্ত্রমুলক ও উদ্দেশ্য প্রণদিত বলে আখ্যায়িত করেছেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম সমঅধিকার আন্দোলন, পার্বত্য নাগরিক পরিষদ,  পার্বত্য যুব ফ্রন্ট পৃথক পৃথক বিবৃতিতে টিআইবি’র বক্তব্যকে অসত্য, উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে আখ্যা দিয়েছে।

টিআইবি সিএইচটি কমিশনের দালালি করছে – সমঅধিকার আন্দোলন

দেশের এক ও অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে টিআইবি’র বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমঅধিকার আন্দোলন। টিআইবি সিএইচটি কমিশনের দালালি করছে বলে মন্তব্য করেন তারা।

রবিবার সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক যুক্ত বিবৃতিতে তিন পার্বত্য জেলার বৃহত্তম অরাজনৈতিক মানবাধিকার সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম সমঅধিকার আন্দোলনের সভাপতি মশিউল আলম হুমায়ুন, মহাসচিব মনিরুজ্জামান মনির, রাঙামাটি জেলার নেতা জাহাঙ্গীর কামাল, হাজী ইউনুস কমিশনার, বান্দরবানের আব্দুল কুদ্দুস, সেলিম চৌধুরী ও খাগড়াছড়ি জেলার মো. আনোয়ারুল্লাহ ও খন্দকার জিহাদ আবেদীন উপরোক্ত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

পাহাড়ের সন্ত্রাসবিরোধী এ আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ বলেন, এডভোকেট সুলতানা কামাল, ড. ইফতেখারুজ্জামান, স্বপন আদানান, খুশি কবির, ইয়াসমীন হক, জেড আই পান্না, মেঘনা গুহ প্রমুখ ব্যক্তিরা কেউই পাহাড়ের বাসিন্দা নন। সন্তু, দেবাশীষ, গৌতম ও জুয়েল দেওয়ানরা যা বলেন, এরা তারই প্রতিধ্বনি করেন মাত্র।

টিআইবি কি চায় জুম জাতি, জুম ল্যান্ড, জুম সংবাদ বুলেটিন, জুম কন্ঠ, জুম লিবারেশন ফ্রন্ট ইত্যাদি শব্দ গুলো বাস্তবায়িত হয়ে বাংলাদেশ দ্বিখন্ডিত হয়ে যাক? চাঁদাবাজীই যেখানে পাহাড়ের লক্ষাধিক উপজাতীয় সন্ত্রাসীর এক মাত্র আয়ের উৎস, তার থেকে পরিত্রাণ লাভের কোন উপায় ঢাকার গোলটেবিল বৈঠক থেকে বক্তারা বের করতে পারেন নাই। যা অত্যন্ত দুঃখজনক।

পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে দেশ বিরোধী আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের সাথে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছে টিআইবি- পাবর্ত্য নাগরিক পরিষদ

পার্বত্য নাগরিক পরিষদের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আলকাস আল মামুন বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে টিআইবি যে বক্তব্য দিয়েছে তা শুধু অসত্যই নয়, উদ্দেশ্য প্রণোদিতও বটে। এ ধরণের বক্তব্য প্রদানের এখতিয়ার টিআইবি’র নেই। বাংলাদেশের দুর্নীতি নিয়ে কাজ করা একটি সংগঠন ধীরে ধীরে মুখোশ খুলে রাজনীতিসহ সব বিষয় নিয়ে কথা বলা শুরু করেছে। এদেরকে এখানেই থামাতে হবে।

ইঞ্জিনিয়ার মামুন বলেন, টিআইবি’র এই বক্তব্য নতুন কিছু নয়। এ সংগঠনের প্রেসিডেন্ট পদে থাকা সুলতানা কামাল দীর্ঘদিন ধরেই পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে রাষ্ট্রবিরোধী আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের সাথে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন। একই সাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক আন্তর্জাতিক কমিশনের কো চেয়ার হিসাবে দীর্ঘদিন ধরেই তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার পালিয়ে আসছিলেন। এখন টিআইবিকে ব্যবহার করে তার সেই পুরাতন অবস্থানকেই পুনর্ব্যাক্ত করেছেন মাত্র।

তিনি বলেন, টিআইবি’র নামে এই অনুষ্ঠান ডাকা হলেও মূলত: এখানে তথাকথিত পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক আন্তর্জাতিক কমিশনের নেতারাই বক্তব্য রাখেন এবং তাদের অবস্থানও এক। টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালকও ঐ বিতর্কিত প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত। মূলত: পার্বত্য চুক্তি বিষয়ে শন্তু লারমার কথিত অলিখিত চুক্তি বাস্তবায়নে চাপ সৃষ্টির লক্ষ্যে টিআইবিকে ব্যবহার করে এই ধরণের বক্তব্য দেয়া হয়েছে বলেও দাবী করেন তিনি।

দেশের উচ্চ আদালত যখন পার্বত্য চুক্তিকে অবৈধ ও অসাংবিধানিক বলে আখ্যা দিয়েছে সেখানে সেই চুক্তি বাস্তবায়নের দাবী তোলা অবান্তর মন্তব্য করে ইঞ্জিনিয়ার মামুন বলেন, সেনাবাহিনীকে নিয়ে টিআইবি’র এই বক্তব্য অসত্য ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জে. নুরউদ্দীন খান, বর্তমান মহাজোটের শরীক, সাবেক প্রেসিডেন্ট ও জাপা চেয়ারম্যান জেনারেল এরশাদ জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে সুস্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী না থাকলে এই অংশ বহু আগেই বাংলাদেশের হাতছাড়া হয়ে যেত।

তিনি বলেন, সেনাবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামে শুধু জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও জনগনের জানমালের নিরাপত্তা বিধানই করছেনা বরং সেবা ও শান্তিরক্ষায় এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সেবা ও শান্তিরক্ষায় পার্বত্য চট্টগ্রামে অর্জিত এই অভিজ্ঞতা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিশ্বের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দিয়ে দেশের জন্য বয়ে এনেছে দুর্লভ সম্মান। পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর সেই গর্বিত অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলে টিআইবি বরং দেশের এক দশমাংশ এই ভূখণ্ড নিয়ে পরিচালিত আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের সাথে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছে।

পার্বত্যাঞ্চলে সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহারের বক্তব্য দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রের সামিল : পার্বত্য যুব ফ্রন্ট

পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা অবস্থান বিষয়ে টিআইবি’র বক্তব্যকে দেশ ও দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর বিরুদ্বে অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রের অংশ বলে আখ্যায়িত করেছে পার্বত্য যুব ফ্রন্ট।

রবিবার সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুল্লাহ আল-মাসুদ গণমাধ্যমে এক বিবৃতিতে এসকল দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ ও পার্বত্যবাসীকে সতর্ক থাকার আহবান জানান।

এসব ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে অতিসত্বর পদক্ষেপ গ্রহণ ও প্রতিরোধ করার দাবী জানিয়েছে তারা। অন্যথায় পার্বত্যবাসীকে সাথে নিয়ে আগামী দিনে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন