পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন সংশোধন : রাঙামাটিতে পরিবর্তন আসতে পারে : বাড়ছে নেতাকর্মীদের দৌড়ঝাঁপ

rhdc

আলমগীর মানিক, রাঙামাটি:
২০০৯ সালে গত মেযাদে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে পাঁচ বছর জুড়েই আইন সংশোধনীর মাধ্যমে পার্বত্য জেলা পরিষদগুলোর পরিধি বিস্তারের গুঞ্জন শোনা গেলেও তা বাস্তবে রূপ পায় গত সোমবার। এদিকে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ আইনের পঞ্চম সংশোধনী প্রস্তাব মন্ত্রী পরিষদে নীতিগত অনুমোদনের সংবাদ প্রচারিত হওয়ার পর থেকেই  রাঙামাটিতে সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে দৌড়ঝাঁপ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন মিডিয়ায় খবরটি প্রচার হওয়ার সাথে সাথেই তিন পার্বত্য জেলার চেয়ারম্যান ও সদস্য পদে মনোনয়ন পেতে আগ্রহীরা জোরেশোরে লবিং শুরু করেছেন। তবে রাঙামাটি জেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে পরিবর্তন প্রত্যাশা করছে সরকারী দলের অধিকাংশ নেতাকর্মী। এছাড়াও  বর্তমান চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা দলের বাইরে সাধারণ মানুষের কাছেও তেমন গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টি করতে পারেনি বলে স্থানীয়দের অভিমত।

রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, জেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান নিখিল কুমারের সাথে সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী দিপঙ্কর তালুকদারের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। তাই তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন জেলা আওয়ামীলীগের এই কর্ণধারের সাথে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটানোর জন্য।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া ৫ জানুয়ারীর সংসদ নির্বাচন ও পরবর্তী কয়েকটি উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী সমর্থক প্রার্থীরা হেরে যাওয়ায় এর দায়ভার অনেকটাই জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নিখিলের উপর চাপছে বলে দাবি করছে দলেও অধিকাংশ নেতাকর্মী। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, জেলা পরিষদের কাছ থেকে যেসকল নেতাকর্মী লক্ষ-কোটি টাকা ডোনেশন নিয়েছেন ও বিভিন্ন ধরনের ঠিকাদারী কাজ করে লাখপতি কোটিপতি হয়েছেন- দুই নির্বাচনে তাদের তেমন কোনো উপস্থিতি ছিলো না। এরা নিখিল কুমার চাকমার ঘনিষ্ঠ অনুসারী। আর একারনেই জেলা ক্রমাগতভাবে আওয়ামী লীগের পরাজয় হচ্ছে। তাই সরকারদলীয় অধিকাংশ নেতাকর্মী বর্তমান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা’র বিরোধীতা করে দাবি করছে নতুন নেতৃত্ব। এক্ষেত্রে পরিবর্তন হলে বর্তমান পরিষদের সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতা অংশি প্র“ চৌধুরী বরকল উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সন্তোষ কুমার চাকমা, আওয়ামী লীগ নেতা অংশু চাইন চৌধুরী, সাবেক চেয়ারম্যান চিংকিউ রোয়াজা এবং কেরল চাকমা’র নাম আলোচনায় আছে।

সদস্যপদে রাঙামাটি জেলা পরিষদের সদস্য পদে পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. সোলায়মান, জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি আকবর হোসেন চৌধুরী, আওয়ামী লীগ নেতা আবু সৈয়দ, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মৃণাল তঞ্চঙ্গ্যা, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নব কুমার চাকমা’র নাম শোনা যাচ্ছে। জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মিন্টু মারমা, বরকল আওয়ামী লীগের নেতা মেনন রাখাইন, যুবলীগ নেতা স্মৃতি বিকাশ ত্রিপুরা এবং জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি জমিরউদ্দিন উল্লেখযোগ্য।

এদিকে বর্তমান সংসদে রাঙামাটি থেকে আঞ্চলিক দল জেএসএস প্রতিনিধিত্ব করায় নতুন জেলা পরিষদে তাদের অন্তর্ভূক্তি নিশ্চিত করতে সব ধরণের চেষ্টা চালানো হবে বলে স্থানীয় একটি সূত্র জানিয়েছে। রাঙামাটির আসন্ন জেলা পরিষদে জেএসএস প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার জন্য আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান সন্তুলারমা ও সংসদ সদস্য উষাতন তালুকদারের মাধ্যমে তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাবে বলেও জানা গেছে।

একই সাথে পরিবর্তনের আভাস শোনা যাচ্ছে, বর্তমান ১ চেয়ারম্যান ও ৪ সদস্য বিশিষ্ট অন্তবর্তীকালীন পরিষদেরও। প্রস্তাবিত সংশোধনীতে আইনটির ১৬ (ক)-এর ২ নং উপধারাটি পাল্টে ১ জনকে চেয়ারম্যান করে সদস্য সংখ্যা ৪ জনের স্থলে ১০ জন করা হয়েছে। এই সংশোধনীতে পরিষদের বর্তমান মনোনীত ‘অন্তবর্তীকালীন’ অবস্থাটা পাল্টে নির্বাচন ছাড়াই পূর্ণাঙ্গ অবয়ব দেয়ার ওপর জোর দেয়া হয়েছে।

তবে এ সংশোধনীতে সদস্য সংখ্যা বাড়লেও বাদ পড়েছে নারী প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি। অনির্ধারিত থেকে যাচ্ছে চেয়ারম্যান-সদস্যদের পদমর্যাদা নির্ধারণের বিষয়টিও।তবে দীর্ঘদিন ধরে অনির্বাচিত মনোনীত ব্যক্তি ও দলনির্ভর পরিষদ ব্যবস্থাপনার ফলে বর্তমানে পরিষদগুলো অনেকটাই জনবিচ্ছিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার অভাবে পরিষদগুলোতে ভর করেছে ভয়াবহতম দলীয়-স্বজনকরণ এবং অনিয়ম ও দুর্নীতি।

উল্লেখ্য, এর আগে ১৯৯২, ১৯৯৭, ১৯৯৮ ও ২০০০ সালে আইনটি মোট চারবার সংশোধন করা হয়। তবে আইনটিতে সবচেয়ে বড়ো আকারের মৌলিক পরিবর্তন আনা হয় ১৯৯৮ সালের সংশোধনীতে।
আড়াই দশক আগে ১৯৮৯ সালের ২৬ জুন প্রথম নির্বাচন হয়েছিল তিন পার্বত্য জেলার জন্য গঠিত তিনটি পৃথক ‘স্থানীয় সরকার পরিষদ’র। একই বছরের ৬ জুন প্রণীত এক বিশেষ আইনের আওতায় গঠিত সেই পরিষদে ১ জন চেয়ারম্যান এবং সম্প্রদায়ভিত্তিক বিভাজনের মাধ্যমে নির্ধারিত সদস্য সংখ্যা ছিল ৩০ জন। পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘১৯৯৮ সালের আগে করা তিনটি সংশোধনীতে মূলতঃ পরিষদের নির্বাচনী মেয়াদকাল এবং হস্তান্তরিত বিভাগের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়।

কিন্তু ১৯৯৮ সালের সংশোধনীতে ৬৪নং ধারায় ভূমি’র হস্তান্তর ও ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত যাবতীয় কর্তৃত্ব, ৪২নং ধারার ৪নং উপধারায় উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ-বাস্তবায়নের কর্তৃত্ব, ৩৮ ধারার ৩নং উপধারায় বাজেট প্রণয়নে সরকারের অনুমোদন ছাড়া একতরফা স্বাধীনতা এবং ৫১ ও ৫২নং ধারায় পরিষদের বিষয়াবলীর ওপর নিয়ন্ত্রণ ও তদন্ত সংক্রান্ত সরকারের কর্তৃত্বকে বিলুপ্ত করা হয়েছিল।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন