parbattanews

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সাড়ে ৫ কোটি টাকার টেন্ডারের কাজ ভাগাভাগি

টেন্ডাবাজি
চৌধুরী হারুনুর রশীদ:
রাঙ্গামাটিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সাড়ে ৫ কোটি টাকার ২৩ গ্রুপের কাজ ভাগাভাগির আয়োজন চলছে। তবে চিহ্নিত সিন্ডিকেটের বাইরে সাধারণ ঠিকাদারদের কেউ এই টেন্ডারে অংশ নেয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন সাধারণ ঠিকাদাররা। তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি যাচাই করতে সরাসরি বোর্ডের প্রধান কার্যালয় গিয়ে অভিযোগের সত্যতা বেরিয়ে এসেছে।

জানা যায়, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে গত ২৯ ডিসেম্বর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহাবুদ্দীনের স্বাক্ষরে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকার ২৩ গ্রুপ কাজের টেন্ডার (নং-১(৩), ২০১৪-১৫ আহবান করে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড। টেন্ডার বিক্রির শেষদিন ছিল মঙ্গলবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত। জমা দেয়ার শেষদিন আজ (বুধবার) বিকাল সাড়ে ১২টা পর্যন্ত। দরপত্র খোলা হবে আজ সাড়ে ৩টায়।

আজ (বুধবার) টেন্ডারের ভাগবাটোয়ার কাজগুলোর সাজানো দরপত্রের জমার শেষদিন। ক্ষমতাসীনদের ছত্রচ্ছায়ায় গড়ে ওঠা চিহ্নিত টেন্ডারবাজদের একটি চক্র কাজগুলো ভাগাভাগি করে নিয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য গোপন সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ায় বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহাবুদ্দীন চৌধুরীসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এদিকে উন্নয়ন বোর্ডের রাঙ্গামাটির প্রধান কার্যালয় চত্ত্বরে টেন্ডার ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে সাধারণ ঠিকাদারদের মাঝে ক্ষোভ ও উত্তেজনা দেখা দেয়। গতকাল (মঙ্গলবার) প্রায় সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত বোর্ডের কার্যালয়ে এ নিয়ে হট্টগোল বিরাজ করে। টেন্ডারের দরপত্র কিনতে যাওয়া সাধারণ ঠিকাদাররা সিডিউল নিতে গেলে তাদেরকে বাধা দেয়া হয় বলে অভিযোগ করেছেন মো. ইফতেখারুল আলম, মঈন উদ্দিন সেলিম, সালাম ও যুবলীগের রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার সভাপতি মো. আবু মুসাসহ অনেক ঠিকাদার।

মেসার্স ফ্রেম মেকার স্বত্ত্বাধিকারী প্রথম শ্রেণীর ঠিকাদার মো. ইফতেখারুল আলম অভিযোগ করে জানান, দুপুরের দিকে দরপত্র কিনতে গেলে তাকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয় বোর্ডের প্রকৌশল শাখার স্টাফরা।
যুবলীগের রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার সভাপতি ও ঠিকাদার মো. আবু মুসা বলেন, দরপত্র কেনার জন্য সারাদিন উন্নয়ন বোর্ডে অবস্থান করেন তিনি। কিন্তু বিকাল ৫টার মধ্যে সিডিউল বিক্রির শর্ত থাকলেও কাউকে কোনো সিডিউল দেয়া হয়নি। ওই সময় সিউিউল বিক্রি এড়াতে নির্বাহী প্রকৌশলী শাহাবুদ্দীন নিজেকে আড়ালে রাখতে অফিস ছেড়ে গোপন স্থানে পালিয়ে থাকেন। অফিসে অবস্থানকালে তার কাছে সিডিউল কিনতে চাইলে নির্বাহী প্রকৌশলী ধমকে বলেন ২০ লাখ টাকায় পোস্টিং নিয়ে এখনও ওই টাকা উঠাতে পারিনি। সিডিউল দেয়া সম্ভব নয়। যারা টাকা দিয়েছে তাদেরকে কাজ দিতে হয়েছে। এছাড়াও উপস্থিত সাধারণ ঠিকাদার সবাই অভিযোগ করেছেন টেন্ডারের কাজগুলো ভাগাভাগি করায় অন্য ঠিকাদারদার কারও কাছে সিডিউল বিক্রি করা হয়নি। গতকাল সময় পার করে দিয়ে লোক দেখানো ভাগাভাগি টেন্ডারের দরপত্র আজ কেবল নামেই জমা দেখানোর আয়োজন সম্পন্ন করা হয়েছে। অন্যদিকে সাধারণ ঠিকাদারদের কাছে সিডিউল বিক্রি না করায় সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে বলে জানান ঠিকাদাররা।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে বিকালে নির্বাহী প্রকৌশলীর অফিসে গেলে তখন অফিসে তালা দেয়া ছিল। মুঠো ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

পরে উন্নয়ন বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান তরুণ কান্তি ঘোষের সঙ্গে তার অফিসে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সিডিউল বিক্রির সময়সীমা ছিল বিকাল ৫টা পর্যন্ত। এখন সময় পার হয়েছে। সিডিউল বিক্রির সময় চলে গেছে। সময়ের মধ্যে কেউ এমন অভিযোগ করেনি। নির্ধারিত সময়ে অভিযোগ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া যেত। এখন সম্ভব নয়। অথচ ঠিকাদাররা সিডিউল কেনার জন্য সারাদিন উন্নয়ন বোর্ডে অবস্থান করেও সকাল থেকে কোনো সিডিউল দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন উপস্থিত সাধারণ ঠিকাদাররা। কয়েকজন ঠিকাদার অভিযোগ করেন, তাদেরকে সময় পার হওয়ার পরেই ভাইস চেয়ারম্যান তরুণ কান্তি ঘোষ তার অফিসে দেখা করতে বলে জানিয়ে দিয়েছেন সময় চলে গেছে। কোনো সিডিউল বিক্রি করা যাবে না।

Exit mobile version