parbattanews

পার্বত্য চুক্তির ১৬ বছর পরও এখানে সেনাশাসন চলছে- সন্তু লারমা

8ed45a0b449e0006d9c4cd2efe69d62e_XL

স্টাফ রিপোর্টার, রাঙামাটি:
পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা বলেছেন, উন্নয়নের পূর্বশর্ত গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও গণমুখী শাসনব্যবস্থা। কিন্তু বাংলাদেশে সেটা অনুপস্থিত। যে দেশের মানুষ প্রতিদিন প্রতিনিয়ত গণবিরোধী শাসনব্যবস্থার মুখোমুখি সেখানে কীভাবে মানুষের জীবনধারা উন্নয়নমুখী হতে পারে?
সন্তু লারমা বলেন, পার্বত্যাঞ্চলের মানুষ সব সময় অশান্তিতে। তারা আজও নানাভাবে অবহেলা-বঞ্চনার শিকার। এখানকার শাসনব্যবস্থার অব্যবস্থাপনা কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে এ অঞ্চলের মানুষের জীবনধারাকে। পার্বত্যাঞ্চলের উন্নয়নে দরকার গণমুখী শাসনব্যবস্থা।

সন্তু লারমা বৃহস্পতিবার বিজু উৎসব উপলক্ষে অনুষ্ঠিত পার্বত্য উদ্যোক্তা মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

সন্তু লারমা বলেন, স্বাধীনতার ৪২ বছরেও পার্বত্যাঞ্চলের বুকে শাসনব্যবস্থা সুনির্দিষ্ট হতে পারেনি। এখানে আদৌ কোনো গণমুখী ও উন্নয়নমুখী শাসনব্যবস্থা আছে কিনা সে প্রশ্ন করা হলে নিশ্চই সবাই বলবে তার কোনো কিছুই নেই। পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরের ১৬ বছর পরেও এখানে চলছে সেনাশাসন। এখানে সব কিছুতেই রয়েছে সেনা উপস্থিতি।

সন্তু লারমা বলেন, পার্বত্যাঞ্চলের অর্থনীতি এবং এখানকার মানুষের জীবনধারাকে ধংস করে দিতে বাস্তবায়ন করা হয়েছে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ উৎপাদন পরিকল্পনা। তাতে আমাদের সুন্দর জীবনধারা ধংস হয়ে গেছে।  
তিনি বলেন, ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত পার্বত্য চুক্তি অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ এবং পার্বত্য জেলা পরিষদ আইনের মধ্য দিয়ে পার্বত্যাঞ্চলে বিশেষ শাসনব্যবস্থার প্রচলন হয়। কিন্তু সেসব আইন অকার্যকর। চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারের কোনো আন্তরিকতাই নেই।

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে সন্তু লারমা বলেন, গত সংসদ নির্বাচনের আগে খাগড়াছড়ি সফরকালে সমাবেশে শেখ হাসিনা বলেছিলেন তার সরকার আবার ক্ষমত্য়া গেলে চুক্তি বাস্তবায়ন করবে। কিন্তু নৌকায় চড়তে হতে হবে। অথচ এ ধরনের রাজনীতির মন-মানসিকতা কখনও কাম্য হতে পারে না।    

বিজু উৎসব ঘিরে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং তফসিলভূক্ত ব্যাংকগুলোর সহযোগিতায় রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন পরিষদের যৌথ উদ্যোগে রাঙামাটি আউটার স্টেডিয়ামের আশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র প্রাঙ্গণে আয়োজিত ১-১০ এপ্রিল ‘দ্বিতীয় পার্বত্য উদ্যোক্তা মেলা ২০১৪’ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন চাকমা সার্কেল চিফ রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়। বিকাল ৫টায় অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন উদযাপন কমিটির সদস্যসচিব বিপ্লব চাকমা।  

রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোঃ মোস্তফা কামাল, পুলিশ সুপার আমেনা বেগম, বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম অঞ্চলের নির্বাহী পরিচালক মাসুম কামাল, ব্যাংকের ঢাকার জিএম মোঃ মাসুম পাটোয়ারি, সোনালী ব্যাংকের জিএম দিদার মোঃ আব্দুর রব, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের জিএম মোয়াজ্জেম হোসেন ভূঁইয়া, রূপালী ব্যাংকের জিএম স্বপন কুমার বড়ুয়া, উত্তরা ব্যাংকের জিএম আশরাফুজ্জামান, ইসলামী ব্যাংকের আমিরুল ইসলাম, বাংলাদেশ ব্যাংকের উর্ধতন কর্মকর্তা আবুল বশর, অগ্রণী ব্যাংকের ডিজিএম মোঃ কামরুজ্জামান প্রমুখ।

এছাড়া উদ্যোক্তা পরিষদের সমন্বয়কারী মোঃ শামীম হায়দার ও উদ্যোক্তা ধর্মেশ খীসা বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন শিখা ত্রিপুরা। মেলায় স্থানীয় এবং বাইরের প্রায় ১৫০ উদ্যোক্তা অংশ নিচ্ছেন।

এদিকে বিজু উৎসব উপলক্ষে বৃহস্পতিবার পার্বত্য উদ্যোক্তা মেলা ছাড়াও রাঙ্গামাটির ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গনে জুম এ্যাসথেটিকস কাউন্সিল (জাক) আয়োজিত ৩-৫ এপ্রিল ‘১৩তম পার্বত্য চট্টগ্রাম আদিবাসী সংস্কৃতি মেলা ২০১৪’। বিকাল সাড়ে ৫টায় অনুষ্ঠিত হয় এ মেলার উদ্বোধনী। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন চাকমা সার্কেল চিফ রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়। জাক সভাপতি অ্যাডভোকেট মিহির বরণ চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে এ মেলার উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট লেখক চিত্রমোহন চাকমা।  

Exit mobile version