পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের একপেশে রিপোর্ট

 

ডেস্ক নিউজ:
পাহাড়ে শান্তি ফেরাতে ১৫ বছর আগে চুক্তি হওয়ার পর সরকারের পক্ষ থেকে বারবার তা বাস্তবায়নের আশ্বাস দেয়া হলেও প্রতিশ্রুতির সামান্যই পূরণ হয়েছে বলে মনে করে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। তবে আগামী নির্বাচনের আগে এসব প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য সরকারের হাতে এখনো সুযোগ রয়েছে বলে আন্তর্জাতিক সংস্থাটি মনে করে।

বুধবার অ্যামনেস্টির একপেশে এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শান্তিচুক্তির আলোকে পাহাড়ে ভূমি বিরোধ নিরসনে এক দশকেরও বেশি সময় আগে ভূমি কমিশন গঠন করা হলেও এখনো তারা উল্লেখযোগ্য কোনো কাজ দেখাতে পারেনি।

“পাহাড়ি সংস্কৃতি অনুযায়ী জমি কেবল তাদের জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম নয়, বিষয়টি তাদের সমগ্র জীবন প্রণালীর সঙ্গে জড়িত।” অ্যামনেস্টি বলছে, বাংলাদেশ সরকার ভূমির ওপর পাহাড়িদের অধিকার ফিরিয়ে দিতে ব্যর্থ হওয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রামে ক্ষদ্র নৃগোষ্ঠীর হাজার হাজার মানুষ ভূমিহীন হয়ে পড়েছে। ফলে সেখানে পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে সংঘাত হয়ে উঠেছে অনিবার্য। ভূমির মালিকানা নিয়ে পাহাড়ে অহরহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

এতে বলা হয়,  ১৯৯৭ সালে সই হওয়া পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকার তাদের ভূমির অধিকার ফিরিয়ে দেবে বলে এখনো অপেক্ষায় আছে পাহাড়িরা। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের আদিবাসী অধিকার বিষয়ক গবেষক অ্যান্ড্রু এরুয়েটি বলেন, “ভূমি বিরোধ নিয়ে সংঘাতের কারণে পাহাড়ে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারের অবিলম্বে এ বিষয়ে নজর দেয়া উচিৎ।”

পাহাড়িদের কাছ থেকে দখলে নেয়া ভূমির অধিকার তাদের ফিরিয়ে দেয়া না হলে অথবা যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেয়া না হলে তা আন্তর্জাতিক আইনের লংঘন হবে বলেও মনে করেন এই মানবাধিকার কর্মী।

স্বায়ত্ত্বশাসন ও ভূমির অধিকারের দাবিতে পাহাড়িদের স্বশস্ত্র সংগ্রামের অবসান ঘটিয়ে আওয়ামী লীগের গত সরকার আমলে পার্বত্য শান্তিচুক্তি সই হয়। এর আগে স্বশস্ত্র পাহাড়িদের দমনে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে প্রাণ হারান অনেকে। সে সময়ে অন্যত্র আশ্রয় নেয়া ৯০ হাজার পরিবার এখনো নিজেদের ঘরে ফিরে আসতে পারেননি বলে অ্যামনেস্টি জানায়। তবে এই রিপোর্টে পাহাড়ে বসবাসকারী বাঙালীদের বিশেষ করে গুচ্ছগ্রামের বাঙালীদের দুঃখ দুর্দশার কথা, তাদের মানবেতর জীবনযাপন, তাদের বন্দোবস্ত দেয়া খাস জমি ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে কিছুই বলেনি।

পাহাড়ে নিরাপত্তা বাহিনীর ওই অভিযানের আগে ও পরে হাজার হাজার বাঙালি সেখানে বসতি গাড়ে। তারা দখলে নেয় পাহাড়ি জমি। সে সময় ‘জমির লোভ দেখিয়ে’ সমতলের অনেক ভূমিহীনকে পাহাড়ে বসতি গাড়তে উহসাহিত করা হয় বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়।

“ভূমির মালিকানা নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তিতে শান্তিচুক্তির আলোকে একটি কমিশন গঠন করা হলেও তারা একটি বিতর্কেরও সুরাহা করতে পারেনি। আর এই ভূমি নিয়েই বাঙালিদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পাহাড়িরা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ ধরনের সংঘাতে কয়েকশ’ পাহাড়ি পরিবার গৃহহীন হয়েছে।”

এর একটি দৃষ্টান্তও তুলে ধরেছে অ্যামনেস্টি। ২০১১ সালে ফেব্রুয়ারিতে লংগদুতে পাহাড়িদের হাতে এক বাঙালির খুন হওয়ার অভিযোগ উঠলে অন্তত ২৩টি বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়। শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় পাহাড়ি নারীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়।

এক নারী বলেন, “আমাদের এখন জুম চাষ করার কোনো জমি নেই। আবার ফল ও জ্বালানি সংগ্রহেরও কোনো বন নেই। সেনাবাহিনীর আনাগোনায় জীবন খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। অল্প একটু দূরে যেতেও খুব ভয় লাগে। আমাদের বাড়িও নিরাপদ নেই। পরিবারের জন্য খাবার যোগাড়, ছেলে-মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়ে সব সময় দুশ্চিন্তায় থাকি।”

প্রতিবেদনে বলা হয়, শান্তিচুক্তি অনুযায়ী পাহাড় থেকে সব অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহারের কথা থাকলেও এখনো তা হয়নি। পাহাড়ের ভূমির দখল নিতে সেনাবাহিনী বাঙালিদের সমর্থন যোগায় বলেও অনেকে মনে করেন।

এ পরিস্থিতিতে ‘আদিবাসী’ জনগণের অধিকার নিয়ে জাতিসংঘ সনদ, আইএলও কনভেশনসহ আন্তর্জাতিক সব আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে পাহাড়িদের ভূমির অধিকার ফিরিয়ে দিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। এছাড়া আগামী জাতীয় নির্বাচনে দলীয় ইশতিহারে পাহাড়িদের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিতেও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন