পার্বত্য তিন জেলাকে ৭টি জেলায় বিভক্ত করে বিভাগ করার দাবি

fec-image

পাহাড়ের উন্নয়ন ও স্থায়ী শান্তি আনায়নে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের আওতায় এনে পার্বত্য তিন জেলাকে ৭টি জেলায় বিভক্ত করে পার্বত্য চট্টগ্রামকে নতুন বিভাগ করার ঘোষণার দাবি জানানো হয়েছে।

রবিবার (২৭ ডিসেম্বর) রাঙ্গামাটির লংগদুতে “পাহাড়ের সংবাদপত্র ও প্রকাশনা সমাচার” বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বক্তারা এ দাবি জানান।

অনুষ্ঠানে পাহাড়ের চারণ সাংবাদিক রাঙ্গামাটির দৈনিক গিরিদর্পণ সম্পাদক একেএম মকছুদ আহমেদের সাংবাদিকতার ৫০ বছর পূর্তিতে উপজেলা প্রশাসন ও লংগদু প্রেসক্লাবের সংবর্ধনা প্রদান করে।

রবিবার সকাল ১১টায় লংগদু উপজেলা পরিষদের মিলনায়তন লংগদু প্রেসক্লাবের উদ্যোগে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে লংগদু উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাইনুল আবেদীন এর সভাপতিত্বে লংগদু প্রেসক্লাবের অন্যতম সদস্য সাংবাদিক আরমান খান এর সঞ্চালনায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, লংগদু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারেক সরকার।

অনুষ্ঠনে বিশেষ অতিথি হিসেবে অন্যান্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন, লংগদু থানার অফিসার ইনচার্জ আরিফুল ইসলাম আমিন, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম ঝান্টু চৌধুরী, রাঙ্গামাটি প্রেসক্লাবের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন রুবেল, সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক রাঙামাটির সম্পাদক আনোয়ার আল হক, লংগদু সরকারি মডেল কলেজ এর অধ্যক্ষ মো. শহীদুল্লাহ, লংগদু প্রেসক্লাব এর সভাপতি এখলাস মিঞা খান, সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক মুছা, আটাড়কছড়া ইউপি চেয়ারম্যান মঙ্গল কান্তি চাকমা, গুলশাখালী ইউপি চেয়ারম্যান আবু নাছির, গাঁথাছড়া বায়তুশ শরফের সুপার মাওলানা ফোরকান আহমেদ, স্বাগত বক্তব্য রাখেন লংগদু প্রেসক্লাবের সভাপতি এখলাস মিঞ খান।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে, লংগদু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারেক সরকার বলেন, অনেক বছর আগে থেকে আমি এই চারণ সাংবাদিক দৈনিক গিরিদর্পণ সম্পাদক একেএম মকছুদ আহমেদ এর কথা শুনে আসছি। যিনি পার্বত্যঞ্চলে প্রতিকূল পরিবেশে সাংবাদিকতার গোড়া পত্তন সূচনা করেন। তিনি বলেন, সংঘাত বিক্ষুব্ধ পার্বত্যঞ্চলে শান্তি প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে পাহাড়ের উন্নয়নে মকছুদ আহমেদকে সাংবাদিকতায় অসামান্য ভূমিকা রেখেছেন যা ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ এই পথ চলায় তিনি সত্য প্রকাশ হতে কখনো নিজেকে বিরত রাখেন নাই। তিনি ছিলেন এই অঞ্চলের সাংবাদিকতার বাতি ঘর। তাঁর আদর্শকে ধারণ করে এই অঞ্চলে অনেকে সাংবাদিকতায় যুক্ত হয়েছেন। তার অবদান কখনোই ভুলার মত নয়।

সভাপতির বক্তব্যে লংগদু উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাইনুল আবেদীন বলেন, একজন গুণী ব্যক্তিকে সম্মান করা মানে নিজেরাই সম্মানিত হওয়া। লংগদ প্রেসক্লাব আজকের দিনে উনাকে সংবর্ধনা দিয়েই যে মহৎ কাজটি করেছেন, ভবিষ্যৎতেও অনেকে এই পেশাতে এগিয়ে আসবেন।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সংবর্ধিত গুণীজন চারণ সাংবাদিক দৈনিক গিরিদর্পনের সম্পাদক এ কে এম মকছুদ আহমেদ বলেন, আজ হতে ৫০ বছর আগে যখন আমি এই অঞ্চলে সাংবাদিকতা শুরু করি তখন আজকের মতো তথ্য প্রযুক্তি উন্নত ছিলো না। ছিলো না কোন ইন্টারনেট সংযোগ। মাইলের পর মাইল হেঁটে আমি সংবাদ সংগ্রহ করেছি, যাহা সত্য তাহা প্রকাশ করেছি নিঃসংকোচে। কখনোই কারো বিরুদ্ধে অপসাংবাদিকতায় লিপ্ত হয় নাই। সত্য এবং সাহসিকতার সাথে এই পেশায় কাজ করে গিয়েছি। কারোর কাছে মাথা নত করি নাই। জীবনে অনেক ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে আজ ৫০ বছরে উপনিত হয়েছি।

সংবর্ধনা সভায় রাঙ্গামাটি প্রেসক্লাব সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন রুবেল বলেন, আমরা যারা সাংবাদিকতার পেশায় যুক্ত হয়েছি সকলেই মকছুদ ভাই এর আদর্শকে অনুসরণ করেই কাজ করে চলছি। তিনি সত্য প্রকাশে কখনোও নিজেকে বিরত রাখেন নাই। বস্তুনিষ্ট সংবাদ পরিবেশ করাই ছিল তার কাজ।

লংগদু উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন, বর্তমান প্রজন্মের অনেক সাংবাদিক এ কে এম মকছুদ আহমেদের হাতে তৈরি করা। তিনি পার্বত্য এই অঞ্চলের সাংবাদিকতার বাতি ঘর। তাই পাহাড়ে সাংবাদিকতার জগতে তিনি ইতিহাস হয়ে থাকবেন সবার কাছে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আটারকছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মঙ্গল কান্তি চাকমা বলেন, সাংবাদিক মকছুদ আহমেদ এর মতো সংবাদকর্মী আছে বলে এদেশে এখনো বস্তনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশিত হয়। মানুষ পড়তে ও জানতে পারছে সঠিক সংবাদ।

রাঙ্গামাটি প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক দৈনিক রাঙ্গামাটির সম্পাদক আনোয়ারুল হক বলেন, এ কে এম মকছুদ আহমেদ আমাদের আদর্শ। তাঁর আদর্শকে ধারণ করে আজ আমরা সাংবাদিকতার মহান পেশায় যুক্ত হয়েছি।

৩নং গুলশাখালী ইউপি চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন বক্তব্যে বলেন, মকছুদ আহমেদ একজন আর্দশবান শিক্ষক ছিলেন পরবর্তীতে তিনি সাংবাদিকতার মহান পেশায় যুক্ত হন। তাই তিনি কখনোও এই পেশাকে কলুষিত করেন নাই।

অনুষ্ঠানে লংগদু থানার ওসি আরিফুল ইসলাম বলেন, এ কে এম মকছুদ আহমেদ এর মতো সাংবাদিক জন্ম গ্রহণ করেছে বলে যুগে যুগে মানুষ এই পেশাকে ভালোবেসেছেন। আমি এ কেএম মকছুদ আহমেদ এর নাম শুনেছি, আজ তাঁর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসে নিজেকে ধন্য মনে করছি। তিনি আরো বলেন, সমাজের তৃতীয় দর্পন হলো সাংবাদিক।

এসময় সভায় লংগদু সরকারি মডেল ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক খন্দকার হাসান আলী, রাবেতা মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল করিম, তরুণ সমাজসেবক এবিএস মামুন উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়াও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে রাঙামাটি, লংগদু উপজেলার বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি এবং নানা শ্রেণী পেশার লোকজন উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান শেষার্ধে লেখক মাহমুদুল হাসান সোহাগ এর সম্পাদনায় “পাহাড়ের সংবাদপত্র ও প্রকাশনা সমাচার” বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন সভায় উপস্থিত অতিথিগণ। পরে মকছুদ আহমেদকে লংগদু প্রেসক্লাব ও বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ হতে ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন