পার্বত্য চাঁদাবাজিতে নতুন মাত্রা: বিশ্ব আদিবাসী দিবস

Ali Akbor
 
পার্বত্য নিউজ রিপোর্ট:
পার্বত্যাঞ্চলে চাঁদাবাজির মহোৎসবে এবার নতুন মাত্রা নিয়ে এসেছে ‘বিশ্ব আদিবাসী দিবস’ উৎযাপন।চাঁদাবাজির ভয়াবহ বিস্তারে এমনিতেই পাহাড়ের সর্বস্তরের মানুষ দিশেহারা। আসন্ন ঈদে সেই চাঁদাবাজি এমনিতেই ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। তার উপর গোদের উপর বিষ ফোঁড়ার মতো আবির্ভূত হয়েছে তথাকথিত আদিবাসী দিবসের চাঁদাবাজি।সম্প্রতি মাটিরাঙ্গা উপজেলার বড়নালসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধি ও ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারন কৃষকদের কাছ থেকেও চাঁদা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।ঈদ, পূঁজা, বড়দিনের মতো চাঁদাবাজির আরেকটি উপলক্ষ পাওয়ায় পাহাড়ের সন্ত্রাসীরা একে হাতছাড়া করতে নারাজ। তাই যে সকল উপজাতীয় সশস্ত্র সংগঠন আদিবাসী কনসেপ্টে বিশ্বাস করে না তারাও চাঁদাবাজির সুযোগ কাজে লাগাতে আদিবাসী ইস্যু নিয়ে এবার মাঠে নেমেছে বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে।

আদিবাসী দিবস পালনে সরকারী নিষেধাজ্ঞা থাকলেও প্রতি বছর ৯ আগষ্ট আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস পালন করে থাকে পাহাড়ের চাকমা-ত্রিপুরা থেকে শুরু করে বিভিন্ন উপজাতীয় গোষ্ঠির কিছু চিহ্নিত ব্যাক্তিবর্গ। এবছর ৯  আগষ্ট পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর হওয়ায় তারা কর্মসুচী এগিয়ে এনে ৩ আগষ্ট আদিবাসী দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর সে লক্ষকে সামনে রেখে ইতিমধ্যে বিভিন্ন স্থানে চাঁদা আদায় করছে বলে সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে।

আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উদযাপন কমিটির আহবায়ক শ্রী সুধাকর ত্রিপুরার স্বাক্ষরিত রশিদ মারফতে ব্যক্তি বিশেষে দুই হাজার টাকা থেকে দশ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
‘সংবিধান পূনসংশোধন পুর্বক আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি এবং জাতিসংঘের ইকোসকে অনুমোদিত আদিবাসী বিষয়ক সিদ্বান্ত সমুহের বাস্তবায়ন চাই’ শিরোনামে চাঁদা আদায়কে তাদের চাঁদাবাজির নতুন কৌশল বলে মনে করছেন অনেকে। তাদের মতে একটি স্বাধীন দেশে সরকারীভাবে স্বীকৃত নয় এমন একটি দিবসের নামে প্রকাশ্য চাঁদাবাজি সরকার ও প্রশাসনের জন্য মারাত্বক হুমকি স্বরূপ।
 
Raju Begum

মাটিরাঙ্গা উপজেলার বড়নাল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও পাহাড়ে উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে সর্বদা স্বোচ্ছার একজন জনপ্রতিনিধি মো: আলী আকবর এর কাছ থেকে এজন্য পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা দাবী করে রশিদ পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এরকম আরো অনেকের কাছে চাঁদার পরিমান ধার্য্য করে রশিদ পাঠিয়েছে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা। শুধু রশিদ পাঠিয়েই থেমে যায়নি এসকল সন্ত্রাসী চাঁদাবাজরা। তার ফোন করে দ্রুত দাবীকৃত চাঁদা পরিশোধের জন্য হুমকি-ধমকি দিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বড়নাল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলী আকবর। তিনি অভিযোগ করে বলেন, চাঁদাবাজ সন্ত্রাসীদের গডফাদার বড় বড় রুই-কাতলারা প্রশাসনের সাথে বসে থেকে চাঁদাবাজিতে মদম দিয়ে যাচ্ছে। তাদের মদদে প্রতিটি জনপদকে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির স্বর্গরাজ্য বানানোর কাজ চলছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

Harun Miah
 
 
এদিকে বড়নাল ইউনিয়েনের মহিলা সদস্য রাজু বেগমের কাছে তিন হাজার টাকা চাঁদা দাবী করে রশিদ পাঠানো হয়েছে স্বীকার করে তার স্বামী মো: আলাউদ্দিন মেম্বার বলেন, ভাবতেই অবাক লাগে আমরা কোন দেশে আছি। তিনি বলেন, গত কয়েকদিনে তাদের অব্যাহত হুমকিতে আমরা নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছি। আমরা বছরের পর বছর ধরেইতো তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কাছে জিম্মি। কারা চাঁদা আদায় করছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কয়েকজন পাহাড়ী যুবক এ চাঁদা দাবী করে রশিদ পাঠিয়ে ফোন করেছে তাড়াতাড়ি পরিশোধের জন্য। বিষয়টি স্থানীয় বিজিবি ও পুলিশকে জানিয়েছেন বলেও তিনি এ প্রতিনিধিকে জানান।

এদিকে বার বার চেষ্টা করেও আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উদযাপন কমিটির আহবায়ক শ্রী সুধাকর ত্রিপুরার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ২১ বর্ডার গার্ড ব্যাটলিয়ন-বিজিবি‘র অপারেশন অফিসার মেজর কামরুল বলেন, চাঁদাবাজদের আটক করতে বিজিবি ও পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তা চৌকি বসিয়ে তল্লাসি চালানো হচ্ছে।

 

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন