ভূমি অধিগ্রহণে জেলা পরিষদের অনুমতি গ্রহণের সুপারিশ রেখে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড বিল সংসদে উত্থাপিত
পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:
পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি অধিগ্রহণ করতে পার্বত্য জেলা পরিষদের অনুমোদন লাগবে জাতীয় সংসদে উত্থাপিত ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড আইন-২০১৪’-এ এই বিধান যুক্ত করার সুপারিশ করে বিলটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সংসদে প্রতিবেদন উত্থাপন করেছে সংসদীয় কমিটি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড বিল ২০১৪-এর ওপর পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির রিপোর্ট আজ সংসদে উপস্থাপন করা হয়েছে। কমিটির সভাপতি র, আ, ম, উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী রিপোর্টটি উপস্থাপন করেন। রিপোর্টে বিলটি সংশোধিত আকারে পাসের সুপারিশ করা হয়।
এর আগে বিকেল ৫টা ২৫ মিনিটে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরু হয়।
সংসদীয় কমিটির প্রতিবেদনে বিলটি পাসের সুপারিশ করা হয়েছে। আর বিলের ১৫ দফায় সংশোধনী এনে ‘বোর্ড ভূমি অধিগ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট পার্বত্য জেলা পরিষদের অনুমোদন গ্রহণ করবে’এই শব্দগুলো প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যানকে যুগ্মসচিবের এবং সদস্যদের উপ-সচিবের ন্যায় সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন ও চলমান রাখতে বিদ্যমান পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড অধ্যাদেশ রহিত করে তা পুনপ্রণয়নের জন্য গত ৮ এপ্রিল পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উ শৈ সিং বিলটি উত্থাপন করেন।
এর আগে গত ২২ এপ্রিল সংসদীয় কমিটির বৈঠকে বিলটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য কমিটির সদস্য সুবিদ আলী ভূইয়াকে আহ্বায়ক এবং কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা ও উষাতন তালুকদারকে সদস্য করে একটি সাব কমিটি গঠন করা হয়। সাব কমিটির সুপারিশের আলোকে বিলে বেশ কিছু সংশোধনী এনে সংসদে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিলে বলা হয়, এই আইন কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড নামে একটি বোর্ড প্রতিষ্ঠিত হবে। যার প্রধান কার্যালয় থাকবে পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটিতে। এছাড়া বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে তার শাখা স্থাপন করা যাবে। সরকারের নিয়োগ করা বোর্ডের একজন চেয়ারম্যান, একজন ভাইস চেয়ারম্যান ও চার জন সদস্য থাকবে। তবে নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকার উপজাতীয়দের অগ্রাধিকার দেবে।
চেয়ারম্যান বোর্ডের প্রধান নির্বাহী হবেন। এই বোর্ড জনসংখ্যা, আয়তন ও অনগ্রসরতা বিবেচনা করে পার্বত্য জেলা সমূহের উন্নয়নে প্রকল্প ও স্কিম প্রণয়ন, অনুমোদিক প্রকল্প ও স্কিম বাস্তবায়ন, বাস্তবায়ন কাজ তদারকি এবং বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার আর্থিক সহায়তায় বাস্তবায়িত প্রকল্পের তদারকিসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য কাজ সম্পাদন করবে। বোর্ডের তহবিলের জন্য সরকার সর্বোচ্চ ৩ কোটি টাকা প্রদান করবে।
এছাড়া অন্যান্য খাত থেকে পাওয়া অর্থে তহবিল গঠিত হবে। বোর্ডের প্রয়োজনে সরকার যে কোনো ভূমি বিদ্যমান আইন অনুযায়ী অধিগ্রহণ করতে পারবে। সেক্ষেত্রে ভূমি মালিকদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্বলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সকল জনগোষ্ঠীর সার্বিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন তরান্বিত করতে ১৯৭৬ সালে এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড সৃষ্টি করা হয়। বিলে বোর্ডের কার্যালয়, সাধারণ পরিচালনা ও প্রশাসন, পরিচালনা বোর্ড গঠন, বোর্ডের কার্যাবলি, পরিচালনা বোর্ডের সভা, পরামর্শক কমিটি, প্রকল্প বাস্তবায়ন, তহবিল, প্রবেশের ক্ষমতা, ভূমির অধিগ্রহণ, ঋণ গ্রহণের ক্ষমতা, বাজেট, হিসাবরক্ষণ ও নিরীক্ষাসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সুনির্দিষ্ট বিধানের প্রস্তাব করা হয়। বিলে বিদ্যমান পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড অধ্যাদেশ রহিত করারও প্রস্তাব করা হয়।